বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা “করোনা” ভাইরাসের পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করে রীতিমত অবাক করে দিয়েছে ডা. জাফরুল্লাহর প্রতিষ্ঠান “গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।তবে পর্দার পেছনে একজন মহানায়ক থাকে।এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার স্বল্প মূল্যের ও কার্যকরী কিট আবিষ্কারের মহানায়ক যে মহান ব্যক্তিটি,তার নাম ডা. বিজন কুমার শীল।যিনি বর্তমানে উক্ত কেন্দ্রের ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।তার আরেকটি পরিচয় আছে।তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
মাত্র ১৫ মিনিটে করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবনের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, মাত্র ৩৫০ টাকা খরচে করোনা শনাক্তের এ পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘র্যাপিড ডট ব্লট’। ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাশেদ জমিরউদ্দিন ও ড. ফিরোজ আহমেদ এ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ব্লাড গ্রুপ যে পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা হয় এটা মোটামুটি সে রকমের একটি পদ্ধতি। ২০০৩ সালে যখন সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল তখন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে সার্স ভাইরাস দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ‘র্যাপিড ডট ব্লট’ পদ্ধতিটি ড. বিজন কুমার শীলের নামে পেটেন্ট করা। পরে এটি চীন সরকার কিনে নেয় এবং সফলভাবে সার্স মোকাবেলা করে। তারপর তিনি সিঙ্গাপুরেই গবেষণা করছিলেন ডেঙ্গুর ওপরে। গবেষণা চলাকালে তিনি দুই বছর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন। আমাদের এখানে যখন যোগ দিলেন তখন তিনি ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করোনা ভাইরাস দেখা দিলো, তখন ড. বিজন আমাদের বললেন, এটা (করোনা ভাইরাস) হলো সার্সের রূপান্তরিত রূপ। এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। উনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন। তখন আমরা কেউ চিন্তা করি নাই করোনা ভাইরাস এমন হতে পারে। তিনি তখন বলেছিলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের গবেষণা করা দরকার।’
কে এই বিজন কুমার শীল? জানতে খুব ইচ্ছা করে না? ডা. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।স্নাতক করেছেন ভেটেরিনারিতে।এরপর বাকৃবি থেকেই ভাইরোলজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।এরপর পিএইডির জন্য ইংল্যান্ড যান।সেখানে ইউনিভার্সিটি অব সারে তে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।এরপর দেশে আসেন।কিন্তু দেশে বেশিদিন থাকতে পারেন নি।কিছুদিন পর বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান সিংগাপুরে, জয়েন করেন সিংগাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসাবে। এরপর ঐ চাকরি ছেড়ে জয়েন করেন এমপি নামক একটা বায়োলজিকস আমেরিকান কোম্পানিতে, ওটার মালিক ছিলেন যুগোস্লাভিয়ার একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।
এরপর নিজেই বায়োলজিক্যাল রিয়েজেন্ট তৈরি ও ব্যবসা শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টে। সেখানে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি মনযোগ দেন গবেষনায়।
ড. বিজন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানী। তিনি সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ক্যাম্পাসেই থাকেন। ড. বিজন গত দুই মাসে করোনার গবেষণা পারফেক্ট করেন।
ড. বিজন ও তার দলের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ৩৫০ টাকায় ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত করা সম্ভব। সম্প্রতি আমেরিকার একটি সংস্থা আমাদের জানিয়েছে, তারাও ড. বিজন কুমার শীলের উদ্ভাবিত এই ‘র্যাপিড ডট ব্লট’ উৎপাদন করতে চায় এবং এ ব্যাপারে তারা ড. বিজনের সঙ্গে কথাও বলেছে।