চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক করোনাভাইরাসের (SARS-CoV-2) নমুনা সংগ্রহ করে প্রথম বারের মত চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলার করোনার জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্সিং) উন্মোচন করেছেন। গবেষণাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জীব বিজ্ঞান অনুষদ ও বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ল্যাবে সম্পন্ন হয়েছে।
পুরো গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক ও ড. এইচ. এম. আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এছাড়াও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোঃ খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, মোঃ আরিফ হোসাইন ও সজীব রুদ্র, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী শান্তা পাল, এবং বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ছাত্র মোঃ ওমর ফারুক সম্পৃক্ত ছিল।
এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের কভিড-১৯ (করোনাভাইরাস ডিজিস-১৯) এর উপর সার্বিক চিত্র তুলে ধরা, সে লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেকটি (১১টি) জেলার প্রত্যেক উপজেলা/থানা থেকে কভিড পজিটিভ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছি। তারপর, আরএনএ এর পরিমাণ (কনসেনট্রেশন) ও গুণের (কোয়ালিটি) উপর ভিওি করে ৪৬টি নমুনা জিনোম সিকোয়েনসিং এর জন্য নির্বাচন করি। যার মধ্যে ৩৩টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স ৯৯% এর উপরে উন্মোচিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ টি করোনার জিন নমুনার নকশা গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (GISAID) ডাটা বেইসে জমা দেওয়া হয়েছে (Accession no- EPI_ISL_735490, EPI_ISL_735492, EPI_ISL_735493, EPI_ISL_735494, EPI_ISL_735495, EPI_ISL_735496, EPI_ISL_735497, EPI_ISL_735498, EPI_ISL_735499, EPI_ISL_735500, EPI_ISL_735501 and EPI_ISL_735502)।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আমাদের একটি উদ্দেশ্য ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো কাজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন করা এবং এটি সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরনের লজিস্টিকস, টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যেমন অত্যাবশ্যক ছিল তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট, কেমিক্যাল এবং বিভিন্ন ধরনের কিটস এর সরবরাহ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এই বিষয়গুলোর উপর যথাযথভাবে নজর দিতে গিয়ে আমাদের কাজটি শেষ করতে প্রচুর সময় লেগেছে, যদিও প্রাথমিক ভাবে আমরা কাজটি শুরু করেছিলাম গত জুলাই মাসে এবং যা আগস্টের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিছু প্রশ্নকে সামনে রেখে আমাদের এই গবেষণা কাজ সাজানো হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো চট্টগ্রামে ভাইরাসটি সম্ভাব্য কোন পথে প্রবেশ করে থাকতে পারে এবং এর মিউটেশন সম্পর্কে জানা। প্রাথমিকভাবে করোনার ৩০টি জিনোম নকশা (সিকোয়েন্স) বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন –NCBI, USA), আমরা ধারণা পাচ্ছি যে, চট্টগ্রাম বিভাগের ভাইরাসটির সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, সৌদি আরব, তাইওয়ান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ভাইরাসের দারুন সাদৃশ্য রয়েছে। প্রত্যেক জেলার ডাটা পৃথকভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা আছে। যেমন চট্টগ্রাম জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইটালি, চেক রিপাবলিক, সৌদিআরব ও তাইওয়ান; নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ফেনী জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান; কুমিল্লা ও চাঁদপুরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চেক রিপাবলিক, ভারত ও জাপান; ব্রাক্ষনবাড়ীয়াতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদিআরব ও ভারত; কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানে যুক্তরাষ্ট্র, সিয়েরা লিওন, জার্মানি, ইটালি, তাইওয়ান ও চেক রিপাবলিক; এবং খাগড়াছড়িতে অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও তাইওয়ান এর নমুনার সাথে সাদৃশ্য বেশী লক্ষ্য করা গেছে।
গবেষকরা আরও জানান, আমাদের গবেষণায় প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে যে, সব সিকোয়েন্সের (বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনাকৃত ৩০টির) বিভিন্ন লোকেশনে সর্বমোট ১২৬টি ভিন্ন ভিন্ন মিউটেশন হয়েছে, যেমনঃ ORF1a জিনে ৪৬টি, ORF1b এ ২৮টি, ORF3a এ ১৪টি, ORF6 এ ১টি, ORF7a এ ১টি, ORF8 এ ৫টি, ORF9b এ ১টি, ORF10 এ ১টি, S এ ১৭টি, E এ ১টি, M এ ১টি এবং N এ ১০টি । এছাড়াও বিভিন্ন জিনের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় মোট ৮৬টি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হলেও অ্যামিনো এসিডে কোন পরিবর্তন হয়নি। সবগুলো মিউটেশন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৫টি মিউটেশন চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে।
পরিবর্তনগুলো হলোঃ ORF1a এ I1300F, S এ D614G, ORF1b এ P314L, N এ R203K ও G204R। উল্লেখ্য, স্পাইক প্রোটিনের (S) D614G (যা সম্প্রতি মানব দেহের প্রাইমারি কোষ/প্রাণীদেহে সংক্রমণ ও ট্রান্সমিশনকে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম বলে বিশ্ববিখ্যাত “সাইন্স” সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে; সুত্রঃ DOI: 10.1126/science.abe8499)।
গবেষক দলটির দাবি, “আমরা আশা করছি আমাদের উন্মোচনকৃত করোনার জিন নকশা; চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলায় ভাইরাসের প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল, বৈচিত্রতা ও মিউটেশন এর মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন সম্পর্কে ধারনা দিবে যেটি ভবিষ্যতে কভিড-১৯ মোকাবেলায় গুরুত্তপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।”
“আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আকতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য।”
আরও পড়ুনঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডাটাপ্যাক দিবে বাংলালিংক
অনলাইনে অংশগ্রহণমূলক পাঠদানের আহ্বান ইউজিসি’র
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে এডমিশন শিওর সাকসেস প্রোগ্রাম
আপনার মতামত দিন