বর্তমানে পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায়; সরকার দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ১০টাকা কেজি দরে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাস থেকেই শুরু হচ্ছে সরকারের এ কর্মসূচি; চলবে জুন পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজধানীর খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যই নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। আজকালের মধ্যেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেশের সবগুলো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় এই কার্যক্রম চালু করবে সরকার। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে প্রতিটি জেলা শহরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই কার্যক্রম চালু করা হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্হিতিতে নিম্ননআয়ের এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সবথেকে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দিন এনে, দিন খাওয়া মানুষগুলো যেন অভুক্ত না থাকে সে লক্ষ্যে সরকার ওএমএস চালুর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে খাদ্য অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, উপরের নির্দেশনা পাওয়ায় প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে চাল পৌঁছানোর কর্মকৌশল ঠিক করছে খাদ্য অধিদপ্তর।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) সারোয়ার আলম বলেন, ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রির একটি সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। এখন জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ব্যক্তি উদ্যোগের ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। এসব ত্রাণ যারা পাচ্ছেন তাদের বাইরে যারা আছেন সেই লোকজনকে টার্গেট করে ওএমএস চালু করা হবে। যাতে একই ব্যক্তি যেন বার বার সুবিধা না পান এবং কেউ যেন বাদ না পড়ে। তিনি আরও জানান, আমরা কর্মকৌশল ঠিক করছি। মন্ত্রণালয়ের আদেশ পাওয়ার পরপরই এই কার্যক্রম খুব শিগগির শুরু হবে।
জানা গেছে, ওএমএসের (খোলাবাজারে বিক্রি) মাধ্যমে নির্দিষ্ট দোকান ও ট্রাক থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে একটি পরিবার একবারে সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল কিনতে পারেন। বর্তমানে গ্রামীণ এলাকায় কার্ডধারী প্রায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে।কিন্তু ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এ কার্যক্রম চালু নেই। এক্ষেত্রে নগরবাসীর জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে খোলাবাজারে (ওএমএস) ১০৭টি দোকানে ও ১৩ ট্রাকে করে এ চাল বিক্রি করা হয়।
আগামী সপ্তাহে ডিলারদের মাধ্যমে ওএমএস কার্যক্রম চালু হতে পারে। বর্তমানে ওমএসএস’র মাধ্যমে ৩২ টাকা কেজি দরে চাল ও ১৮ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু বাজারে মোটা চালের স্বাভাবিক দাম ও ওএমএসের চালের দাম প্রায় সমান হওয়া গত বেশ কিছুদিন ধরে ওএমএস- এ চাল বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস কার্যক্রম চালু করার আগে তারা কর্মকৌশল ঠিক করছেন, যাতে করে একই ব্যক্তি একাধিকবার লাইনে না দাঁড়ায়। যারা বিভিন্নভাবে ত্রাণ সামগ্রী পাচ্ছেন তারাও যেন ওএমএস এর চাল নিতে বার বার না আসেন। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতাও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা । যেহেতু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি সংকটে আছে নিম্নআয়ের দরিদ্র ও দিনমজুর মানুষেরা তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অন্যান্য সময়ের মতো এবার একইভাবে চাল দেয়া হবে না। করোনা পরিস্থির কথা মাথায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিয়ে চাল বিক্রি করা হবে। সবাই যাতে নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে এবং সকল নিয়ম মেনে চাল ক্রয় করে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিন সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মঙ্গলবার এ সময়সীমা আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ সময়ে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। শহর এলাকায় বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে শহর এলাকায় বসবাসরত খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠী। হকার, রিকশা, ভ্যানচালক, দিনমজুর, বাস ড্রাইভার, হেলপারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হতদরিদ্র মানুষকে এ সুবিধা দিতেই মূলত এ কর্মসূচি চালু করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা যায়, ৩০ টাকা দরে খোলাবাজারে (ওএমএস) এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে ১ লাখ ৪০ হাজার টন চাল বরাদ্দ রয়েছে।
কিন্তু এবার বাজারে চালের দাম বেশি না হওয়ায় এর চাহিদা একেবারেই কম। তাই গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বরাদ্দকৃত চালের মাত্র ১ হাজার টন বিক্রি হয়েছে। বাকি চাল এখনও অবিক্রীত রয়ে গেছে।
এসব অবিক্রীত চালই আরও বেশি ভর্তুকি দিয়ে জরুরি অবস্থায় খোলাবাজারে দরিদ্র মানুষের কাছে ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে চায় সরকার। এজন্য সরকারকে অতিরিক্ত কোনো ভর্তুকিও দিতে হবে না।কারণ চলতি বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ওএমএসের চাল বিক্রি না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এখন ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করলে আগের বরাদ্দকৃত ভর্তুকি ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় হয়ে যাবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।