শ্যাডো নিউজঃ দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে সারা বিশ্বে ক্ষুদ্র একটি অনুজীব(কোভিড-১৯) তান্ডব চালাচ্ছে। জ্যামিতিক হারে আক্রান্ত এবং মৃত্যু সংখ্যা দুটোই বেড়ে চলছে। ফলে সরকারি-বেসরকারি অফিসের সাধারণ ছুটির মেয়াদ আগামী ২৬এপ্রিল থেকে ৫মে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটির মধ্যে ঢাকা ও সারা দেশে ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম সীমিত পর্যায়ে খোলা রাখা হবে।
সাধারণ ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি
আগামী ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এতথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সাধারণ ছুটির এই সময়ে সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন।
একই সঙ্গে অন্যান্য জরুরি সেবার পাশাপাশি ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয় সাধারণ ছুটিকালীন ঢাকাসহ সব বিভাগ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খোলা থাকবে।
যেসব সরকারি অফিস খোলা থাকবে সেগুলো হলো–
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, | মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, | কৃষি মন্ত্রণালয়, |
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, | খাদ্য মন্ত্রণালয়, | জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, |
স্বাস্থ্য সেবা, | স্বাস্থ্য শিক্ষা | ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, |
জননিরাপত্তা বিভাগ, | সুরক্ষা সেবা বিভাগ, | তথ্য মন্ত্রণালয়, |
স্থানীয় সরকার বিভাগ, | পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, | দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, |
নৌপরিবহন বিভাগ, | সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় | এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। |
যা যা সাধারণ ছুটির আওতার বাইরে থাকবে
অন্যদিকে ছুটির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জরুরি সেবা যেমন ;বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর ( স্থল, নদী ও সমুদ্র বন্দর) কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং সংশ্লিষ্ট সেবাকাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির বাইরে থাকবেন। সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের পণ্য পরিবহনের সঙ্গে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল ইত্যাদি) চলাচল অব্যাহত থাকবে।
এ ছাড়া কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এই ছুটি প্রযোজ্য হবে না। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী এবং গণমাধ্যমে ( প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক) নিয়োজিত কর্মীরা এই ছুটির আওতাবহির্ভুত থাকবেন।
এছাড়াও ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে শিল্প কারখানা, কৃষি ও উৎপাদন এবং সরবরাহব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও গণপরিবহন পর্যায়ে উন্মুক্ত করা হবে। ছুটির সময় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলো খোলা থাকবে। প্রয়োজন বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
এর আগে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রথম দফায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিসের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দ্বিতীয় দফায় বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এবং তৃতীয় দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এবার চতুর্থ দফায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, মহামারির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায়।
তবে সাধারণ ছুটির মধ্যেই ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে খোলা রয়েছে এবং নিত্যপণ্য ও ওষুধসহ জরুরি সেবাগুলো চালু রয়েছে।
মহামারির সর্বশেষ পরিস্থিতিঃ
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক, অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, গত ২৪ঘন্টায় করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে আরও ৪১৪ জন আক্রান্ত হয়েছে! এ নিয়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ১২৭ জনের মৃত্যু হলো এবং মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪১৬২ জন!

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৬০৭ জন মানুষ প্রান হারিয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ লাখ ৭২ হাজার ২২১ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৪ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে আছে ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৯৪ জন(৯৭ শতাংশ) এবং ৫৮ হাজার ৩১০ জন (৩ শতাংশ) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।
এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৩ জন। গড় সুস্থ হয়েছে ২৭% সেখানে বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ২% ভাগ মানুষ এ মরণআঘাতী ভাইরাসের সাথে মোকাবেলা করে সুস্থ হয়েছে। করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৬ এপ্রিল সমগ্র বাংলাদেশকে ঝুঁকিপুর্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।