ছোটবেলার মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শোনা আর হয় না। না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে জোর করে মা এর তুলে ভাত খাওয়ানো, বৃষ্টিতে ভিজে খেলার জন্য বকুনি সব কিছুই বড়বেলার শহুরে জীবনে ভীষন মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না সেই ছোটবেলায়? যেখানে কোন কিছুর চাপ ছিল না,কোন কৃত্তিমতার ছোঁয়া সেখানে লাগে নি। শুধু ছিল অসীম ভালোবাসা।
সবথেকে সুমধুর শব্দ মা। ‘মা’ হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী যার সাথে নাড়ীর সম্পর্ক থাকে। একটি সন্তান পৃথিবীতে আসার আগে তার মায়ের গর্ভে যত্নে বেড়ে উঠে। সৃষ্টিকর্তা মা আর তার সন্তানের মধ্যে সবথেকে মধুর সম্পর্কটি উপহার দিয়েছেন। সন্তান যত বড়ই হোক না কেন মায়ের কাছে সে তার আদরের ধন।
অসুস্থ সন্তানের পাশে বসে দিনরাত সেবা করা, পরীক্ষার আগের রাতগুলোতে সন্তানের পাশে থাকা বা কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারা যে আজ দিনটা ভালো যায় নি এইসব তো শুধু মায়েদের দ্বারা সম্ভব। সন্তানের সব আবদার তারা হাসি মুখে মেনে নেন। এ পৃথিবীতে সন্তানের জন্য জীবন বাজি রাখতে শুধু ‘মা’-ই পারেন। পত্রিকার পাতায় আমরা প্রায়ই দেখি সন্তানের জন্য মায়ের আত্মত্যাগের কথা।
সম্প্রতি এক মা তার সন্তানদের খাবারের জন্য নিজের চুল বিক্রি করে দিয়েছেন। আগুন থেকে সন্তানকে বাঁচাতে যেয়ে নিজেও পুড়ে মারা গেছেন একজন মা। বড় হতে হতে আমরা মায়ের আত্মত্যাগের কথা ভুলে যায়। যেকোন কথাতে রাগ দেখাতে শুরু করি।অনেক সময়ই বিরক্তি প্রকাশ করি।দুঃখজনক হলেও এরকম সংবাদও দেখতে হয় সন্তানের হাতে মা খুন, বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে সন্তানের পলায়ন। আর বৃদ্ধাশ্রম তো আছে মাকে সংসারের বোঝা মনে হলে রেখে আসার জন্য। আচ্ছা মায়ের কাছে সন্তান তো সবসময়ই সবচেয়ে প্রিয় তাহলে সন্তানের কাছে মা বোঝার কারণ হয়ে যায় কেন? শুধুই বার্ধক্যের জন্য?
যেভাবে মা দিবসের আবির্ভাব
১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পৈচাশিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া মাদার’স ডে প্রোক্লেমেশন নামে একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস।
১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান আনা মেরি জার্ভিসের মা। তার একবছর পর ১৯০৮ সালের ১০ মে সকালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরে অবস্থিত আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে ১ম বারের মতো দিনটি উদযাপন করেন আনা। যেখানে তার আনা মেরি জার্ভিসের মা প্রতি রবিবারে পড়াতেন। চার্চটি বর্তমানে International Mother’s Day Shrine নামে পরিচিত।
মায়ের মৃত্যুর পর আনা মেরি জার্ভিস ১৯১২ সালে স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এসময় জার্ভিস মা দিবসকে ছুটির দিন করার লক্ষ্যে ও দিনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে প্রচারণা চালান।
তার এই প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যে। তারপর ১৯১৪ সালে তার প্রচেষ্টা সফল হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৬২ সালে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবসের স্বীকৃতি পায়।
প্রতিবছর মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান হিসেবে মা দিবস পালন করা হয়। মাতৃত্ব, জীবন ও সমাজে মায়ের প্রভাব উদযাপনের জন্য বিশ্বের অনেক অঞ্চলে ‘মা’ দিবস পালন করা হয়। সাধারণত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এটি উদযাপিত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ দেশ ‘মা’ দিবস পালন করে থাকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে।
অনেকের মতে ‘মা’ দিবস তো প্রতিদিনই। আলাদাভাবে বিশেষ দিন হিসেবে এটি উদযাপন কেন করবো? আমরা এই দিন পালন করবো কারণ মানুষের জীবনে বিশেষ দিনগুলো গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মায়ের সারা বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ঋণ একটি দিন দিয়ে শোধ করতে পারবো না ঠিক। তবে সেইদিনটাতে যদি মাকে যেয়ে মনের কথাগুলো বলতে পারি, মাকে কোন উপহার দিতে পারি, মায়ের সাথে দিনটি কাটাতে পারি, পরবর্তী দিনগুলোতে আরো বেশি সময় দিব এই কথা দিতে পারি তাহলেই এই দিবসটি সার্থক। “তোমাকে অনেক ভালোবাসি, মা। ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য।” এটায় বা কয়জন বলতে পারি আমরা। অনেক তো হলো বড় হওয়া। এবার না হয় আবার মায়ের কোলে শুয়ে মন খুলে গল্প করি। যদি মায়ের থেকে দূরে থাকেন মাকে ফোন করে বলে দিন তাকে আপনি কতটা ভালোবাসেন। কতটা মনে পড়ে তার কথা। মায়ের হাতের রান্না কতটা মিস করেন আপনি।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মা।
অবসরে পড়ে নিতে পারেন ‘মা’ কে নিয়ে লেখা কিছু উপন্যাসঃ |
---|
১. মা- ম্যাক্সিম গোর্কি ২. মা – আনিসুল হক ৩.জননী – শওকত ওসমান |