গত ১ সপ্তাহের রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সর্বশেষ গত ৩ দিন যাবত দেশের সব কিছুর রেকর্ড ছাপিয়ে যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে। সর্বশেষ, গতকাল (৬ জুলাই) অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে মৃত্যু সংখ্যা যেমন ছাড়িয়েছে ১৬৩ তে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১১০০০ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের হার না হয় নাই বা বললাম। করোনার ভয়াবহতা দিনকে দিন বাড়ছেই।
এই বিষয়গুলো কি বার্তা দেয় আমাদের? দেশের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনার ক্ষেত্রে নিজের জেলা বগুড়ার পরিস্থিতিকে তুলে ধরতে পারি। বগুড়ায় রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা। করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। যেখানে সিট ৬০ টা, সেখানে ভর্তি ১৫০-২০০ জন, এছাড়াও প্রতিদিন রোগী আসছে আবার মারাও যাচ্ছে। আর সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো- করোনায় আক্রান্তদের অধিকাংশই গ্রামের মানুষজন। গড়ে ৬৫-৭০% রোগীই গ্রাম থেকে আসা।
এর কারণ কি জানেন? করোনার সর্বশেষ ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত আর এদিকে গণহারে প্রতিটা বাড়িতে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হচ্ছে সবাই। মানুষ এটাকে Seasonal Fever বলে আমলে না নেয়ার ফলে দেখা যাচ্ছে এই জ্বর-সর্দিকে নিয়ে ৪-৫ দিন অতিবাহিত করছে আর ফলস্বরূপ ফুসফুসে আক্রমণের সুযোগ পাচ্ছে করোনাভাইরাস। আর যখন তা আচ করতে পারছে তখন অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে আনার পর অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ফুসফুস সেই অক্সিজেনকে ধরে রাখতে পারছে না। যার ফলে মারা যাচ্ছে মানুষজন।
আরো পড়ুন, কোভিড: মাথাব্যথা ও সর্দি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ
এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে যদি এখনও গ্রামের মানুষজন এটাকে আমলে না নেয়। আর এভাবে চলতে থাকলে করোনার ভয়াবহতা নজিরবিহীনভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংকট দেখা দিয়েছে। এইরকম একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেদের সতর্ক হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প রাস্তা নেই। বাসায় মসলা যুক্ত গরম পানি, গরম পানি, লেবু গরম পানির সাথে শরীরে কোন রকম জ্বর প্রবাহিত হচ্ছে কিনা এই দিকটা সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি এখন ঠান্ডা যেন না লাগে এদিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।
আর জ্বর-সর্দিকে হেয়ালীপনা না করে দ্রুত হাসপাতালে আসার অনুরোধ রইল। গ্রামের মানুষজনের মধ্যে আরেকটা ভয় কাজ যে হাসপাতালে গেলেই করোনা হবে। তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা- করোনা যার হবে তার যেকোন পরিস্থিতিতেই হবে। নিজেকে সুস্থ রাখতে সবরকম সর্তকতা অবলম্বন করুন। তাই নিজে বাঁচতে বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখুন, পালস-অক্সি মিটার রাখার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের না হওয়ার চেষ্টা করুন। সাথে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ পথ্য রাখার চেষ্টা করুন।
লিখেছেন – এ এস এম জেবিন সাজ্জাদ
আরো পড়ুন,
করোনা রোগীদের জীবন বাঁচাতে সহায়ক বুয়েটের ‘অক্সিজেট’
ডেল্টা প্রতিরোধে ফাইজারের টিকা কম কার্যকর: গবেষণা
অক্সিজেন সংকটে আশার নাম ‘খুবি অক্সিজেন ব্যাংক’
সরকারিভাবে বিনামূল্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর করোনা পরীক্ষা
