বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসকে “সবচেয়ে বড় সংকট” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। করোনাভাইরাস এর কারণে আর্থ-সামাজিকের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে গুতেরেস বলেন, “নতুন এই করোনাভাইরাস রোগ সমাজের একদম কেন্দ্রে আঘাত করছে, অনেক প্রাণহানি ঘটানোর সাথে সাথে জীবন-জীবিকাও কেড়ে নিচ্ছে। নিকট অতীতে এরকম আর কিছুই দেখা যায়নি।”
“এই মহামারির কারণে বিশ্বে এমন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, সম্ভবত সাম্প্রতিক অতীতের কোনো ঘটনাই যার সমতুল্য নয়।” ‘আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডের ওপর করোনাভাইরাস এর সম্ভাব্য প্রভাব’ শীর্ষক জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ আশঙ্কার কথা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।
তিনি আরো বলেন, “জাতিসংঘ গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা কোভিড-১৯।” এই অবস্থায় সংক্রমণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বয়ের মাধ্যমে সকলকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ প্রধান। একই সঙ্গে, এই সংকটময় মুহূর্তে স্বল্প উন্নত দেশগুলোর সহায়তায় শিল্পোন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘ তার রিপোর্টে বলেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বে চাকরি হারাতে পারেন প্রায় ২৫ মিলিয়ন (আড়াই কোটি) মানুষ। একই সঙ্গে, বৈশ্বিক বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ কমে যাবে ৪০ শতাংশ।
অন্য এক নির্দেশনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, করোনায় গণহারে মানুষ মারা গেলে লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেয়ে কবর দেয়া উত্তম হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, মহামারীতে মারা যাওয়ার পর মানুষের শরীরে ওই এজেন্টের বেশিরভাগই দীর্ঘ সময় জীবিত থাকে না। তবে লাশের সঙ্গে সংস্পর্শ অব্যাহত রাখলে (কন্সট্যান্টলি ইন কনকাক্ট উইথ করপসেস) যক্ষ্মা বা রক্তবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত লাশের শরীর রোগ সংক্রমিত করে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডমিটারের তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬৬৯ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ৬ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪১৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯ জন (৮১ শতাংশ) সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং ৪২ হাজার ১৫১ জন (১৯ শতাংশ) রোগী মারা গেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া এই প্রাণঘাতি ভাইরাস ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।