পৃথিবীর চলচ্চিত্র অঙ্গনে সারা জাগানো চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কথা বলতে গেলে নিঃসন্দেহে সেখানে স্থান করে নিবেন এক বাঙালি চলচ্চিত্রকার -সত্যজিৎ রায়। ২০০৪ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় ছিলেন তিনি ১৩ তম। গত ২ মে ছিল তার জন্মবার্ষিকী। জন্মের ৯৯ বছর পেরিয়ে পা দিয়েছেন তিনি শত বছরে। তাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে ভারতের করোনা কিটের নামকরণ করা হয় সত্যজিৎ রায়ের অনন্য সৃষ্টি ‘ ফেলুদা ‘র নামে।
করোনা শনাক্ত করতে আবিষ্কৃত হয়েছে পেপার বেজড করোনা কিট। দিল্লীর দ্যা কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইন্সটিটিউট অ্যান্ড ইন্ট্রিগেটিভ বায়োলজি (সিএসআইআর-আইজিআইবি) নামক একটি প্রতিষ্ঠান এই কিট নিয়ে গবেষণা করছে। নতুন এই করোনা টেস্টিং কিটটির উদ্ভাবনী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুইজন বাঙালি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী- ড.শৌভিক মাইতি এবং দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। তারাই কিটটির নামকরণ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’র নামে।
ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী যুক্ত হচ্ছেন এই লিস্টে। কিন্তু ১৩৫ কোটি মানুষের বিপরীতে এই নমুনা পরীক্ষার হার খুবই কম। যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে গবেষণাগারের অবকাঠামো ও কিট স্বল্পতা।
ভারতে এখনো করোনার পরীক্ষা চলসে পিসিআর পদ্ধতিতে। প্রচলিত এই টেস্টে খরচ পড়ে সাড়ে চার হাজার রুপি৷ সেখানে পেপার বেজড হওয়ায় ফেলুদা কিটের ব্যবহারে সে খরচ নেমে আসবে মাত্র ৫০০ রুপিতে।
নতুন আবিষ্কৃত এই টেস্টিং স্ট্রিপটি গর্ভাবস্থা পরীক্ষার স্ট্রিপের মতো।এর মাধ্যমে পরীক্ষা করার জন্য কোনও বিশেষ দক্ষতা এবং মেশিনের প্রয়োজন হবে না,যা পিসিআর পদ্ধতিতে প্রয়োজন হয়। এই স্ট্রিপটি কেবল রং পরিবর্তন করবে এবং যে কোন সাধারণ প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে ব্যবহার করা যাবে এটি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরীক্ষাটি শতভাগ নির্ভুল।
আইজিআইবির দেবজ্যোতি চক্রবর্তী জানান গত দুই বছর তারা অ্যানেমিয়ার সিকল সেলের উপর নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন।যখন কোভিড-১৯ চীনে সংক্রমণ শুরু হয়,তারা নিরীক্ষা করা শুরু করেন এই ভাইরাসটি কীভাবে মিউটেশন করে।গত দুই মাসে তারা দিনে ২০ ঘন্টা করে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন,”এখন আমরা এটা বলার পর্যায়ে এসেছি যে,খুব অল্প সময়ে করোনা পরীক্ষার পদ্ধতি আমরা আবিষ্কার করতে পেরেছি।সাধারণত এ ধরণের কিট উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীদের দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে৷ কিন্তু আমরা সেই তিন বা চার দেশের একটি যারা উদ্ভাবন করেছি৷ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস এবং স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।”
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শেখর সি মান্দে এবং ড.চক্রবর্তী জানান, তারা সিআরআইএসপিআর নামে একটি বিশেষ জিন সম্পাদনার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছেন। একে তারা কাটিং-এন্ড-জিন-এডিটিং বা সিআরআইএসপিআর-সিএসএস-৯ পদ্ধতি বলেছেন যা জিকা শনাক্তকরণেও কাজে লেগেছে। এই পদ্ধতিতে ৫-১০ মিনিটে করোনা শনাক্ত সম্ভব। প্রচলিত পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা শনাক্তের জন্য পুনরায় চুড়ান্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়,এই পদ্ধতিতে যার প্রয়োজন নেই।
ড.চক্রবর্তী আরোও বলেন, “ফেলুদা যেমন দুই মিনিটে কোন রহস্যের সমাধান দিয়ে ফেলেন এ পদ্ধতিও তেমন দ্রুত সমাধান দেবে। এই প্রযুক্তিটির নাম দেওয়া হয়েছে “FnCas9 Editor Linked Uniform Detection Assay'( FELUDA)“।
বাণিজ্যিকভাবে ফেলুদা উৎপাদনের জন্য টাটা সন্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সিএসআইআর। এই মাসের মধ্যেই ভারতজুড়ে নমুনা পরীক্ষার জন্য ফেলুদা কিট সরবরাহের আশা করছেন তারা।