একটু খেয়াল করে দেখুন তো পায়ের জুতা থেকে গায়ের জ্যাকেট বা পকেটে থাকা মানিব্যাগ চামড়া নেই কোথায়? প্রতিবছর সারাবিশ্বে এক বিলিয়নেরও বেশি প্রাণী হত্যা করা হয় শুধুমাত্র চামড়া শিল্পের জন্য। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে এর প্রভাব পরিবেশের ওপর এতটাই বেশি যে পরিবেশ দূষণের দিক থেকে এই শিল্প বিশ্বে দ্বিতীয়। পণ্য তৈরিতে পশু চামড়ার এই একচেঁটিয়া আধিপত্যের দিন এখন প্রায় শেষের দিকে। মেক্সিকোর দুই যুবক এরইমধ্যে আবিস্কার করেছেন চামড়া প্রস্তুতের বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব পথ । পশু থেকে নয়, বরং ক্যাকটাস থেকে তৈরি হবে কৃত্রিম উদ্ভিজ্জ চামড়া। ফলে সব দিক থেকেই পরিবেশের দ্বিতীয় বৃহৎ দূষণকারী শিল্প পরিণত হবে পরিবেশবান্ধব শিল্পে।
সম্প্রতি পরিবেশবন্ধন এই চামড়া উত্পাদনের পদ্ধতি নিয়ে সামনে এসেছেন মেক্সিকোর দুই যুবক এড্রিয়ান লোপেজ ভেলার্দি ও মারতে কাযারেজ। প্রথম ক্যাকটাস থেকে চামড়া প্রস্তুতকারী হিসেবেই এখন বেশ জনপ্রিয় তারা। এ যেন দুই যুবকের বিশাল কোনো সমস্যা থেকে পরিত্রাণের আশায় শূন্য থেকে শুরুর গল্প। এড্রিয়ান অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতেন, আর মারতে কাজ করতেন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে। চামড়া নিয়ে কাজ করার কারণে দু’জনই জানতেন চামড়ার প্রস্তুতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে। তাই এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে থাকেন তারা। টানা ২ বছর সময় দিয়েছেন পশু চামড়ার বিকল্প খোঁজার কাজে। অবশেষে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে উত্তর খুঁজে পান তাদের আশেপাশেই জন্মানো ক্যাকটাসের পাতায়। তৈরির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ক্ষতিকর রাসায়নিকহীন, পরিবেশবান্ধব এই চামড়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডেজার্টো’।
নিজেদের তৈরি এই চামড়া সম্পর্কে তারা জানান, ডেজার্টো হলো ক্যাকটাস পাতা থেকে তৈরি এক ধরনের মসৃণ উদ্ভিজ্জ চামড়া। এটি পরিবেশবান্ধব, দীর্ঘদিন সব ধরনের পরিবেশে বিভিন্নভাবে ব্যবহারযোগ্য। এছাড়াও প্রাণী হত্যাহীন, রাসায়নিক উপকরণহীন ও পরিবেশবান্ধব একটি পণ্য এটি। এ কারণেই অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে ঘরের আসবাবপত্র, এমনকি ফ্যাশনের জগতেও ব্যবহারযোগ্য এটি।
চামড়া প্রস্তুতে ক্যাকটাস বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন এগুলো বেড়ে ওঠাতে খুব কম পানি শোষণ করে। এদিকে পুরো মেক্সিকো জুড়ে প্রচুর ক্যাকটাস পাওয়া যায়। তাছাড়া এটি ব্যবহারের পর প্রাকৃতিক উপায়েই নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে প্লাস্টিক কিংবা পশু চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সময় ব্যবহূত রাসায়নিক উপকরণের মতো ক্ষতিও করবে না এটি। এই জাতীয় উদ্ভিজ্জ চামড়ার উত্পাদন বাড়লে প্রচুর পরিমাণে ক্যাকটাস। ফলে এটি পরিবেশ থেকে বাড়তি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করাতে ভূমিকা রাখবে এটি। মোট কথা, ভবিষ্যতে একটি সবুজ বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে এটি তাদের একটি অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো আবিষ্কার।
এতে কী প্রচুর ক্যাকটাস কাটা পড়বে! উত্তর হচ্ছে, না। এই দুই উদ্যোক্তার জানান, চামড়ার প্রস্তুত শিল্পে ক্যাকটাসকে উৎস হিসেবে নিলেই যে প্রচুর গাছ কাটা পড়বে বিষয়টি তেমন না। ক্যাকটাসের ক্ষেত্রে এটা কিছুটা আমাদের চুল কাটার মতো। গাছ থেকে পাতা কেটে নিলেও সেটি আবার জন্মায় এবং বড় হয় মাস খানেকের মধ্যেই। পাতা নেওয়ার পর একে ধুয়ে, এর থেকে মণ্ড বানিয়ে তারপর একে রোদের শুকানো হয়। সব শেষে এর সঙ্গে আরেকটি অক্ষতিকর উপকরণ যোগ করে প্রস্তুত করা হয় কৃত্রিম বা উদ্ভিজ্জ চামড়া। এই চামড়া থেকে তৈরি করা যাবে ব্যাগ, জুতা, জ্যাকেট। এছাড়াও আসবাবপত্র, গাড়ির সিট কভার। পণ্য প্রস্তুতে ব্যবহূত এই চামড়ার আয়ুষ্কাল হবে ১০ বছর পর্যন্ত।
এরইমধ্যে এই চামড়া থেকে ব্যাগ, জুতা ও পোশাক প্রস্তুত শুরু করেছে ডেজার্টো।