ব্রেক্সিট হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ) সদস্যপদ থেকে যুক্তরাজ্যের(বৃটেন) আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের চুক্তি।
ব্রেক্সিট আইন বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) ইইউ পার্লামেন্টে ঐতিহাসিক ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
বিবিসির খবর অনুসারে,ইইউ পার্লামেন্টের ৭৫১ প্রতিনিধির মধ্যে ৬২১ জন ব্রেক্সিটের পক্ষে এবং ৪৯ জন বিপক্ষে ভোট দেন। বাকিরা ভোটদানে বিরত ছিলেন।
এর আগে ব্রাসেলসের ইইউ পার্লামেন্টের ৭৫১ প্রতিনিধি ব্রেক্সিটবিষয়ক বিতর্কে অবতীর্ণ হন। ইইউর সদস্য হিসেবে মঙ্গলবার শেষ সাধারণ অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল মিটিংয়ে অংশ নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
সেখানে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অনুমোদিত এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্বাক্ষরিত ব্রেক্সিট আইন উপস্থাপন করা হয়।ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা ভোটে সেটি অনুমোদন করায় জানুয়ারির ৩১ তারিখ গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টায় (বাংলাদেশ সময় পর দিন ভোর ৫টা) ইইউ থেকে বিদায় নেবে যুক্তরাজ্য।
আজকের দিনটি সেই দিন, যেদিন ইতিহাস গড়ে ৪৭ বছর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্যপদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য (বৃটেন)। গণভোটের পর তিনবছর সীমাহীন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে পূর্ব নির্ধারিত ৩১ জানুয়ারি শুক্রবারই কার্যকর হচ্ছে ব্রেক্সিট। ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ইইউ সদস্য হয় যুক্তরাজ্য।
ব্রেক্সিট কার্যকর হলে পরিবর্তন হবে না যেসব বিষয়সমূহ:
- ভ্রমণ অন্তর্বর্তী সময়ে (১১ মাস) যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ভ্রমণের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের লাইনেই দাঁড়াতে পারবেন।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেট পাসপোর্ট
- ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য বীমা কার্ড এ কার্ড দিয়েই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এর সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাস ও কাজ অন্তর্বর্তী সময়ে (১১ মাস) চলাচলের স্বাধীনতা অব্যাহত থাকবে। তাই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ইইউভুক্ত দেশে বসবাস ও কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। ইইউভুক্ত অন্য দেশের নাগরিকরাও একই সুবিধা পাবে যুক্তরাজ্যে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশে বসবাসরত যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের পেনশন সুবিধা পাবেন।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে অন্তর্বর্তী সময়েও (১১ মাস) অবদান রেখে যাবে যুক্তরাজ্য। তবে এর পর আর এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
- যুক্তরাজ্যের সাথে ইইউর বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে। আপাতত নতুন কোনো চার্জ আরোপ করা হবে না।
যদিও চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ইইউ-ব্রিটেনের বাণিজ্যিক ও অন্যান্য সম্পর্ক প্রায় একই থাকবে। তবে এই সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো প্রশাসনিক কাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না ব্রিটেন।
এদিকে, শুক্রবার ঢোকার আগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন,”এই দিনটি ব্রিটেনের ‘নতুন যুগের উদয়’ এবং ৪৭ বছর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত ব্রিটেন। আর এটা ব্রিটেনের জন্য শেষ নয়, বরং শুরু।”

এছাড়াও তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি ‘একটি সত্যিকারের পুনরূদ্ধার এবং পরিবর্তনের মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন। ব্রিটেনের উত্তরণের সময় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশ্যা প্রকাশ করছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ব্রেক্সিট বিলে স্বাক্ষর করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এছাড়া কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই বিলটি পাস হয় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে। মূলত ব্রেক্সিট বিল বা ‘ইইউ উইথড্রোয়াল বিলে’ রানির স্বাক্ষর হওয়ার পরেই আইনটি কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে বরিস জনসন পড়ে গিয়েছিলেন ব্রেক্সিট বির্তকে।গণভোটে বারবার পরাজয়ের একপর্যায়ে তিনি বাধ্য হোন আগাম সাধারণ নির্বাচন ডাকতে। আর তাতেই ব্রেক্সিটে আলোর মুখ পেয়েছেন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন।
ব্রেক্সিটের কারণে যেসব পরিবর্তন আসবে:
- ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারাবেন যুক্তরাজ্যের এমপিরা কারণ যুক্তরাজ্য একই সাথে ইইউ’র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোও ছেড়ে যাচ্ছে।
- তবে যেহেতু যুক্তরাজ্য অন্তর্বর্তী সময়ে ইইউ’র আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে সেহেতু ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস আইনি সমস্যাগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দেয়া অব্যাহত রাখবে।
- ভবিষ্যতে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিল সামিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অংশ নিতে চান তাহলে তার জন্য দরকার হবে বিশেষ আমন্ত্রণ।
- ব্রিটিশ মন্ত্রীরাও এখন থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মিত বৈঠকগুলোতে অংশ নিতে পারবেন না।
- যুক্তরাজ্য তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি বা এসব কেনার জন্য নতুন নিয়ম ঠিক করতে বিশ্বের যে কোনো দেশের সাথে আলোচনা শুরু করতে পারবে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকার সময়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা করতে পারতো না।এখন ব্রেক্সিট সমর্থকরা বলছেন নিজের বাণিজ্য নীতি ঠিক করার স্বাধীনতা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
- যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টের রং পরিবর্তন হবে।নীল রংয়ের পাসপোর্ট আবার ফিরে আসবে ত্রিশ বছর পর।তবে বর্তমান যে পাসপোর্ট আছে সেটিও বৈধ থাকবে।
- পাসপোর্ট পরিবর্তন হবে ব্রিটিশ নাগরিকদের
- ‘ব্রেক্সিট কয়েন’ প্রায় ত্রিশ লাখ বিশেষ কয়েন আসবে যেখানে ৩১শে জানুয়ারি এবং লেখা থাকবে ‘পিস, প্রসপারিটি অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উইথ অল নেশনস’।