ক্রমেই বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান । এটি এখনো বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যদিও এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টিকে ‘প্রবল’ হিসেবে বলা হচ্ছে, আশঙ্কা রয়েছে আঘাত হানার সময় এটি ‘অতি প্রবল’ সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার।
কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা যেটি দাঁড়ায় তা হলো করোনার দূর্যোগকালিন এই সময়ে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় প্রকৃতপক্ষে কতোটুকু সক্ষম আম্ফান এর মোকাবেলা করতে।
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে করোনাভাইরাস মহামারি সামাল দিতে হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পুরো সক্ষমতাই বলতে গেলে লড়ছে মহামারি সামলাতে। এ বিষয়ে সবার প্রথমে আমাদের মনে যে প্রশ্নগুলো আসে বর্তমানে সেগুলো হলো,
- পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে কিনা?
- আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব কিনা?
- কীরুপ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারি?
- আম্ফান এর প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতি কেমন?
ঘুর্ণিঝড়ের হাত থেকে প্রাণহানী ঠেকানোর একটি প্রধান উপায় হলো ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও ঝুঁকির বিষয় হলো এই সময়ে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সাইক্লোন সেন্টারে সবাইকে গাদাগাদি করেই থাকতে হবে, সুতরাং সেখান থেকে করোনা খুব বেশি পরিমানে ছড়িয়ে যাবার ঝুঁকি খুব বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান যখন আঘাত হানবে তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরণের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট হয়।
ঘরবাড়ি, গাছ-পালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে। তবে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার উপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন মি. আহমেদ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মি. ওয়াজেদ বলছেন, “ঘূর্ণিঝড়টি হয়তো দেশের উত্তর-পশ্চিম দিক অর্থাৎ সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানবে। তিনি বলেন, আঘাত হানার সময় যদি ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বা তার উপরে থাকে তার মানে হচ্ছে এটা বড় ধরণের একটা ঘূর্ণিঝড়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ স্কাউটস এবং সিপিসি এর মধ্যে এর আগেই বৈঠক হয়েছে। তবে এবার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো করোনার জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। তাই আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল।
ইতোমধ্যেই মানুষকে সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে সেচ্ছাসেবীরা কাজ শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।