এত দিন সীমানার বাইরে ছিল বিপদ। সতর্কতার ফাঁক গলে সেই বিপদ, নোভেল করোনাভাইরাস ঘরে ঢুকে পড়েছে। যা একাধিক আতঙ্কে ভোগা এই শহরের মানসিক চরিত্রই ভেঙে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মনোরোগ চিকিৎসক এবং মনোবিদেরা।
ডেঙ্গু ও কলেরায় মৃত্যুর হার বেশি হলেও তারা ‘চেনা শত্রু’। ফলে উৎকণ্ঠা থাকলেও তা জন-মনের চরিত্র বদলাতে পারেনি। কিন্তু ‘অচেনা শত্রু’ কোভিড-১৯, যার উৎস এবং বিনাশ সব কিছুতেই ধোঁয়াশা। ফলে এই অচেনা আতঙ্ক শহরবাসীর মানসিক গঠন বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সেটাই স্বাভাবিক। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মনের ওপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ। আতঙ্ক, অহেতুক রাগ বা অবসাদের লক্ষণও দেখা দিতে পারে। কিন্তু যেকোনো বিপদ মোকাবিলার সময় চাই ধৈর্য, দায়িত্বশীল আচরণ আর সাহস।
কীভাবে এই সময় আপনার প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, কেমন করে আপনি নিজের পরিবার-স্বজনদের নির্ভরতা দেবেন, সে সঙ্গে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করবেন?
এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ ( সহযোগী অধ্যাপক, চাইল্ড এডোলেসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা )
- গুজবে কান না দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান
- স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন
- ধূমপান, মদ্য পান বা নেশা এড়িয়ে চলুন
- সুষম আর নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করুন
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- বন্ধু আর স্বজনদের সঙ্গে ই-মেইল, টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন
- কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে কীভাবে, কার কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য গ্রহণ করবেন, তার একটি আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন
- তথ্যের জন্য কেবল নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ওয়েবসাইট, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞের ওপর আস্থা রাখুন
- সব সময় করোনা ভাইরাস নিয়েই পড়ে থাকবেন না
- করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য জানার পাশাপাশি অন্যান্য অনুষ্ঠানও উপভোগ করুন
- আস্থা ভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন,আত্মপ্রত্যয়ী থাকুন
- কখনওই বাচ্চাদের সামনে কোয়রান্টিনের আতঙ্কের ছবি তুলে না ধরার পরামর্শ
- এই খাবার খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না বা আরও বেশি করে জিনিস মজুত করতে হবে। এমন আলোচনা করলে ছোটদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক তৈরি হবে । এগুলো এড়িয়ে চলুন
- শিশুকে পরিবারের সঙ্গেই রাখুন এবং তাদের আলাদা করা থেকে বিরত রাখুন।শিশুদের নিয়মিত অভয় দিন।
- শিশুকে তার বয়স উপযোগী করে প্রকৃত সত্য তথ্য প্রদান করুন এবং কীভাবে সে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারবে, সেটা বুঝিয়ে বলুন।
- সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার স্বাস্থ্যবিধিগুলো শিশুকেও শেখান। শিশুদের প্রস্তুত করুন, অভিজ্ঞ করুন
কোভিড-১৯-এর চরিত্র বুঝতে কাজ করা গবেষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, মহামারির সংক্রমণ ঠেকাতে স্কুল-কলেজ বা যে কোনও জমায়েত বন্ধ করে এবং আইসোলেশন ও কোয়রান্টিন-সহ যে সব পদক্ষেপ করা হয়, প্রতিটিরই পরোক্ষ প্রভাব থাকে।
কোয়ারেন্টাইনের ইতিহাস বলছে, যখনই এই পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে, তার প্রভাব জনজীবনে পড়েছে। কারণ, চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত করা বা ঘরবন্দি থাকা, পুরোটাই আরোপিত। চেতনভাবে সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ।
ইতিহাস বলছে, ‘একক ভাবে বাঁচব’— এই মানসিকতাও বিপদকে এড়াতে পারবে না। বরং সমবেত সতর্কতা দিয়েই ‘অচেনা শত্রু’-র সংক্রমণ রোখা সম্ভব।