
করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই করোনা ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। তবে এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। তুলনামূলকভাবে পর্যটক, ধূমপায়ী, বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে আছে। তাই এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি।

ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

লক্ষণসমূহ :
- এ ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
- এর সঙ্গে সঙ্গে থাকে জ্বর এবং কাশি।
- অরগান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া।
- বুকে সর্দি-কফ জমা।
- নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়া।
বিজ্ঞানীরা বলছেন,” ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তার পর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।”
প্রতিরোধ:
যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই এবং এমন কোন চিকিৎসা নেই যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। তবে-
- রক্ষার একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন বার বার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরুন।
- আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মুখোশ পরবেন, আর নিজে অসুস্থ না হলেও, সংক্রমণ এড়াতে মুখোশ পরুন।
- কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলুন।
- আক্রান্ত এলাকা থেকে ফিরে থাকলে ১৪ দিন নিজেকে জনসমাগম থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ রাখুন। এর মানে, এই সময় কর্মস্থল থেকে শুরু করে অন্যান্য জনসমাবেশস্থল এড়িয়ে চলতে হবে।
- ভাইরাস আক্রান্ত অঞ্চলে জীবন্ত পশুর বাজার এড়িয়ে চলুন এবং পশুপাখিকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
- করোনা ভাইরাসের তরল উৎস হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো সম্ভব নয়। এছাড়া, মাস্ক পড়লেও চোখ খোলাই থাকে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তির দেহে চোখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানীরা আরো বলছেন, “ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে – যার ফলে এটি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।”
করোনা ভাইরাসের সূূূূত্রপাত:
মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১শে ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এর পর ১১ই জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছেন, হয়তো আরো মৃত্যু হতে পারে। তা ছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত হয় নি।
ঠিক কীভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেন নি বিশেষজ্ঞরা।তবে তারা বলছেন, “সম্ভবত কোন প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোন মানুষের দেহে ঢুকেছে, এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।”
উহান শহরে বাজারে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন: বেলুগা জাতীয় তিমি। যা করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে জ্যান্ত মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, এবং সাপ বিক্রি হতো।হয়তো এগুলোর কোন একটি থেকে এই নতুন করোনা ভাইরাস এসে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
করোনা ভাইরাসের ব্যাপকতা:
ভাইরাসটি এখন চীনের উহান শহর ছাড়াও অন্যান্য শহর এবং চীনের বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এক ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঐ ব্যক্তি উহানে গিয়েছিলেন বলেও জানানো হয়।
করোনা ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশও সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশেষ করে বিমানবন্দরগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাড়তি সর্তকতা এবং মনিটরিং স্ক্যানিং এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে তিনজন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। রোববার (৮ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
জানা গেছে, তিন করোনা রোগী শনাক্ত কারীর দুইজন পুরুষ ও একজন নারী।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, একজন ইতালী ফেরত বাংলাদেশ এর নাগরিক বাংলাদেশ এ ফেরার পর তার পরিবারের একজন সহ মোট ৩ জনের ভেতর করোনা ভাইরাস এর লক্ষণ দেখা যায় এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তারা হটলাইনে যোগাযোগ করায় তাদের থেকে প্রাপ্ত নমুনার দ্বারা তাদের দেহে করোনা ভাইরাস এর জীবাণু শনাক্ত করা হয়।