ইসলাম একমাত্র পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা, গণতান্ত্রিক ও বাক স্বাধীনতার কথা বলে। সমাজের মেথর থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সবার অধিকার কেবলমাত্র ইসলাম-ই সুনিশ্চিত করেছে,এটা ইতিহাসে প্রমাণিত। ইসলাম শুধুমাত্র শাসকের অধিকার নিশ্চিত করেছে তা কিন্তু নয়। শাসকের অধিকারের পাশাপাশি জনগণের ন্যায্য অধিকারও প্রতিষ্ঠিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
এমন যদি হতো,
আমার দেশের শাসক হতো
উমরেরই মতো,
হতো আবু বকরের মতো।
প্রজার দুখে তাদের চোখে আসতো নারে ঘুম,
দেশের ভেতর পড়ে যেত শান্তি সুখের ধুম।
রাসূল (সা.) দেশের জনগণের মধ্যে একবিন্দু বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদর্শন না করার জন্য দায়িত্বে থাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়ে রাখতেন। তিনি নিজে কোন তোষামোদ বা প্রশংসা পছন্দ করতেন না। এমন একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো আল্লাহর রাসূল (সা.) সৃষ্টি করেছিলেন, যেখানে দেশের জনগণ রাষ্ট্রীয় প্রধানের সমালোচনা করতে বিন্দুমাত্র পরোয়া করতে হতো না।
বিচারের নামে কেউ অবিচার বা শাসনের নামে কেউ দুঃশাসন করেছে তা প্রমাণিত হলে তিনি কঠোরভাবে তার বিচার করতেন। বিচার পদ্ধতির ন্যায়নিষ্ঠতা নিশ্চিত করার প্রয়াসে বাদী বিবাদী উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে বিচারককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আদেশ দিয়েছেন।
বর্তমান পৃথিবীর প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে যে, আইন কাঠামোর অস্বচ্ছতা, আইনের সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ক্ষমতাসীনদের জন্য বিচারের রায় হয় স্বস্তির। অন্যদিকে ক্ষমতার বাহিরে থাকা ব্যক্তি বা দলগুলোর জন্য হয় অস্বস্তির। যার ফলে বিশ্বব্যাপী ইনসাফ ও ন্যায়বিচার ভুলন্ঠিত। অথচ রাসূল (সা.) সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার সংরক্ষণে এক আপোষহীন যোদ্ধা ছিলেন।
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় আজ আইনের বাণী নিভৃতে কাঁদে। এই অশান্ত পৃথিবীর ন্যায়বিচারের দায়িত্বে যারাই নিয়োজিত রয়েছেন তারা যদি মুহাম্মদ (সা.) এর ন্যায়বিচার থেকে শিক্ষা নিতে পারতেন তাহলে বিচারালয়ে অবিচার হতো না।
মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। নবীদের পর সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা সর্বাধিক। সাহাবীদের মধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ছিলেন অন্যতম।
সত্য ও ন্যায়ের পতাকে উড্ডীন করার জন্য আবু বকর (রা.) এর ত্যাগের ঘটনা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। তার জ্ঞান,মেধা ও বুদ্ধির জন্য সবাই তাকে শ্রদ্ধা করত। মানুষের দুঃখ, কষ্ট দূরীভূত করার জন্য আত্মনিবেদিত ছিলেন। তিনি সবসময়ই আল্লাহ তায়ালার রাসূল (সা.)কে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। আবু বকর (রা.) দানশীলতা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন-আমি প্রতিটি মানুষের ইহসান পরিশোধ করেছি। কিন্তু আবু বকরের ইহসানসমূহ এমন যে,তা পরিশোধ করতে আমি অক্ষম। তার প্রতিদান আল্লাহ দিবেন। তার অর্থ আমার উপকারে যেমন এসেছে, অন্য কারো অর্থ তেমন আসেনি।
হযরত আবু বকর (রা.) যদিও মুসলমানদের খলিফা ছিলেন। তবু তাঁর জীবন খুবই সাদামাটা ছিল। খলিফা হওয়া সত্ত্বেও তিনি মদীনার অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে দেশের জনগণের অবস্থা জানতেন এবং তাদের ব্যক্তিগত কাজও সময় সময় নিজ হাতে করে দিতেন।তিনি একমাত্র খলিফা যিনি মৃত্যুর সময় সরকারি কোষাগারে তার ভাতার অর্থ পরিমাণ পরিশোধ করেছিলেন।
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) আমিরুল মুমিনিন ১৩ হিজরি মোতাবেক ২৪ আগস্ট ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
হযরত উমর (রা.) রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাকে ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে পরিচালিত করেছিলেন। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে আইনের শাসন নেই বা থাকলেও দুর্বল সে রাষ্ট্র যতই শক্তিশালী হোক তা বেশিদিন টিকে থাকে না। অল্পদিনেই তাসের ঘরের মতো ভেস্তে যায়। হযরত উমর (রা.) রাষ্ট্রের সব দুর্নীতি আর অন্যায় অবিচার রুখতে প্রতিষ্ঠা করেন আইনের শাসন। গঠন করেন পুলিশ ও সেনাবাহিনী। আদালত ও জেলহাজত নির্মাণ করেন। বাদী বিবাদী ন্যায়বিচার পায় কিনা তা দেখার জন্য তিনি আদালতে উপস্থিত হতেন। সুন্দর আইন ব্যবস্থাপনার কারনে দেশের জনগণ কোনো অন্যায় করার সাহস পেত না।
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর ন্যায় বিচার বিশ্ব ইতিহাসে স্মরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। আইনের চোখে সবাই সমান তা হযরত ওমর (রা.) কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে পরিণত করেছিলেন। বিচারের ক্ষেত্রে উঁচু আর নীচু জাতের কোনো ব্যবধান করতেন না। শাস্তি প্রদানে কলিজার টুকরা সন্তানকেও রেহাই দেননি। মদপানের শাস্তিস্বরূপ ৮০টি বেত্রাঘাত করেন ছেলেকে। বেত্রাঘাতের ফলে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কয়েক দিনের মাথায় ইন্তেকাল করে। বর্তমান পৃথিবীতে সুবিচারের এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কি খুঁজে পাওয়া যাবে?
গরীব দুঃখী ভুখা নাহি পাওয়া যেত যদি আমার শাসক হত উমরের ই মতো,
হতো আবু বকরের মতো।
জনগনের খোজ খোবর নিতো রাত দুপুরে,
ঘুরে ঘুরে দেখত কি কেউ আছে অনাহারে,
আমার দেশের মা বোনেরা লাঞ্ছিত হতো না,
আমার দেশের কৃষক শ্রমিক বঞ্ছিত হতো না,
ধনী গরীব ভালোবাসার জীবন ফিরে পেতো,যদি আমার শাসক হতো উমরের ই মতো,
হতো আবু বকরের মতো।
আরো পড়ুন,
বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উম্মতের জন্য দোয়া
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইসলামে চিকিৎসক এর মর্যাদা ও কর্তব্য