টানা সপ্তমবারের মতো কোপা ডেল রের ফাইনালে ওঠা হলো না বার্সেলোনার। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের কাছে অন্তিম মুহুর্তের গোলে খেয়ে কোপার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে লিওনেল মেসিদের। এর আগে আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে বার্নাব্যুতে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিয়েছে সোসিয়েদাদ।
১৯৫৫ সালের পর প্রথমবারের মতো কোপা ডেল রে থেকে একই দিনে বাদ পড়েছে রিয়াল-বার্সা। আর ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো এই দুই দলকে ছাড়াই হবে কোপার ফাইনাল। এক লেগের কোপার ডেল রে আয়োজনের প্রথম মৌসুমেই স্পেনের সবচেয়ে বড় দুইদলকে পেতে হলো একইরকম স্বাদ।
বিলবাওয়ের মাঠে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ইনাকি উইলিয়ামস হেডে গোল করে জয় নিশ্চিত করেছেন দলের। শেষদিকে গোলের সামনে বল পেয়েও মেসি মেরেছেন বিলবাও গোলরক্ষকের পায়ে।
এর আগে আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে বার্নাব্যুতে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিয়েছে সোসিয়েদাদ। ম্যাচে ৭ গোলের সঙ্গে, আরও দুইবার দুই দলের গোল বাতিল, এক লাল কার্ড- সবকিছু মিলিয়ে নিখাঁদ বিনোদন। তবে দিনশেষে সেটা রিয়াল সমর্থকদের জন্য হতাশারই। কোপা ডেল রের শিরোপা না জেতার ধারাটা রিয়ালের বাড়ল আরেকটু, সবশেষ ২০১৩-১৪ মৌসুমে এই শিরোপা জিতেছিল রিয়াল
ম্যাচের ২২ মিনিটে সেই মার্টিন ওডেগার্ড গোল করে বসেন রিয়ালের বিপক্ষে। অ্যালেক্সান্ডার আইস্যাকের বক্সের বাইরে থেকে করা শট প্রথমে একবার ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন আরিওলা। ফিরতি বলে ওডেগার্ডও শট করেন বক্সের ঠিক বাইরে থেকে। আরিওলার অবশ্য শটটা ধরাই উচিত ছিল। সোজাসুজি তার দিকে এসেছিল বল। কিন্তু সে দফায় আর পারেননি তিনি। কাগজে-কলমে এখনও রিয়ালের ফুটবলার, ২২ বছর বয়সী ওডেগার্ড তাই বার্নাব্যুতে নিজের প্রথম গোলটি পেয়ে গেলেন প্রতিপক্ষ হিসেবে।
প্রথমার্ধে বেনজেমা, রদ্রিগেজ, ভালভার্দেরা সবাই গোলে শট করেছেন। তবে একবারও কেউ টলাতে পারেননি অ্যালেক্স রেমিরোকে। সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন সার্জিও রামোস। তার হেডও অবশ্য বারপোস্টে লেগে ফেরত আসে তখন। রেফারি অফসাইড ফ্ল্যাগ উঁচিয়ে ধরলেও, জালে জড়ালে ভিএআরের কল্যাণে হয়ত গোল পেয়ে যেতে পারতেন রামোস।
বিরতির পর আর পরিকল্পনা বদলাতে সময় নেননি জিদান। রদ্রিগেজকে বসিয়ে লুকা মদ্রিচকে মাঠে নামিয়ে দেন তিনি। কিন্তু বিরতির পর ম্যাচে ফেরার বদলে উলটো ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। ৫৪ আর ৫৬ মিনিটে জোড়া গোল করে কাজটা সারেন ইসাক। প্রথমবার বক্সের ভেতর থেকে বাম পায়ের দারুণ ভলিতে গোল করেন তিনি, পরেরবার কাছের পোস্টে জোরালো শটে ছিন্ন ভিন্ন করে দেন আরিওলার প্রতিরোধ। রিয়াল মাদ্রিদ ০, ৩ সোসিয়েদাদ।
৩ মিনিট পর মার্সেলো এক গোল শোধ করে অবশ্য লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু আরও একবার সেই ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রিয়ালের নড়বড়ে রক্ষণ। দশ মিনিট পর সেই সুযোগে আরও একবার তিন গোলের ব্যবধান উদ্ধার করে সোসিয়েদাদ। এবার ডানদিক থেকে আসা ক্রসে বক্সের ভেতর থেকে ডান পায়ের ফিনিশে গোল করেন মিকেল মেরিনো। জিদানের রিয়ালও প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিযোগিতায় হজম করে চার গোল!
৪৯ মিনিটে একবার গোল বাতিল হয়েছিল সোসিয়েদাদের। তখনও গোল করেছিলেন ইসাক। ভিএআরে এর পর ৭৯ মিনিটে একই ভাগ্য বরণ করলেন ভিনিসিয়াস। অবশ্য মিনিট দুই পরেই রিয়াল মাদ্রিদ দ্বিতীয় গোলটিও পেয়ে গিয়েছিল। দুই ব্রাজিলিয়ান মিলে পথ দেখিয়েছিলেন তখন ঘরের দলকে। ভিনিসিয়াসের ক্রস থেকে গোল রদ্রিগো ব্যবধান কমিয়ে আনেন আরেকটু।
নাচো যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে গোল করে বসলে চাপ আরও বাড়ে সোসিয়েদাদের ওপর। সেই চাপ এমনই প্রবল ছিল যে ষষ্ঠ মিনিটে আন্দোনি গরোসাবেল দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। রেফারি শুরুতে যোগ করা সময় ৫ মিনিট দিলেও তাই খেলা গড়াল আরও বেশিক্ষণ। গরোসাবেলের অবশ্য এর পর আর আক্ষেপ থাকার কথা নয়। লাল কার্ড পেলেই বা কী, তার দল তো উঠে গেছে সেমিফাইনালে!