অস্ট্রেলিয়া নামে ভারী দল। তাই অজিদের হারানোর প্রতিটি ক্ষণই সুখস্মৃতির। কিন্তু এই সুখস্মৃতির ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই আবারো মিরপুরের মাঠে মুখোমুখি দুই দল। আগের ম্যাচে অজিদের হারানো যে নিছকই দুর্ঘটনা ছিল না সেটাই প্রমাণ করতে বোধহয় মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। অজিদের ছোট সংগ্রহ। কিন্তু আড়ালে যে হাসে মিরপুরের রহস্যময় পিচ। ম্যাচজয়ের সম্ভাবনা ব্যাটিং শুরুর আগে প্রবল থাকলেও সময় গড়িয়েছে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটিং দৈন্যদশা দেখে। তবে সব ছাপিয়ে জয়টা বাংলাদেশেরই। তবে আগের ম্যাচের মতোই তরুণ ক্রিকেটারদের উপরে ভর করে জিতেছে টিম বাংলাদেশ।
মিরপুরের দ্বিতীয় টি টুয়েন্টিতে আবারো টাইগার কাপ্তান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের টস হার। এ নিয়ে টানা ৫ টি টুয়েন্টি ম্যাচে টস হারলেন তিনি। টসে জিতে আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া। কিনতি প্রথম ম্যাচের ইনিংসটাই যেন আবার মঞ্চায়ন করল অস্ট্রেলিয়া। মিরপুরে আবার সেই স্লথ, মন্থর উইকেট। যেখানে রান নিতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে ব্যাটসম্যানদের। এবারও মিচেল মার্শই যা করার করেছেন মূলত, আগের ম্যাচের মতো এবারও করেছেন ৪৫। মোস্তাফিজুর-শরিফুলদের কাটার আর সাকিবদের স্পিনে অস্ট্রেলিয়া আটকে গেছে ১২১ রানে।
আগের মাচের মতো শুরুটা আজ অতটা খারাপ হয়নি অস্ট্রেলিয়ার, অন্তত প্রথম ওভারে উইকেট হারাতে হয়নি। জশ ফিলিপ ও অ্যালেক্স ক্যারি সতর্ক ছিলেন আগের অভিজ্ঞতা থেকে। নাসুমের দ্বিতীয় ওভারে অবশ্য দুইটি চার মেরেছিলেন ক্যারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়েছেন ক্যারিই আগে। এবারও মাহেদী হাসানই ঘাতক, তাগে মিড অনের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যারি করতে পারেননি ক্যারি। জশ ফিলিপ আউট হয়েছেন মোস্তাফিজের আক্টারে, যেটা এত নিচু হয়ে এসেছিল ক্যারি বুঝতেই পারেননি। ৩১ রানে তাই ২ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার।
এরপর মিচেল মার্শ আর ময়জেস হেনরিকস মিলে একটু লাইনে আনার চেষ্টা করেছেন অস্ট্রেলিয়াকে। দুজন সুযোগ পেলে বাজে বলের ফায়দা লুটছিলেন। মার্শ দারুণ কিছু শটে চার পাচ্ছিলেন, অন্যদিকে হেনরিকস নাসুমকে মেরে পেয়েছেন ইনিংসের একমাত্র ছয়। দুজনের জুটিতে রান উঠে গেছে ৫০। এরপর যখন রান রেট বাড়াতে যাবেন, তখনই সাকিবকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন হেনরিকস, ফিরলেন ২৫ বলে ৩০ রান করে।
তবে মার্শ ছিলেন ঠিকই, মনে হচ্ছিল আজ ফিফটিটা পেয়ে যাবেন। কিন্তু শরিফুলের বলে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে সোহানকে, করলেন ঠিক ৪৫। এরপরেই পথ হারানো শুরু করল অস্ট্রেলিয়া। মোস্তাফিজ পর পর দুই বলে ফেরালেন ওয়েড আর অ্যাগারকে। প্রথমজন বোল্ড, দ্বিতীয়জন ক্যাচ। বলা বাহুল্য দুজনেই শিকার কাটারে। শরিফুল পরে ফিরিয়েছেন টার্নারকে। শেষ ওভারে চার মেরে রান ১০ পার করেছেন স্টার্ক।
