শ্যাডো নিউজ: চালডাল ডট কম ঢাকা ভিত্তিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এটি ফলমূল এবং শাকসবজি, মাংস এবং মাছ, স্ন্যাকস, দুগ্ধজাত পণ্য, শিশুর পণ্য, গৃহ সরঞ্জাম ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে। এটি এক ঘন্টা ডেলিভারি সার্ভিসের কারণে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। চালডাল ডট কম মাধ্যমে ঘরে বসে খুব সহজেই মোবাইল বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অর্ডার করে কিনতে পারা যায়। তাই এখন হাতের মুঠোয় বাজার বলা যায় চালডাল ডট কম’-কে।
চালডাল বাংলাদেশ এর সর্ব প্রথম অনলাইন ভিত্তিক গ্রোসারী শপ। বর্তমান সমাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে প্রত্যেকটি মানুষ তার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেন ঘরে কিংবা অফিসে বসে অনায়াসেই কেনাকাটা করতে পারে এমন লক্ষ্য নিয়েই চালডাল এর যাত্রা শুরু। “সময় বাঁচাও, খরচ বাঁচাও” এই স্লোগান নিয়েই চালডাল ঢাকাবাসীদের তাদের প্রাত্যহিক জীবনের বাজার হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত।

যেভাবে হয়েছিল শুরুঃ
ওয়াসিম আলীম (প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও), জিয়া আশরাফ (প্রতিষ্ঠাতা এবং সিওও), এবং তেজাস বিশ্বনাথ (প্রতিষ্ঠাতা ও সিটিও) বন্ধুত্রয়ী ২০১৩ সালে নভেম্বর মাসে গড়ে তোলেন গ্রোসারি বা মুদি দোকানভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল ডট কম। উইকিনভেস্ট এবং সিগফিগের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য উন্নয়নে কাজ করার পরে, আলিম তার নিজের দেশে একটি স্টার্টআপ চালু করার সম্ভাবনাটি অনুসন্ধান করতে শুরু করেছিলেন। তখনও পর্যন্ত মাত্র ভারত ও সিঙ্গাপুরে এই প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। সেই হিসেবে অত্র এলাকার মানুষের কাছে মোটামুটি একেবার নতুন একটি ধারণা হলো এই চালডাল ডট কম।
প্রথমে তারা নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেন। পরিবার, বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নেন। পরে তো বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে বিনিয়োগ পেয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে চালডাল ডট কম। প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানিটি বিশ্বব্যাংকের আইএফসিসহ (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন) বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থায়ন পেয়ে থাকে।

২ হাজার বর্গফুটের একটি অফিস থেকে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে চালডালের রয়েছে ৫০ হাজার বর্গফুটের বেশি স্পেসের অফিস, ঢাকার ৭টি এলাকায় ওয়্যারহাউজ, দুটি অপারেশন অফিস, ২০টি অধিক পিকআপ ভ্যান, ৫০টি অধিক ডেলিভারি মোটর সাইকেল এবং ৩৫০ জনের বেশি কর্মী নিয়ে তাদের এই মহাযজ্ঞ। এর পণ্যসারিতে রয়েছে চার হাজার ৫০০ এর বেশি পণ্য। এখন তাদের প্রতিদিন গড়ে অর্ডার আসছে ৮০০ এর মতো। যদিও তাদের ডেলিভারি দেওয়ার এখনই সক্ষমতা রয়েছে দেড় হাজারের বেশি। এক লাখের বেশি নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে তাদের, যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অনলাইনে, ফোনের মাধ্যমে এবং অ্যাপ ব্যবহার করে ক্রেতারা তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্যের জন্য অর্ডার দিয়ে থাকেন।
চালডাল ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা বন্ধুত্রয়ীঃ

ওয়াসিম আলিম (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা): চালডাল এর পূর্বে ওয়াসিম সিলিকন ভ্যালীর অর্থনৈতিক বিষয়ক প্রযুক্তি সম্পর্কিত একটি প্রতিষ্ঠান “সিগফিগ”- এর পণ্য কৌশল বিষয়ক পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত অবস্থায় তিনি “সিগফিগ”- এর প্রাথমিক পণ্যের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছেন – বর্তমানের ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের ব্যবহার্য একটি ওয়েব ভিত্তিক দপ্তর ব্যবস্থাপনাটি তার সৃষ্টি।তার একটি অ্যালগরিদম যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খুচরা বিনিয়োগকারী তাদের ১০০ মিলিওন ডলার এরও বেশি ব্রোকারেজ মূলধন মনিটর করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। সিগফিগ এ থাকাকালীন ওয়াসিম সিএনএন (CNN) এবং ইউএসএ টুুুডে (USA Today) এর মত প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বিনিয়োগে দেশের মানুষের দ্বিধা দূর করে নতুন প্রযুক্তির বিকাশ সাধনের ইচ্ছা থেকেই তাঁর এই উদ্যোগ। ওয়াসিম যুক্তরাষ্ট্রে ফাইনান্স এবং বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

