জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টই কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের সাধারণ লক্ষণ হিসেবে জানা গিয়েছিল। তবে রোববার নিউইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে আরও দুটি উপসর্গ ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের। এপর্যন্ত জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও অবসন্নতা- এগুলোই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লক্ষণ বা উপসর্গ বলেই বলা হচ্ছিল। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ঘ্রাণশক্তি লোপ এবং খাবারের স্বাদ বুঝতে না পারার উপসর্গ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এমনও হচ্ছে যে অন্য কোনো লক্ষণ নেই। কিন্তু এ দুটির একটি বা উভয়টি আছে।
ফ্রান্সের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান জেরোমি সালোমন জানিয়েছেন, “কয়েক দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন উপসর্গ তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে নাকের বা নাসারন্ধ্রের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু হঠাৎ গন্ধশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত। যদিও এ উপসর্গ খুবই সীমিত রোগীর মধ্যে আছে। এ ছাড়া আরও একটি উপসর্গ হলো খাবারের স্বাদ হারিয়ে ফেলা। কারও কারও এ দুটি উপসর্গ একসঙ্গে দেখা দিচ্ছে। তবে এ উপসর্গ দুটি বেশি দেখা যাচ্ছে তরুণ রোগীদের মধ্যে।”

যুক্তরাজ্যের নাক, কান ও গলাবিষয়ক খ্যাতনামা চিকিৎসক নির্মল কুমার বলেছেন, “শরীরে করোনাভাইরাসের মূল প্রবেশপথ নাক। তরুণ অনেকে সংক্রমিত হলেও তাঁদের জ্বর বা ঠান্ডা-কাশির উপসর্গ দেখা দেয় না। কিন্তু ভাইরাসটি নাকে প্রবেশ করায় সংক্রমিত ওই তরুণেরা স্বাদ ও গন্ধশক্তি হারাতে পারেন।”
ইএনটি ইউকে বলেছে, যেসব সন্দেহভাজন রোগী আইসোলেশনে আছে, স্বাদ ও গন্ধহীনতাকে তাদের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে যোগ করা উচিত। ইএনটি ইউকে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা নতুন একটি উপসর্গ শনাক্ত করেছি। তা হলো স্বাদ বা গন্ধ হারানো। এর মানে হলো, যাদের অন্যান্য কোনো উপসর্গ নেই, কিন্তু স্বাদ বা গন্ধ পাচ্ছে না, তাদেরও করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে থাকতে হবে।’
রোববার নিউইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে কয়েকটি দেশের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়, স্বাদ-গন্ধ লোপ পাওয়াও এ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে। তারা বলছেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হলেও কিংবা তার মধ্যে অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলেও ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া এবং খাবারের স্বাদ বুঝতে না পারার লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অন্তত সাত দিনের জন্য আলাদা করে রাখতে হবে।
বিভিন্ন দেশের সহকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ব্রিটেনের একদল নাক, কান গলা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন। অন্য লক্ষণ না থাকলেও বয়স্কদের মধ্যে ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে। তাকে সাত দিনের জন্য আলাদা করে রাখতে হবে।
নতুন এ উপসর্গ নিয়ে খুব বেশি তথ্য-উপাত্ত পাওয়া না গেলেও সতর্ক হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
ব্রিটিশ রাইনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ক্লেয়ার হপকিন্স বলেন, আমরা সত্যিই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করতে চাই। কারণ এটি সংক্রমণের একটি লক্ষণ। কারও ঘ্রাণশক্তি লোপ পেলে তার উচিত স্বেচ্ছায় আলাদা থাকা। এর ফলে (ভাইরাসের) বিস্তারের গতি কমবে এবং প্রাণও বাঁচবে। যেসব রোগীর ঘ্রাণশক্তি লোপ পেয়েছে, এমন রোগীদের চিকিৎসার সময়ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটিশ চিকিৎসকদের সংগঠন ইএনটি ইউকের প্রেসিডেন্ট নির্মল কুমার। যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা বলছেন, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম নয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০০০ রোগীর ৩০ শতাংশের মধ্যেই এই উপসর্গ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন, দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৯, মৃত্যু ৪ জনের