ছোট টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটার গত ম্যাচের মতোই। আবারো ব্যর্থ সৌম্য। আজ ফিরেছে ব্যাট হাতে কোনো রান যোগ না করেই। নাঈম শেখও টেকেননি বেশিক্ষণ, জশ হ্যাজলউডের নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন ৯ রানে।
১২২ রানের ছোট লক্ষ্যের জন্য স্ট্রাইক রোটেটই ছিল যথেষ্ট। সাকিব অবশ্য এসেই তিন চার। প্রথম দুই বল প্যাডের ওপর, ফ্লিক করে সাকিব পেয়েছেন দুর্দান্ত দুইটি চার। পরের বলটা অবশ্য এজ হয়েছিল, দুর্ভাগ্য স্টার্কের প্রথম স্লিপের ফাঁকা জায়গা দিয়ে চলে গেছে বাইরে। এই মোমেন্টামটা ধরে রেখেছেন সাকিব, সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করছিলেন।
তবে অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছিল অন্য প্রান্তে। মাহেদী হাসান চারে উঠে এসেছিলেন। প্রথম দুই ওভারেই অন্তত তিন বার আউট হতে পারতেন। অ্যাগারের বলেই হতে পারতেন আসলে। কিন্তু বল তুলে দিয়েও কীভাবে যেন প্রতিবারই বেঁচে গেছেন। সেখান থেকে দুই রান করে এসে স্ট্রাইক রেটও ঠিক করে ফেলেছিলেন। আর জাম্পাকে উড়িয়ে ইনিংসের বাংলাদেশের প্রথম ছয়ও পেয়ে গিয়েছিলেন।
ওদিকে সাকিব টাইয়ের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন তখন। আর মাহমুদউল্লাহ এসে নিতে পারেননি দায়িত্ব। ফিরেছেন শূণ্য রানে। মাহেদীও বেশিক্ষণ থাকেননি, শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ২৩ রান করে স্টাম্পড জাম্পার বলে।
স্কোরবোর্ডে যখন ৬৭ রান ৫ উইকেট। তখন ম্যাচ ঝুলে গেছে অজিদের দিকে। ক্রিজে দুই তরুণ ক্রিকেটার আফিফ আর সোহান। মেন্টাল গেমটা তখন প্রয়োজন ছিল খুব করে। আফিফ, সোহান চাপের মুখে সেটাই করে গেছেন। সিঙ্গেলস, ডাবলস নিয়ে শুধু প্রতিরোধের চেষ্টা করে গেছে। মাঝে আসছিল বাউন্ডারিও। স্টার্কের বলে আফিফের ওমন সুন্দর কাভার ড্রাইভে মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে! স্টার্কের ঐ ওভারে দুজন দুইটি চার মেরে সমীকরণ সহজ করে ফেলেছেন ততক্ষণে, নিয়ে এসেছেন রান রেট পাঁচের ঘরে। আর যেটুকু সংশয় ছিল সেটা দূর হয়ে গেছে টাইয়ের ১৮তম ওভারে। দুই চারে আফিফ নিয়ে এসেছেন নাগালে। দুজনের ৫০ রানের জুটিও হয়ে গেছে পূর্ণ। এরপর বাকি কাজটা সেরেছেন সহজেই। ৩১ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ, আর নুরুল ছিলেন ২১ বলে ২২ রান করে। তরুণ টাইগারদের কাঁধে চেপে ক্যাঙ্গারু বধটা হয়েছে ৮ বল বাকি থাকতেই।
সিরিজ জেতা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাকি ৩ টি ম্যাচের মধ্যে একটি জিতলেই সিরিজ কনফার্ম। তবে সব ছাপিয়ে তরুণ ক্রিকেটারদের যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সেটাই গত ২ ম্যাচে সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। সামনের টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এর চেয়ে আর ভাল মঞ্চ কোথায় পাবে তরুণ টাইগাররা?
ক্রিকেট থেকে আরো পড়ুন,
অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরতিতে যাচ্ছেন বেন স্টোকস
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে প্রথম জয় বাংলাদেশের