করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অসহায় ও দুস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে বিনামূল্যে চাল ও সবজি বিতরণ করতে চট্টগ্রামে বিনামূল্যের এক মিনিটের বাজার চালু করেছে সেনাবাহিনী।
“এক মিনিটের বাজার – থাকবো ঘরে সুস্থ বেশ, আপনি হাসলে হাসবে দেশ”, এই প্রতিপাদ্য সঙ্গে নিয়ে দারিদ্র সীমার নিচে থাকা জনগণের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষীদের নিকট হতে সরাসরি সবজি ক্রয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে সাহায্য করা যাবে। একই সাথে বিনামূল্যে কর্মহীন এবং হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে চাল ও মৌসুমী সবজি বিতরণের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
প্রথমদিনই মাত্র ৬০ মিনিটে এক হাজারের বেশি মানুষ বিনামূল্যে চালসহ নিজেদের প্রয়োজনীয় বাজার থেকে পণ্য তুলে নিলেন । চলতি মাসের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার অসহায় মানুষ এই সুবিধার আওতায় আসবে। একজন এক মিনিট সময় পেয়েছেন তার বাজার নিতে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনীর ৩৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমানের নির্দেশনায় নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে এই বাজার চালু হয়েছে।
পুরোপরি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে এক মিনিটের বাজার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাজারে ঢুকতে সবাইকে আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে জীবানুমুক্ত করা হয়েছে। এরপর প্রথম টেবিলেই রাখা ছিল মাস্ক এবং বাজারের ব্যাগ। বাকি সব টেবিলে সাজানো নানা ধরণের সবজি। অসহায় মানুষগুলো’ও নিজেদের পছন্দনীয় সবজি ভরে নিচ্ছেন ব্যাগে।
বাজারে প্রবেশের আগে তালিকায় যাদের নাম লেখা আছে, তাদের একটি টোকেন দেওয়া হয়। বাজারে ঢোকার সময় তারা সেই টোকেন দেখিয়ে পছন্দের সবজি ফ্রি নিয়ে যেতে পারেন। পর্যায়ক্রমে এই ফ্রি বাজার চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকায় যাবে। আগামী একমাস এলাকাভিত্তিক প্রতিদিন এক হাজার পরিবারকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফ্রি সবজি দেওয়া হবে।
৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনষ্ট্রাকশন ব্রিগেড মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিকী বলেন, আমরা এটা কোনো ত্রাণ কার্যক্রম করছি না, এটা একটা মডেল দাঁড় করাচ্ছি।
এ সকল সবজি সেনাসদস্যরা সরাসরি প্রান্তিক চাষীদের নিকট হতে মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করছেন। নিয়ম মেনেই একটি পরিবার এই বাজার থেকে ন্যূনতম ৯০ থেকে ১০০ টাকা সমমূল্যের চার থেকে পাঁচ দিন চলার মত সবজি সংগ্রহ করতে পারছেন। এছাড়াও প্রতিটি পরিবারকে ৫ কেজি চাল, আলু, সাবান এবং মাস্ক দেয়া হচ্ছে ।
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি চলছিল এই এক মিনিটের বাজার কার্যক্রম শুরুর। নানাভাবে যাছাই-বাছাই করে ১ হাজার জনের তালিকা তৈরি করা হয়। এভাবে চলতি মাসে আরো কয়েকটি বাজার বসাবে সেনাবাহিনীর এই ইউনিট।
এক মিনিটের নিয়মিত সবজি বাজার ছাড়াও আরো তিনটি ঈদ বাজারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের কাপড়সহ নানা উপকরণ তুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সেনাবাহিনীর ৩৪ কনষ্ট্রাকশন ব্রিগেড।
এছাড়াও হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা এই বাজার থেকে শাড়ি লুঙ্গি সেমাই-চিনি,দুধ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিতে পারছেন।
৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনষ্ট্রাকশন ব্রিগেড উপ মহাপরিচালক কর্নেল আবুল হাসনাত মোহম্মদ সায়েম বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এসব কিনে এনেছি এতে তারাও লাভবান হবে।
আঘোষিত লকডাউনের কারণে আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটা বিপর্যকর অবস্থায় ছিল এই মানুষগুলো। আর তাই বিনামূল্যে পছন্দনীয় সবজি পেয়ে তারাও উচ্ছ্বসিত। এর মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিল তুলনামূলক বেশি।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়,তারা চান নিম্নআয়ের মানুষ এই দুর্যোগময় পরিস্থিতি সাহসের সাথে মোকাবেলা করবে এবং সকলের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করবেন।