করোনায় সাধারণ জনজীবন অনেকটা থমকে থাকলেও থমকে নেই সময়। সামনেই আসতে যাচ্ছে মুসলমানদের বড় দুটি উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আযহা। আর এই পবিত্র ঈদুল আযহা নামটি শুনলেই প্রথমে আমাদের মাথায় যে চিন্তাটি আসে সেটি হলো কোরবানির পশু। এই কোরবানির পশুর হাট নিয়েই এবার যত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা।
করোনাভাইরাস সংক্রামণের ঝুঁকির কারণে এবার কোরবানির পশুর হাট বসবে কিনা সে নিয়ে দ্বিধা ছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণে ১৪ টি এখং উত্তরে ১০ টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যে সংখ্যা গত বছরের প্রায় সমান। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে কোরবানির পশুর হাট ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে।
এরইমধ্যে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট রাজশাহীর সিটি বাইপাস হাট সহ বেশ কিছু হাটে কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি অনেকটা অনূকূলে না থাকার কারণে হাটগুলো তেমন একটা জমে উঠতে পারছে না।
যেভাবে বসবে পশুর হাটঃ
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১০ টি এবং দক্ষিণ সিটিতে ১৪ টি মিলিয়ে মোট ২৪ টি পশুর হাট বসতে যাচ্ছে ঢাকায়।সারা দেশের জেলা উপজেলায়ও পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে পশুর হাটের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হবে না।
ঢাকা সিটি দক্ষিণের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানান,”কোরবানির পশুর হাটের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। চূড়ান্ত হলে সেটি অনুসরণ করেই পশুর হাট বসবে। আমাদের নিজস্ব টিম এবং মোবাইল কোর্ট থাকবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়।
ই-কমার্স সাইটগুলোয় পশু কেনাবেচাঃ
ই-ক্যাব(ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এরই মধ্যে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে অনলাইনে কাজ শুরু করেছে।একশ’রও বেশি অনলাইন হাটের ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে ক্রেতারা যাতে কোন দিক দিয়ে প্রতারণার শিকার না হন সেদিকেই নজর দিচ্ছেন সংগঠনটি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এবার আমরা অনলাইন হাটের পাশাপাশি কোরবানির পশু জবাই যেন যত্রতত্র না হয় তা ব্যাবস্থা করতে। হাট বসলে সেখানেই কসাইখানা আর অনলাইনে পশু বিক্রি করলেও তাদের মাধ্যমেই কোরবানির ব্যাবস্থা করা।
এদিকে করোনা সংকটের কারণে পশু কেনাবেচায় অনেকটা শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে হাটে আগের মত মানুষ পশু কেনাবেচায় সামিল হবেন কিনা এবং খামারিরা তাদের পশুর ন্যায্য মূল্য পাবেন কিনা সেটি নিয়েও একটি শঙ্কা থেকেই যায়।
কোরবানির পশুর হাট নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের শঙ্কাঃ
এদিকে কোরবানির হাট নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদেরা তাদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।শুক্রবার(৩জুলাই)দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হন ৩,১১৪ জন। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ। দেশে মোট করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১,৫৬,৩৯১ জন যার মধ্যে ১ লাখ শনাক্ত হয়েছেন গত জুন মাসে। গত ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হন ৮৭ দিনে, পরের ৫০ হাজার শনাক্ত হন ১৬ দিনে, আর শেষের ৫০ হাজার শনাক্ত হন মাত্র ১৪ দিনে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসমাগমে না যাওয়াই হচ্ছে করোনা থেকে বাঁচার প্রথম শর্ত সেখানে পশুর হাটে মানুষ কিভাবে নিরাপদ থাকবেন? এমনিতেই মানুষের মধ্যে হাত ধোঁয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বা মাস্ক পরার মত বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। আর গরুর হাটে কোনভাবেই করোনা প্রতিরোধের এই তিন বেসিক নিয়ম মেনে চলা সম্ভব নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এখনও আমরা যাইনি।সেখানে এমন পরিস্থিতিতে পশুর হাট না বসিয়ে সরকারকে বিকল্প পদ্ধতি ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন না করা হলে কোরবানির পশুর হাট করোনা সংক্রামণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।তিনি আরও বলেছেন, যেখানে সেখানে পশুর হাটের অনুমতি দেয়া যাবে না।
ডা.লেলিন চৌধুরী বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতিপূর্বে যে কার্যক্রমগুলো গৃহীত হয়েছে তার কোনটাই সফলভাবে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি নি। আমরা দেখেছি সর্বশেষ ঈদের ছুটিতে জনগণের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে করোনাভাইরাস কিভাবে ছড়িয়েছে।
তার মতে বিষয়টি নিয়ে আর কোন হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। যদি এবার পশুর হাট বসতে অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে। এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যে প্রয়াসগুলো আমরা নিচ্ছি তার সবটাই ব্যর্থ হবে।অন্তত এবার সরকার রাশ টেনে ধরুক।
তিনি সরকারকে বিকল্প কিছু চিন্তা করার কথা বলেছেন।” অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপে পশু বিক্রি উৎসাহিত করা এবং এবার যেভাবে রাজশাহী থেকে বিশেষ ট্রেনে সরকার আম ঢাকায় নিয়ে এসেছে, ফসল কাটার সময় সরকার স্থানান্তর করেছে ঠিক সেইরকম কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার।