জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
-কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী।
শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা
সবাই আমরা সমান বুঝি
কচি কাঁচাগুলি ডাঁটো করে তুলি
বাঁচিবার তরে সমান যুঝি।
সমাজের প্রত্যেক মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য রয়েছে খাদ্যের চাহিদা।কিন্তু দারিদ্র জন্য সমাজের সুবিধাবঞ্চিত,অসহায় মানুষরা নিজেদের খাবার জোগাড় করতে পারে না।যার ফলে ক্ষুধার তীব্র জ্বালা সহ্য করতে হয় তাদের।সে সকল সুবিধাবঞ্চিত,অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।ফাউন্ডেশনের কয়েকটি উদ্যোগের একটি হলো ‘এক টাকায় আহার’।১৫ মে ২০১৬ থেকে শুরু হয় ‘এক টাকায় আহার’ কর্মসূচি।
সুবিধাবঞ্চিত শিশু, ভিক্ষুক এবং গৃহহীন ব্যক্তিদের পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়া চালু হয় মাত্র এক টাকার বিনিময়ে।
এক বেলার এই খাবার যেন অসহায় মানুষগুলোকে ভিক্ষাবৃত্তি বলে মনে না করায় সেজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে এক টাকা মূল্য রাখা হয়।অপরের দেওয়া খাবার খেতে যেন অসহায় মানুষগুলোকে ভাবতে না হয় তারা সত্যিকার অর্থেই খাবারের মূল্য পরিশোধে অপারগ।তাই এই প্রতীকি এক টাকার খুব বড় একটা মাহাত্ম্য আছে।
এই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পথশিশুদের জন্য পুষ্টিকর, সুষম ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করে চলেছে।
প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনে এক টাকায় আহারঃ
রুটিনমাফিক ঢাকাসহ আটটি জেলায় খাবার বিতরণ করা হয়। খাবারের মেন্যুতে ডিম-ভাত,সবজি-ভাত,মাছ-ভাত,খিচুড়ি সাথে মাংস-পোলাওয়ের মতো ভালো খাবারও থাকে পালাক্রমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য।
শুধু খাবার বিতরণ নয়, খাবারের মানও নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যানন্দের এক টাকায় আহার। খাবার নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত বাক্সে ঢুকানোর আগে প্রধান রাঁধুনী খাবারের গুণগত মান পরীক্ষা করেন। এরপর বিদ্যানন্দের এক টাকায় আহার দল দুপুর দেড়টার আগেই ভ্যানে কিংবা রিকশা করে খাবার নিয়ে চলে যান নির্দিষ্ট গন্তব্যে।এক টাকার বিনিময়ে যে কোন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু কিংবা বৃদ্ধ কিনে নিতে পারে এই খাবার।
শুরু থেকেই বিদ্যানন্দের এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বহু মানুষ। বাজার করা থেকে শুরু করে খাবার তৈরিসহ সব কাজেই তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এসেছেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিজীবী সহ নানা প্রতিষ্ঠানের অনেকেই এই কর্মসূচিতে নিজেদের সাধ্যানুযায়ী অংশগ্রহণ করেছেন।
এক টাকায় আহারে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাবার বিতরণ এক টাকায় আহার নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার তৈরি এক টাকায় আহারে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাবার বিতরণ এক টাকায় আহারে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ এক টাকায় আহারে তৈরিকৃত খাবার এক টাকায় আহার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আয়োজিত বুফে

