শ্যাডো নিউজ :
১৯৪৮ সালের কথা। বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার মঠবাড়িয়া গ্রামের সহোদর দুই ভাই দয়াল ঘোষ ও হরিপদ ঘোষ। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে মাইকের ব্যবসা শুরু করলেন। প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল আই এম অলওয়েজ রেডি, অন কল এট ইয়োর সার্ভিস। বছরখানেক পরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘কলরেডি’।
কল-রেডী বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী মাইক পরিষেবা।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে এবং পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন আন্দোলনে প্রায় সব সময় এ মাইক সার্ভিসটি ব্যবহার করা হয়েছে।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় সভা ও সমাবেশে এবং ৭ই মার্চের ভাষণ ।

বাংলার ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী। বাঙালির প্রধান প্রধান আন্দোলন-সংগ্রামের সভা-সমাবেশে ছিল এই কলরেডি মাইক কোম্পানি। কেবল বাণিজ্যিক নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে বাকিতেও ফ্রি পর্যন্ত সেবা দিয়েছে কলরেডি। বিশেষ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কলরেডি বিনেপয়সায় সেবা দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশীদার হয়েছিল।
বিশ্বখ্যাত ৭ মার্চের জনসভায়ও ছিল কলরেডি’র মাইক। বঙ্গবন্ধুর শ্বাস-প্রশ্বাসে দুলছিল কলরেডির মাইক্রোফোন, কাঁপছিল মাইকগুলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সভাসমাবেশে কলরেডির উপস্থিতি ছিল খুবই স্বাভাবিক। মওলানা ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবার জনসভা মানেই ছিল ‘কলরেডি’। বাংলাদেশের মাইক ব্যবসা জগতের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটিই ছিল শীর্ষে।

বাংলাদেশি রাজনীতিবীদ ছাড়াও বাংলাদেশে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানেও কল-রেডী ব্যবহার করা হয়েছে। যারা কল-রেডীর মাইক দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইন্দিরা গান্ধী, ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা, বিল ক্লিনটন, প্রণব মুখার্জি ও অটল বিহারী বাজপেয়ী। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অধিকাংশ সময় কল-রেডী ব্যবহার করে।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে কলরেডি’র যে মাইকগুলো ছিল, সেগুলো অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে। ওই দিন জনসভায় ব্যবহৃত মাইক্রোফোনের স্ট্যান্ডটি আজো সংরক্ষিত আছে কলরেডি’র কাছে। সেদিন যেসব অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করা হয়েছিল তার মধ্যে ৭টি অ্যামপ্লিফায়ার এখনও আছে। আছে চারটি মাইক্রোফোন। জাদুঘরে এসব সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
এখনো ঢাকায় কল-রেডির ডাক পড়ে। মাইক শব্দটি কানে এলেই সবার মনে পড়ে কল-রেডির কথা। পুরান ঢাকার ৩৬ ঋষিকেশ দাস লেনে রয়েছে কল-রেডির আদি কার্যালয়। বর্তমানে কল-রেডির মালিকসহ ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।