ভিয়েতনামকে বলা যায় তারা করোনা যুদ্ধে পুরোপুরি জয়ী। যেখানে বিশ্বের অন্যন্য দেশে যেখানে মৃত্যুর মিছিল চলছে সেখানে ভিয়েতনামের আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ এর আশে পাশে, এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেও মারা যায় নাই।
অন্যান্য দেশে এখনও সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে। কিন্তু ভিয়েতনাম, গোড়ার থেকেই সংক্রমণের হার যখন কম ছিল, তখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে।ইতোমধ্যেই তারা খুলতে শুরু করছে লকডাউন৷
ভিয়েতনামের এই সফলতা কীভাবে অর্জন করেছে, কি ভাবছে বিশেষজ্ঞরা!
করোনা এর বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের এই সফলতা কিন্তু একদিনেই হুট করে চলে আসে নাই। এর জন্য অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে তাদের। তাদের যেমন এর জন্য অনেক বেশি শ্রম দিতে হয়, তেমনি খরচ করতে হয় পর্যাপ্ত পরিমান অর্থ৷ শুরু থেকে তাদের কঠোর অবস্থান নানা ক্ষেত্রে বেশ নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে। তবু সামগ্রিক দিক বিবেচনায় এতে নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক ফলাফলটাই বেশি লক্ষ্যনীয়।
মূলত তাদের দূর্যোগ কালিন অবস্থার শুরু হয় জানুয়ারি মাসের শুরুতে, যখন দেশটিতে একজনেরও রোগ শনাক্ত হয়নি, তখনই ভিয়েতনাম সরকার “চরম পর্যায়ে পদক্ষেপ” নেয়া শুরু করে দেয়। কোভিড-১৯ রোগে তখন উহানে মারা গেছে মাত্র দুজন।
প্রথম থেকেই তারা এত দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করে যা তখন মনে হয়েছিল বেশি কঠোর- বেশি বাড়াবাড়ি, কিন্তু পরে দেখা গেছে সেটা সুবিবেচনার কাজই ছিল। যেটা কিনা পরবর্তীতে তাদের বিশার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
২৩ জানুয়ারি যখন প্রথম রোগী শনাক্ত হয় তখনই তারা ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনে, চীনের সাথে সীমান্ত এলাকায় পর্যবেক্ষণ কঠোর করে এবং কিছুদিনের মধ্যে সীমান্ত পথে চলাচল পুরো বন্ধ করে দেয়। সীমান্ত এবং অন্যান্য নাজুক জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাড়িয়ে দেয়।
জানুয়ারির শেষে চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে স্কুলগুলো বন্ধই ছিল। তখনই স্কুলের ছুটি মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে কারা কারা এসেছে তা খুঁজে বের করতে ব্যাপক জনশক্তি নিয়োগ হয়, প্রচুর অর্থবল ব্যবহার করা হয়।
মাসের মাঝামাঝি এসে ভিয়েতনাম দেশটিতে ঢোকা প্রত্যেক মানুষকে এবং দেশের ভেতর পজিটিভ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।
এর খরচের বেশিটাই বহন করে সরকার। যদিও কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা সেভাবে বিলাসবহুল ছিল না। ভিয়েতনামে বাড়ি একজন মহিলা অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে যান সেসময়- কারণ তিনি মনে করেছিলেন ভিয়েতনামে থাকাই বেশি নিরাপদ হবে।
মূলত ভিয়েতনামের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ যেটা ছিলো তা হলো রোগের লক্ষন নেই কিন্তু জীবানু বহন করা। ব্যাপক পরিসরে মানুষকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো এই সাফল্যের পেছনে একটা বড় কারণ। কেননা যত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে তাদের অর্ধেকের রোগের লক্ষণ ছিল না, কিন্তু তাদের শরীরে ভাইরাস ছিল।
কোয়ারেন্টিনে যাদের নেয়া হয়েছিল, তাদের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়েছিল, তারা অসুস্থ হোক বা না হোক। এদের ভেতরে যদি আটকে রাখা না হতো, এবং যদি পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে এরা বাইরে ঘুরে বেড়াতো এবং অন্যদের সংক্রমিত করতো।
এটাই তাদের করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রধান ধাপ।
তবে ভিয়েতনামের এই সাফল্য থেকে অন্য দেশগুলোর শিক্ষা নেওয়ার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অন্য দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা সেই সুযোগ আর পাবে না। এখন এসব দেশে সংক্রমণ ক্রমশই বাড়ছে এবং তা চূড়ায় পৌঁছনর পথে রয়েছে।
করোনা বিষয়ে আরো জানতে ক্লিক করুন