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে এক টাকায় আহারঃ
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন আট হাজার মানুষকে শুকনো খাবার ও তিন হাজার মানুষের মধ্যে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ শতাধিক শিশুকে দেওয়া হচ্ছে তরল দুধ এবং শতাধিক মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা।স্বেচ্ছাসেবকরা কেউ রাত জেগে সবজি কাটেন, কেউ রাঁধেন, আবার কেউ সহকারী।
করোনা পরিস্থিতিতে সাহায্যের ফেরিওয়ালা বিদ্যানন্দ ও এক টাকায় আহারঃ
দেশজুড়ে বিরাজ করছে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি।করোনার জন্য বস্তির যে সকল পরিবার আয় সংকটে ভুগছে, তাঁদের মাঝে আহার পৌঁছে দিতে গভীর রাতে খাবার বিতরণে ছুটছে এক টাকায় আহার ও বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা।রাস্তার হকার, রিক্সাওয়ালা,দিনমজুর কিংবা বাসাবাড়িতে কাজের মহিলা; প্রায় সবাই অভাবের মুখে পড়ছে, বিপদের দিনে তাঁদের মুখে আহার তুলে দিতে নেমেছে ক্ষুধার জ্বালা বুঝার সংগঠন বিদ্যানন্দের এক টাকায় আহার।
তাছাড়াও লকডাউন থাকা অসহায় পরিবারকে খাবার দেবে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এক টাকায় আহার।লকডাউন অবস্থায় যদি কেউ খাবার সংকটে ভুগেন তবে এক টাকায় আহার – ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করলে বিদ্যানন্দ – টিম খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবে বলেছে। সীমিত তাদের অর্থ, তাই অপব্যবহার না করার অনুরোধ করেছে। শুধুমাত্র খুব দরকার হলে এবং প্রশাসন দ্বারা বাড়ী লকডাউন হলে এবং প্রশাসনের অনুমতি পেলে এক টাকার আহার খাবার প্রদান করতে পারবে বলে জানিয়েছে।
রমজান মাসে এক টাকায় আহারঃ
রমজান মাসে ‘এক টাকার ইফতারি’ ও ‘এক টাকায় সাহ্রি’ বিতরণ করা হয়। শুভেচ্ছা মূল্য এই এক টাকা নেওয়া হয় যেন গ্রহীতার মনে কোনো হীনম্মন্যতা সৃষ্টি না হয়।তারা যেন ভাবতে পারে প্রতীকী হলেও কিছু মূল্য দিয়েই খাবারটি তারা নিয়েছে। প্রতিদিন ইফতারের আগে এক টাকার এই ইফতারির বাক্স স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশু-কিশোর ও রোজাদারদের মধ্যে এক অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে।একজনের খাবারের উপযোগী এই এক টাকার ইফতারির বাক্সে থাকে ছোলা, মুড়ি, একটি করে পেঁয়াজি, বেগুনি, খেজুর, বিস্কুট ও সেদ্ধ ডিম।
প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকেই মিরপুরের আরামবাগসহ কড়াইল বস্তি, কালশী, রূপনগর, ভাসানটেক, রায়েরবাজার এলাকায় ইফতারি দিচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। মূলত শিশুদের খাবার দেওয়াই তাদের লক্ষ্য, তবে বিতরণের সময় কারও কাছে টাকা না থাকলে বা বয়স্ক কেউ এলে তাদের খালি হাতে ফেরানো হয় না।এ ছাড়া রাতের বেলায় ভাষানটেক ও হাইকোর্ট মাজার এলাকায় এক টাকায় সাহ্রিও খাওয়ানো হয়।পুরো রমজানেই এই ইফতারির আয়োজন চলে।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহীতেও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক টাকায় ইফতারি বিতরণ করা হয়ে থাকে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এক মানবতার কারিগর: বিদ্যানন্দের শুরু ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বরে৷ বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস। এখন ১৩টি ব্রাঞ্চ৷ এখানে প্রায় ২ হাজারের মতো বাচ্চা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছেন৷এর মধ্যে ৪০০ এতিম শিশু৷সেখানে দুই থেকে আড়াই হাজার শিশু এক টাকায় খাবারের সুবিধাটা পায় প্রতিদিন৷এক টাকায় আহার ছাড়াও আরো কিছু সেবামূলক উদ্যোগ আছে। ৬টি এতিমখানা, বাসন্তি প্রজেক্ট আছে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে৷ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই ক’বছরেই দেশের অন্যতম বড় স্বেচ্ছাসেবা প্রতিষ্ঠান হয়েছে এটি। মূলত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহায়তা ও দান করা টাকা থেকেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এই কার্যক্রম চলছে। এখানে কাজ করেন শত শত স্বেচ্ছাসেবক। অনাথ ও বঞ্চিত শিশুদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যানন্দ এক টাকায় আহার, রমজান মাসে এক টাকায় ইফতারির কার্যক্রম ছাড়াও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের আছে দুস্থদের জন্য এক টাকায় চিকিৎসা।বিদ্যানন্দ শিশু নিকেতন, বিদ্যানন্দ অনাথালয়। দুস্থ নারীদের জন্য কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ প্রকল্প। দরিদ্র গর্ভবতী নারীদের জন্য এক গ্লাস দুধ কার্যক্রম, শীতকালীন ও ঈদে নতুন কাপড় বিতরণ। মাসে এক দিন বড় পর্দায় বিভিন্ন শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র দেখানো হয়।
আপনার কিছু সহায়তা অনেক অসহায় শিশু,দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর সহায়কঃ

নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ে যে কেউ নিতে পারেন একজন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের খাবারের দায়িত্ব, কিংবা কিনে দিতে পারেন চাল-ডাল-আলু-তেল, স্বেচ্ছাশ্রম দিতে পারেন খাবার বিতরণে। যে কোন সাহায্য-সহযোগিতার বিষয়ে এক টাকা আহারে ফেসবুক পেইজে ইনবক্সে এসএমএস মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে ।
যারা বিদ্যানন্দ ও এক টাকায় আহারে সুবিধাবঞ্চিত শিশু,অসহায় বৃদ্ধ,দুঃস্থদের সহায়তায় এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অনুদান দিতে চাচ্ছেন, নিম্নে প্রদত্ত অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করে সাহায্য-সহযোগিতা বা অনুদান পাঠাতে পারেন।
- পেপল একাউন্ট – support@bidyanondo.org
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টের নাম – Bidyanondo Foundation একাউন্ট নাম্বার- 10612012479 Narayangonj Branch, Routing No: 090671186. ——————————–
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের নাম – Bidyanondo Foundation, একাউন্ট নাম্বার- 0221330016199 Nawabpur Branch, Swift: SOIVBDDH, Routing No: 195274754
- বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট: 01878116230 (counter no: 1)
- বিকাশ ব্যক্তিগত একাউন্ট: 01614174755, 01614174756, 01614174757, 01614174758
- রকেট একাউন্ট: 017141180737
- নগদ মার্চেন্ট একাউন্টঃ 01878116231 (counter no: 1)

এক টাকায় আহারে- অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/1Tk.Meal/
এক টাকায় আহারে -ওয়েবসাইটঃ https://onetakameal.org/