আজ বিশ্ব বাবা দিবস। পৃথিবীতে প্রতিটি সন্তানের জন্য বাবা-মা সৃষ্টিকর্তার আর্শীবাদস্বরূপ। এই বাবা দিবসে বাবার কাছে সন্তানের না বলা মনের কথা ও অনুভূতিগুলো খোলা চিঠি মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শ্যাডো নিউজ আয়োজন করেছিল “প্রিয় বাবা” ইভেন্ট। এই ইভেন্টে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজের প্রিয় বাবাকে উৎসর্গ করে লিখেছে খোলা চিঠি । সেসকল চিঠির মধ্য থেকে নির্বাচিত একটি চিঠি নিম্নে সংযুক্ত করা হলো: ইফাদ হাসান, নেত্রকোনা থেকে তার খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন।
শ্রদ্ধেয় বাবা,
আশা করছি ভালো আছো। আজ তোমার আমার মাঝে দুইশ কিলোমিটারের ব্যবধান। আজ তুমি দূরে থেকেও মনে হয় যেন আমি তোমায় সঙ্গে নিয়েই চলছি। প্রতিমুহূর্তে তোমায় মনে পড়ে। অথচ যখন পাশে ছিলে তখন বুঝি নি তোমার গুরুত্ব।
মানুষ স্বভাবতই সময় থাকতে তার আপনজনের গুরুত্ব বুঝে না। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। বাবা, আজ তুমি আমার থেকে দূরে বলেই তোমাকে কাছে পেতে মন চাচ্ছে। অথচ যখন ছায়া হয়ে সঙ্গী ছিলে, তখন আমার মনে হতো আমি যেন তোমার গৃহ নামক কারাগারে বন্ধী আছি, কি ক্ষতি হয় আমাকে স্বাধীন পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে দেওয়ার সুযোগ দিলে?
আজ দুবছর যাবৎ আমি স্বাধীন, উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বিভাগীয় শহরে থাকি। মনের সুখে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোর পর নীড়ে ফিরলে মনে হয়, সেই নিয়ম বাধা জীবনই ভালো ছিলো। আজ এত স্বাধীনতা পেয়েও আগের সেই সুখটা এখন আর পাইনা। বাহির থেকে বাসায় এলে এখন আর কেউ বলে না,”তাড়াতাড়ি হাত-মুখ দুইয়ে আয়, একসাথে খাবো বলে বসে আছি তোর জন্য।” মাছের কাটা বাছতে গিয়ে খাবার খেতে দেরি হলে এখন আর কেউ বলে না,”পুরুষ মানুষ এত আস্তে খাবার খেলে চলে নাকি।” এখন আর কাউকে কারণে অকারণে জড়িয়ে ধরে শীতল হতে পারি না। এখন আর মুখ ফুটে প্রিয় খাবার আনার কথাটা বলা আগেই কেউ নিয়ে আসে না। তুমি ছাড়া আর কেউ আমার হাতে সখের স্মার্টফোনটা তুলে দিয়ে বলে নি, “সারাদিন এত ব্যস্ততার মধ্যে আমার আবার স্মার্ট ফোন ব্যবহারের সময় কই? ফোন কল করার জন্য পুরোনো বাটন ফুনটাই চলবে। তোর মা বলছিল ইন্টারনেটে ভালো টিচারের ক্লাস নেয়,সেইগুলো করিস।”
আমাদের মুখে হাসি ফুটাবে বলে এভাবেই হয়ত কত সুখ-আহ্লাদকে বির্সজন দিয়েছো, তার হিসেব তুমিও হয়ত দিতে পারবে না। অথচ এত অবদান রাখার পরেও তোমায় কখনো এত কিছুর জন্য সামান্য ধন্যবাদটুকুও দেই না। বছরের প্রতি ঈদে ঈদে বাড়ছে শপিং এর পরিমাণ, শুধু বাড়ছে না তোমার বেতনের পরিমাণ। আমার এখনো মনে আছে, আমি যখন ক্লাস এইটে পড়তাম। তুমি নিজের জন্য তখন দুইটা হাফ-হাতা শার্ট কিনেছিলে। আজও সেই শার্টগুলো পরে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে তোমায় বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। রঙ চটা সেই শার্ট বদলাতে বললে তুমি বলো,”এই শার্ট পরে যেই আমারটা পাই অন্য শার্টে সেই আমারটা পাই না রে।”জানি এগুলো নতুন শার্ট না কেনার বাহানা। খুব ইচ্ছে করে তোমায় একটা শার্ট উপহার দেই। কয়েক বছর ধরে মনের সেই ইচ্ছেটা আজো বাস্তবের রূপ দিতে পারি নি। সত্যি বলতে ছেলে হিসেবে আমি তোমার জন্য কোনদিনও কিছু করতে পারি নি। প্রয়োজন ছাড়া কখনো তোমার খুঁজ নেওয়ার জন্য ফোনও দেই না। কখনো মনে খুলে জানতে চায় না। তুমি কেমন আছো? তোমার শরীর ঠিক আছে কিনা।
এত র্ব্যথতার পরেও মাঝে মাঝে বৃক্ষের মতো ছায়া দানকারী বাবার প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা গহীনে পুষিয়ে রেখেছি তা খুব জানাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সব জড়তা ভেঙ্গে খোলসটা ছাড়িয়ে কখনো জরিয়ে ধরে বলা হয় নি, বাবা তোমায় অফুরন্ত ভালোবাসি।
তোমার যেদিন বাড়ি আসতে দেরি হয় সেই সময় বারবার খোদার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তোমায় সহীহ্ সালামাতে বাড়ি পৌঁছায়। তুমি হয়ত জানবেও না, তোমার ও দিন জ্বর হয়ে ছিল বলে, সেই দিন আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে খোদার কাছে তোমার সুস্থতা কামনা করে ছিলাম। তোমার মনে কখনো কষ্ট দেবো না বলে, আমি মেনে নিয়েছি আমার অপ্রিয় বিষয়কেও। কবে যে তোমার স্বপ্নগুলোই আমার স্বপ্ন হয়ে গেছে তা বুঝতে পারি নি। এগুলো যদি ভালোবাসার প্রকাশ বলে, তাহলে তাই। ভালোবাসি, তোমায় অফুরন্ত ভালোবাসি।
হয়ত লেখকের মতো গুছিয়ে ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে আমি পারি নি। তাতে কি তোমাকে জানাতে তো পেরেছি কতটা ভালোবাসি, আমার তাতেই হবে।
খোদার কাছে তোমার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আর হ্যাঁ,ভালো থেকে সবসময়।
ইতি
ইফাদ হাসান