দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণার পর অবশেষে ১৪ জানুয়ারি ২০২০ থেকে উইন্ডোজ ৭ এর সমর্থন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে মাইক্রোসফট। যার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, এখন থেকে উইন্ডোজ ৭ এর কোনধরনের অপারেটিং সম্পর্কিত সমস্যা দেখা গেলে অথবা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তার দায়ভার মাইক্রোসফট নিবে না।
মাইক্রোসফট তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, হালনাগাদ সফটওয়্যার ও নিরাপত্তা প্রোগ্রাম হালনাগাদ না থাকলে উইন্ডোজ ৭ মেশিনে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এখন থেকে থেকে নতুন প্রযুক্তির দিকে বেশি মনোযোগী হবে।
সফটওয়্যার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ড মাইক্রো ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিক ফার্গুসন বলেন, আক্রান্ত পিসি ব্যবহার করলে দ্রুত আক্রমণ হতে পারে।

ক্যাসপারস্কি ল্যাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেভিড এম বলেছেন, ব্যবহারকারীদের দ্রুত মাইক্রোসফট সমর্থন করে এমন অপারেটিং সিস্টেমে চলে যাওয়া উচিত।
২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে,প্রায় ১১ বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল উইন্ডোজ ৭। এর জন্ম হয়েছিল মূলত উইন্ডোজ ভিস্তা অপারেটিং সিস্টেম এর ভুলগুলোর সমাধান করে। তবে উইন্ডোজ ৭ শুধু এদের সামাধানই দেয় নি বরং পুরো টেকনোলজির দুনিয়াকে করেছে বিমোহিত। এর নতুন টাস্কবার, অ্যারো উইন্ডোজ ম্যানেজমেন্ট, ফাইল লাইব্রেরি এবং আরও অনেক ফিচার একে জনপ্রিয়তার উর্ধ্বে নিয়ে গিয়েছিল। বাজারে এর চাহিদা এত ছিল যে, শুধু উইন্ডোজ ৭ এর মার্কেট শেয়ার অতিক্রম করতেই উইন্ডোজ ১০ এর প্রায় ৪ বছর লেগেছে! নেটমার্কেটশেয়ার এর ডাটা মতে, এখনও ১০ মিলিয়নেরও বেশি পিসি উইন্ডোজ ৭ দ্বারা অপারেট হচ্ছে যা মোট পিসি ব্যবহারকারীর প্রায় ২৬%। স্ট্যাটকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি চার মেশিনের অন্তত একটি এখনো উইন্ডোজ ৭-এ চলছে।
হ্যাকাররা উইন্ডোজ ৭ এর সফটওয়্যার ত্রুটি ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। তাই উইন্ডোজ ৭ থেকে যাঁরা ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে চুপচাপ বসে থাকলে কম্পিউটার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে। মালওয়ার এবং ভাইরাস আক্রমণের আশঙ্কা দিন দিন বেড়ে যাবে। তবে এভাবেও কম্পিউটার চালানো যাবে। শুধু মাইক্রোসফটের সফটওয়্যারগুলোর হালনাগাদ পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া অন্য যেকোনো সফটওয়্যার বা তৃতীয় পক্ষের কোনো অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে।
১৫ জানুয়ারি ২০২০ এ উইন্ডোজ ৭ এর সমর্থন বন্ধের ব্যাপারে ব্যবহারকারীদের পিসিতে একটি নির্দেশ পৌছাবে মাইক্রোসফট থেকে । যদিও প্রতিষ্ঠানটি উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারীদের পিসিতে উইন্ডোজ ১০ হালনাগাদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিচ্ছে, এর মার্কেট শেয়ার ১০% এ কমিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠানটির হয়তো আরও ১ থেকে ২ বছর লেগে যাবে। কেননা,সফটওয়্যার জায়ান্ট গুগল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত উইন্ডোজ ৭ এ গুগল ক্রোমের সেবা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে যা মাইক্রোসফটের কাজকে আরও কঠিন করে ফেলেছে।
তবে ব্যবসায় ও শিক্ষাক্ষেত্রে উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারীরা বাড়তি হালনাগাদ সুবিধা পাবে । তবে সেজন্য চড়া মূল্য গুনতে হতে পারে। কেননা উইন্ডোজ ৭ ইন্টারপ্রাইজের বাড়তি হালনাগাদের মূল্য প্রতি মেশিনে ধরা হরেছে ২৫ মার্কিন ডলার । আবার এই মূল্য ২০২১ সালে দ্বিগুন এবং ২০২০ সালে চারগুন বৃদ্ধি পাবে। উইন্ডোজ ৭ প্রো ভার্সন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক মূল্যই ধরা হয়েছে প্রতি মেশিনে ৫০ মার্কিন ডলার যা ২০২১ সালে ১০০ এবং ২০২০ সালে ২০০ মার্কিন ডলারে পৌছাবে। সুতরাং, এটি ব্যবসায়ী ও শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য যে খুব একটা সুবিধার হবে না তা বলাই যায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পুরোনো সংস্করণের উইন্ডোজও ব্যবহার করা যাবে। তবে সর্বাধিক নিরাপত্তার জন্য ভালো হলো, নতুন সংস্করণে হালনাগাদ করে নেওয়া।
নতুন সংস্করণে হালনাগাদ:
বর্তমানে প্রায় ৮০ কোটি যন্ত্রে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহৃত হচ্ছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে এই সংস্করণটি গত বছরের শুরুর দিকে উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমকে ছাড়িয়েছে।
উইন্ডোজ ৭ ও ৮.১ ব্যবহারকারীদের বিনা মূল্যে উইন্ডোজ ১০-এ হালনাগাদ করার সুযোগ দিয়েছিল মাইক্রোসফট। সে সুযোগ বেশ আগেই শেষ হয়েছে। তবে অনেকে জানিয়েছেন, সময় পার হলেও এখনো বিনা মূল্যে উইন্ডোজ ৭ বা ৮.১ অপারেটিং সিস্টেম থেকে উইন্ডোজ ১০-এ হালনাগাদ করে নেওয়া যাচ্ছে।
কাজটি করার জন্য উইন্ডোজ ইনস্টলেশন টুল নামিয়ে ইনস্টল করে নিন (ঠিকানা: bit. ly/2 FksJuI)। সেখানে ‘আপগ্রেড দিজ পিসি’ অপশন পাওয়া যাবে। তবে অবশ্যই উইন্ডোজ ৭ বা ৮.১-এর বৈধ লাইসেন্স থাকতে হবে। প্রক্রিয়াটি শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় ফাইল অন্য কোথাও সংরক্ষণ (ব্যাকআপ) করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।