আজ ২০ জুন, বিশ্ব বাবা দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রবিবার এই বাবা দিবস পালিত হয়ে থাকে।
“বাবা” নামটি খুব ছোট কিন্তু বাস্তবতায় তার বিশালতা সম্পর্কে ধারণা করা খুব কঠিন। সন্তানকে সামান্য ভালো রাখতে নিজের তাজা প্রাণটুকুও যিনি দিতে প্রস্তুত থাকেন তার নাম বাবা।আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। প্রতিটি বাবার মাধ্যমেই তার সন্তানের জীবনের শুরু যার ঋণ হয়তো পরিমাপ করার ক্ষমতা সন্তানদের হয়তো প্রকৃতি দেয়নি। সেই বাবাদের সম্মান জানাতে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বাবা দিবস।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিক থেকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই মূলত বাবা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই,আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার, স্নোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটি পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, পুরোহিত তখন মাদের নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। ডড-এর মনে হয় তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার,ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তারপর তিনি সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে পরের বছর অর্থ্যাৎ ১৯ শে জুন ১৯১০ সালের থেকে বাবা দিবস পালন শুরু করেন।
সন্তানের সাথে বাবার যে নিবিড় সম্পর্ক তা আমাদের সমাজে কতটুকু বিদ্যমান? বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক সন্তান তাদের পিতাকে ভাবে দুর্জন।পিতার বুকফাটা তীব্র যন্ত্রনার আর্তনাদ না শোনার মত সন্তারাও এই সমাজে আছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পিতা মাতা সন্তানদের মানুষ করেন তারাই কিনা বড় হয়ে পিতা মাতাকে ছুঁড়ে ফেলেন। নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশায়,তখন অভাগা সেই পিতা মাতাদের দুঃখের আর কোন শেষ থাকে না। বিশেষ করে করোনা মহামারির এই সময়ে আরও উপায়ান্তর হয়ে পড়েছেন তারা।
খবরে প্রায়ই দেখা যায় বৃদ্ধ মা/বাবাকে রাস্তায় ফেলে চলে গেলেন সন্তান। এইতো কদিন আগের ঘটনা, ফেনীর সোনাগাজীতে সাহাব উদ্দিন নামের এক ব্যাক্তি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার স্ত্রী, পুত্র,মেয়ে সবাই মিলে তাকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখেন। তিনি যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারেন সেজন্য বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে রাখেন। মৃত্যুর আগে সেই ভদ্রলোক অনেক ডাকাডাকি করলেও কেউ দরজা খুলে দেন নি এমনকি তাকে খাবার পর্যন্ত দেয়া হয় নি। শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোকটি মারা গেলেন, মারা যাবার পর পরিবারের কেউ তাকে শেষ দেখা দেখে দাফন টুকু করতেও কেউ আসে নি। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাকে দাফন করেন।
নানা কারণে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে সৃষ্টি হচ্ছে ঝগড়া। এ কারণেই ঝামেলা এড়াতে বয়স্ক বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হয়।কিন্তু সেখানে তাদের দিনগুলো কত কষ্টে কাটে সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়াটাও অনেকে প্রয়োজন মনে করেন না। আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধও এগুলো সমর্থন করে না। এগুলো এড়াতে সমাজের সিনিয়র সিটিজেনদের অধিকার রক্ষায় সরকারি তৎপরতা বাড়াতে হবে। সমাজের একজন প্রবীণও যেন অবহেলা অনাদরে জীবন যাপন না করে সেটি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। পরিশেষে করোনা মহামারিকালে নতুন এক মনুষ্যত্ববোধের সূর্য উদয় হবে এটিই সকলের প্রত্যাশা।
বাবা মানে নির্ভরতার প্রতীক
বাবা মানে এক সাগর ভালবাসা
বাবা মানে ঘাম ঝরা টাকার নিঃশেষ
বাবা মানে সন্তানই যেন তার অবশেষ
পৃথিবীর সব বাবার প্রতি রইল পরম শ্রদ্ধাচিত্ত সালাম