রফতানিতে শীর্ষে থাকা পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি যেখানে প্রতি বছর বাড়ছে তখন উল্টো চিত্র চামড়াখাতে। ধারাবাহিকভাবে কমছে রফতানি লক্ষ্যমাত্রাও। এর উপর খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত চামড়া খাত।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক থেকে এ খাতে বিতরণ করা পুরোনো ঋণ ৫ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণকৃত ঋণের প্রায় পাঁচ ভাগের চার ভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে। বাকি ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত রয়েছে। এদিকে এবছর কুরবানির চামড়া ক্রয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দিবে প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা ।
ট্যানারি শিল্পের কাঁচামালের মূল যোগান আসে কোরবানির ঈদে। চাহিদার ৭০ ভাগই সংগ্রহ করা হয় এ সময়ে। যার ওপরে ভর করেই সারা বছর সচল থাকে এ শিল্প। চামড়া সংগ্রহে পর্যাপ্ত নগদ অর্থের দরকার হয় ব্যবসায়ীদের। যা পূরণ করে থাকে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
গত বছর এই খাতের জন্য ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি এক লাখ টাকা। এ ঋণের ৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
চামড়া খাতে সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে উত্তরা, ন্যাশনালসহ কয়েকটি ব্যাংক কিছু ঋণ বিতরণ করে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন-সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর, নানা অব্যবস্থাপনা, ট্যানারি নেতাদের অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ, যাচাই-বাছাই না করে ঋণ অনুমোদন ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার কারণে বিতরণকৃত ঋণের একটি বড় অংশ খেলাপি হয়ে গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের চামড়া শিল্পে ঋণস্থিতি ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিয়মিত ৪৩ কোটি টাকা। এসব ঋণ ১০ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে প্রায় ১০৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ঋণ পরিশোধে ভালো অবস্থানে থাকা ভুলুয়া ট্যানারিকে এবারও ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আমিন ট্যানারি, কালাম ব্রাদার্স ট্যানারি আগের ঋণ বকেয়া থাকায় এবার ঋণ দেওয়া হচ্ছে না।
এ পর্যন্ত চামড়া শিল্পে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এর মধ্যে বেশির ভাগই খেলাপি হয়ে গেছে। শুধু ক্রিসেন্ট লেদারেরই খেলাপি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। বাকিটা অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের। গত বছর ব্যাংকটি কুরবানির চামড়া কিনতে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল ১০০ কোটি। এর মধ্যে এক টাকাও ফেরত আসেনি। এবার মন্দের ভালো হিসাবে পুরোনো-নতুন মিলে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ১৪০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জনতা ব্যাংক।
ইতোমধ্যে ৫৫ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও ৭৭ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের চামড়া শিল্পে ঋণস্থিতি ৫৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা নিয়মিত হলেও বকেয়া রয়েছে। কিছু অংশ খেলাপিও হয়ে গেছে। তাই এবার ব্যাংকটি ৭০ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
রূপালী ব্যাংক এখন পর্যন্ত চামড়া খাতে ঋণ বিতরণ করেছে ৭০৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নিয়মিত আছে। আর খেলাপি হয়েছে ৭৪ কোটি টাকা। খেলাপির মধ্যে হোসেন ব্রাদার্স ট্যানারির কাছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ, মাইজদী ট্যানারির কাছে ১২ কোটি, মিজান ট্রেডার্সের কাছে ৪৫ কোটি ৬৭ লাখ, তৌফিক লেদারের কাছে ১ কোটি ২৪ লাখ এবং জে জে লেদারের কাছে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।
এসব খেলাপি ঋণের বড় অংশই পুরোনো। ১৯৮৫ সাল থেকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত। সর্বশেষ ২০২০ সালে কয়েকটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে মন্দের ভালো বিবেচনায় নিয়ে ১৫৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, অগ্রিম ১৫ শতাংশ জমা ছাড়াই নতুন ঋণ পাবেন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ৩ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে তিন বছরের জন্য ২০২০ সালের বকেয়া ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন তারা। অবশ্যই এর জন্য পর্যাপ্ত জামানত থাকতে হবে। এবছর চামড়া খাতে ৩৯০ কোটি টাকা ঋণ দিবে চার ব্যাংক।
আরো পড়ুন,
ঈদের আনন্দ হোক সর্বজনীন ও নিরাপদ
১০টি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিকাশে লেনদেন বন্ধ
একটি দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি কেন হয়?