জিয়া আশরাফ (প্রধান ব্যাবস্থাপক কর্মকর্তা): জিয়া আশরাফ এর ব্যবস্থাপনা এবং মার্কেটিং জগতে অভিজ্ঞতা রয়েছে। চালডাল এর পূর্বে তিনি একটি পোশাক শিল্প কারখানা তে প্রধান ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জিয়া আশরাফ এর ছোট একটি ভাই আছে যে মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী, তাই তিনি সকল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখে। উপর্যুপরি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কে তিনি কারও যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করেন না এবং সকল সুবিধাবঞ্ছিত মেধাবীদের সাহায্যার্থে তিনি সর্বদা সহায়ক। তিনি আশা করেন চালডাল এর মাধ্যমে সমাজের এই সমস্যা মোকাবেলা করতে সার্থক হবেন। জিয়া আশরাফ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

তেজাস বিশ্বনাথ (প্রধান প্রকৌশলী কর্মকর্তা):তেজাস বিশ্বনাথ একজন স্ট্যাক প্রকৌশলী। চালডালের পূর্বে তেজাস সিগফিগে কারিগরি অবকাঠামোর প্রধান ছিলেন। এছাড়া তেজাসের লিস্প মেশিনের কারিগরির উপর ঝোঁক রয়েছে। তেজাস সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছেন।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতির শহর। যেহেতু মুদি দোকানগুলো খুব সীমিত জায়গায় হয়ে থাকে।তাই চালডাল ডট কমের লক্ষ্য গ্রাহকদের একটি বিশাল প্লাটফর্মে বড় দোকানের অনুরূপ কেনাকাটা করার অভিজ্ঞতা দেওয়া।
চালডাল ডট কম ক্লাউড-ভিত্তিক ইনভেন্টরি সিস্টেম ব্যবহার করে যা ব্যবহারকারীদের বাস্তব সময়ে কী আইটেমগুলি উপলভ্য তা দেখতে দেয়।

চালডাল ডট কম প্রথমে ভারতে হাইপারলোকাল মুদি স্টার্টআপসের মতো গ্রোফারস এবং পেপারট্যাপের মতো একটি মডেল চেষ্টা করেছিলেন, যার অর্থ নিজস্ব স্টক বহনের পরিবর্তে স্থানীয় স্টোর থেকে জিনিসপত্র তোলা। ইনভেন্টরির উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব, তবে গ্রাহকরা তা সাদরে গ্রহণ করেনি।
চালডাল ডট কম সে বছর মার্চে তার বর্তমান মডেলটিতে স্যুইচ করেছে। যেহেতু অনেক গ্রাহকরা রান্না শুরু করার ঠিক আগে খাবারের জন্য উপাদানগুলি অর্ডার করে, চালডাল অন-ডিমান্ড বিতরণ সরবরাহও শুরু করে।

চালডালের বেশিরভাগ পণ্যের দাম অন্যান্য স্টোরের তুলনায় প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ কম এবং এটি গ্রাহকদের চাহিদার সাথে সহায়ক।
ওয়াসিম আলীম বলেন, “ইনস্টাকার্ট আপনাকে অতিরিক্ত চার্জ দেয় কারণ তারা ওয়ালমার্টের মতো বিশাল খুচরা পরিকাঠামোর সাথে প্রতিযোগিতা করছে, তবে আমরা মনে করি আমরা অবকাঠামোগত উন্নতি করতে এবং কম দামে সরবরাহ করতে পারি।”
সাফল্যঃ
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত, চালডাল ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সেরা অনলাইন গ্রোসারি (মুদি) দোকান হিসাবে বিবেচিত হয়।ওয়াই কম্বিনেটর প্রকাশিত বিশ্বসেরা নতুন উদ্যোগের তালিকায় ছিল চালডালের নাম। এছাড়া পৃথিবী সেরা ৫০০ নতুন উদ্যোগের মধ্যে টপ টেন বা সেরা ১০ স্টার্টআপ নির্বাচন করে বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস।ওই ১০ এর মধ্যে চালডাল ছিল ৯ নম্বরে। দশের তালিকায় ছিল ড্রপবক্স, এয়ার বিএনবি মতো কোম্পানি। শুধু তাই নয় বিশ্বব্যাপী ৫ হাজার উদ্যোগের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে নির্বাচন করা হয় ৫০০ কোম্পানি। এর থেকে চূড়ান্ত করা হয় শীর্ষ ১০। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে পেয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল।এটি আইএফসি, বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য অনেক বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোগী পুঁজিপতিদের কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছিল।এটি দ্য ডেইলি স্টার ই-বিজনেস অফ দ্য ইয়ার ২০১৭ পেয়েছে।এফটি/আইএফসি ট্রান্সফরমেশনাল বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ এর তালিকায় চালডাল ডটকমের নাম উঠে আসে।

যাত্রার সূচনা থেকেই চালডাল ডট কম প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে করে সেবায় কোন ত্রুটি না থাকে। চালডাল ডট কমের কর্ণধাররা বিশ্বাস করে বাংলাদেশ এর বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির ব্যবহারই পারবে দেশটিকে আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে, এবং একারনেই চালডাল ডট কম মাধ্যমে তারা স্বপ্ন দেখে তাদের এই প্রয়াস যেন এই দেশের প্রতিটি মানুষ উপভোগ করতে পারে।
আপনার মতামত দিন