মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি বেশ বড় আকারে সংকটের মুখে পরতে যাচ্ছে এমন একটি পূর্বাভাস দিয়েছে ম্যানিলা ভিত্তিক সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক(এডিবি)। এডিবি জানিয়েছে, ভাইরাসটির কারণে ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন থেকে ৮ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে এডিবি যে ধারণা করেছিল ক্ষতির হার তার দ্বিগুণ এবং বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৭ শতাংশের সমান।
বৈশ্বিক এই পরিস্থিতিতে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার নানা আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রধান অর্থনীতিবিদ, ইয়াসুকি সাওদা বলেছেন, “এই পর্যালোচনায় করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে প্রভাব ফেলেছে তার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনীতির ক্ষতি প্রশমনে নীতিগত হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সে ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়েছে।”
পূর্বাভাসে এডিবি বলেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির এই অচলাবস্থা, অর্থাৎ যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ যদি আগামী ছয় মাস বহাল থাকে তাহলে সর্বোচ্চ ক্ষতি (৮.৮ ট্রিলিয় ডলার) হতে পারে। আর এ অবস্থা যদি তিন মাস চলে তাহলে কিছুটা কম ক্ষতি (৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার) হতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বড় আঘাত হানার চিত্র দেখা গেছে। গত দুই মাসে দেশটিতে নতুন করে বেকার হয়েছেন তিন কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ। গত এক সপ্তাহে দেশটিতে নতুন করে বেকার হয়েছেন ৩০ লাখ মানুষ। সবমিলিয়ে দেশটির মোট কর্মজীবী মানুষের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এখন বেকার!
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান, জেরোম পাওয়েল বলেছেন, “প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। এখন সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কষ্টদায়ক হলেও অনেক ধীর গতিতে আমাদের এ সংকট থেকে বের হতে হবে।”
এডিবি জানিয়েছে, এই ভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার অথবা দেশটির জিডিপি’র ১০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে প্রথম এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া চীনের ক্ষতির পরিমাণ ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার অথবা দেশটির অর্থনীতির ১১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়াবে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ১০ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার।
এডিবির মতে, দক্ষিণ এশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) করোনাজনিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ হাজার ২০০ কোটি থেকে ২১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের মতো। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সার্বিকভাবে এবার দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ কমবে।
ঋণদানকারী সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, খেলাপি ও দেউলিয়া পরিস্থিতি রোধে দ্রুত এবং পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে এই আর্থিক সংকট ঠেকানো যাবে না। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে ২৪ কোটি ২০ লাখ লোক চাকরি হারাতে পারেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, করোনাভাইরাস আরেকটি স্থানীয় ভাইরাস হিসেবে কমিউনিটির মধ্যে থেকে যেতে পারে। জনসাধারণকে এই স্থানীয় ভাইরাসগুলোর সঙ্গে বেঁচে থাকা শিখতে হবে।