প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন (চ্যাডক্স-১ এনকোভ-১৯) পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল হয়েছে। ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যম দ্যা ল্যানসেট (চ্যাডক্স-১ এনকোভ-১৯) প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ChAdOx1 nCoV-19 ভ্যাকসিন
অক্সফোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভ্যাকসিনটি প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৭৭ জনের দেহে প্রয়োগ করা হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, পরীক্ষার ৫৬ দিন পর্যন্ত ভ্যাকসিনটি নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে উপযুক্ত করে তুলতে সহায়তা করে।
একইসঙ্গে ভ্যাকসিনটি তৈরি করে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি ও শ্বেত রক্তকণিকা, যা নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু পোলার্ড লিখেছেন, অ্যান্ড্রু পোলার্ড জানিয়েছেন, ‘এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সবচেয়ে ভাল প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দলের মধ্যে, যাদের দু’টি ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাই দু’টি ডোজই কৌশলগত ভাবে বেশি কার্যকরী।’
প্রতিষেধকেটির ট্রায়ালের পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা লন্ডনের বার্কশায়ার রিসার্চ এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান ডেভিড কার্পেন্টার (David Carpenter) জানান, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মিলতে পারে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনা প্রতিষেধক (ChAdOx1 nCoV-19 বা AZD1222)।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিলের দিকে যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাসের ChAdOx1 nCoV-19 নামের প্রতিষেধকটি মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মানুষকেই এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োগের একমাস পর তাদের ৯৫ শতাংশের দেহেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি ৪ গুন বেড়ে যেতে দেখা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরবর্তী ধাপের পরীক্ষায় যুক্তরাজ্য জুড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা চলবে বলে জানা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই হাজার আর ব্রাজিলে পাঁচ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হবে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে ১০ কোটি প্রতিষেধক দ্রুত বাজারে ছাড়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে এই প্রতিষেধকটির উৎপাদনের দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ‘অ্যাস্ট্রা জেনিকা’ (AstraZeneca)।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী ড: সৌম্য স্বামীনাথন জানিয়েছেন, “এই মুহুর্তে আমাদের কাছে প্রমাণিত কোন প্রতিষেধক নেই। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এই বছরের শেষেই একজন বা দুজকে সাফল্য পেতে দেখব।”
এছাড়া, গত মাসে গ্লোবাল ফার্মাসিউটিক্যালসের ফিজার জানিয়েছিল, অক্টোবরের শেষেই করোনা প্রতিষেধক তৈরি হয়ে যাবে।
আপনার মতামত দিন