আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, এই বছরে ক্রীড়াঙ্গনে কোন ঘটনা আপনাকে সবচেয়ে বেশি খুশিতে ভাসিয়েছে কিংবা আবেগে উদ্বেলিত করেছে?
– “অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা”, হ্যা, আপনার ভাবনায়, মন ও মননে এই উত্তরটিই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
জাতি হিসেবে আমরা সীমাবদ্ধময় জাতি, কিন্তু এই ক্রিকেটটাই পুরো জাতিকে একত্রিত করে, পুরো বিশ্বে মাথা উঁচু করে রাখার যোগান দেয়, সবুজ মাঠে লাল সবুজের পতাকা সগৌরবে ওড়ার শক্তি দেয়। চায়ের দোকান থেকে বাসার টেলিভিশন- সকলের নজরবন্দী করে এই ক্রিকেট। ক্রিকেট আমাদের হাঁসায়, ক্রিকেট আমাদের কাদায়। আজকে এই ক্রিকেটের একটু পুরনো গল্প শোনা যাক। চলুন ঘুরে আসি প্রায় তিন যুগ আগের ইতিহাসে।
ঊনিশশো একাত্তর সালে স্বাধীনতার পর “বাংলাদেশ” নামের কোনো ক্রিকেট দলের মাঠে নামতে ছ’বছর সময় লেগেছিলো। বাংলাদেশ প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ১৯৭৭ সালের ৭ই জানুয়ারি।
তিনদিনের একটি ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ডের একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচটি মূলত আয়োজিত হয় বাংলাদেশের সামর্থ্য যাচাইয়ের জন্য। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণের যোগ্য কি না সেটা পরীক্ষা করে দেখতেই এই খেলা।
ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিলো লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী একটি ক্লাব মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব বা এমসিসি।
শফিকুল হক হীরার নেতৃত্বে তিন দিনের সে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র করেছিলো বাংলাদেশ।
এরপর বাংলাদেশ ১৯৭৭ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্য পদ লাভ করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ পদচারণ আরো অনেক পর। প্রায় ৯ বছর পর, ৩১ শে মার্চ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দল প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহন করে। যদিও এর আগে ১৯৭৯ সালের আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করেছিল তবে সবগুলো খেলা ছিল সহকারী সদস্যদের বিপক্ষে।

৩১ শে মার্চ ১৯৮৬ সালে শ্রীলংকার টাইরোনি ফার্নান্দো স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১ম ম্যাচে ৯৪ রানে অলআউট হয় এবং ৭ উইকেটে পরাজয় বরণ করে। পরবর্তী ম্যাচে শ্রীলংকার বিরুদ্ধেও ৭ উইকেটের পরাজয় বরণ করে।
এরপর প্রায় ৩৪ বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গণে প্রায় ৫৯১ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ। ৫৯১ টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের ১১৯ টি টেস্ট, ৩৭৬ টি ওয়ানডে ও ৯৬ টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে ১৪ টি জয় টেস্টে, ১২৮ টি জয় ওয়ানডেতে, এবং ৩২ টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে জয়লাভ করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে ওয়ানডেতে ১৩৩ জন, টেস্টে ৯৬ জন, এবং টি টুয়েন্টিতে ৬৮ জন খেলোয়াড় জাতীয় দলে অংশগ্রহণ করেন।
১ম আন্তর্জাতিক ম্যাচের একাদশ:
গাজী আশরাফ, গোলাম নওশের, গোলাম ফারুক, হাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীর শাহ, মিনহাজুল আবেদীন, নুরুল আবেদীন, রাফিকুল আলম, রাকিবুল হাসান, সামিউর রহমান, শাহেদুর রহমান।
আজ ৩১ মার্চ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে বাংলাদেশের অভিষেকের জন্মদিন। সময় কত দ্রুতই না যায়। বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৪ বছরের মধ্যবয়স্কা। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরার হাত ধরে শুরু হওয়া ক্রিকেট, আকরাম খানদের হাত দিয়ে ৯৭ এ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, সাবের হোসেনের সাংগঠনিক দক্ষতায় টেস্ট স্ট্যাটাস, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, হাবিবুল বাশার, দুর্জয়দের হাত দিয়ে টেস্টে পদার্পণ, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিকদের হাত দিয়ে প্রথম ট্রফি জয়(ত্রিদেশীয়)- এগুলা সবই আমাদের একেকটা অর্জন, একেকটা অনুপ্রেরণার গল্প, এগিয়ে চলার পাথেয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাক দুর্দান্ত প্রতাপে। বিশ্বজয় একদিন হবেই।