বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ। প্রতিবছর ৮ মে সারাবিশ্বে ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ পালন করা হয়। বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে,
‘তারুণ্য থেকে শুরু হোক থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধ, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ’
থ্যালাসেমিয়া একটি জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ। তবে এটি রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটির কারণে এ রোগ হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা “অ্যানিমিয়া”তে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। পিতা-মাতার কাছ থেকে সন্তানে এই রোগ ছড়ায়। বাবা-মা উভয়েই যদি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হয় তাহলে সন্তানেরা এই রোগ নিয়ে জন্মাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্রনিক রোগ থ্যালাসেমিয়ার সম্ভাব্য উদ্ভবের উপসর্গগুলো খুঁজে বের করার জন্য পুরুষ ও নারী উভয়েরই বিয়ের আগে একটি বিস্তারিত রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। থ্যালাসেমিয়া রক্তের এমনই একটি রোগ যা দেহে হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিকতা তৈরি করে। হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্ত কোষের প্রোটিন অণু, যা অক্সিজেন বহন করে। এই রোগের ফলে লোহিত রক্ত কোষ ধ্বংস করে দেয়, যা অ্যানিমিয়ার দিকে নিয়ে যায়। অ্যানিমিয়া হলো দেহের সুস্থ রক্ত কোষ শূন্য অবস্থা। যেহেতু থ্যালাসেমিয়া উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়, পিতা-মাতার মধ্যে একজন এই রোগ বহন করছে। এর ফলে জেনিটিক পরিবর্তন অথবা জিনের নির্দিষ্ট কিছু অংশ নষ্ট করে দেয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মঞ্জুর হোসেন বলেন, যদি আমরা আমাদের দেশে এন্টি-নাটাল পরীক্ষা চালু করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমরা থ্যালাসেমিয়া পজিটিভ শিশু জন্ম হার কমাতে পারি। দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, জিনগত রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে দিন দিন থ্যালাসেমিয়া রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত রক্ত পরিবর্তনের ওপর বেঁচে থাকে।’
চিকিৎসকরা বলেন, এটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চাপ। প্রধানত দুই প্রকারের থ্যালাসেমিয়া হলো- আলফা টাইপ ও বেটা টাইপ। এর মাধ্যমে বুঝা যায় কোন ধরনের হিমোগ্লোবিন জিন আক্রান্ত আর কোন ধরনের হিমোগ্লোবিন জিন নষ্ট। তবে কিছু ব্যাতিক্রম ধরনেরও আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও) এর মতে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বাংলাদেশে প্রায় ১০-১২% মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। বিশ্বে প্রতি বছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ।
দিবসটি উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মুজিববর্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি দফতরে সচেতনামূলক অনুষ্ঠান, থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয়ের জন্য বিনামূল্যে স্ক্রিনিং, সব থ্যালাসেমিয়া রোগীকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত করা এবং দরিদ্র ও সহায়-সম্বলহীন রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।”
ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিসের পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান শুরু হয়েছে। এছাড়াও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।