মানব দেহের একটি অপরিমেয় বিষয়বস্তু হচ্ছে পানি। দেহে রক্তের ঘনত্ব ঠিক রাখা, বৃক্কের সুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ছোটো ছোটো প্রতিটা কাজে পানির উপস্থিতি অনেকাংশে লক্ষনীয়। উষ্ণতম দিনগুলোতে পানি পান একটি অপরিহার্য বিষয়। যেখানে পানিকে জীবনের অপর নাম দেয়া হয়েছে সেখানে বিশেষজ্ঞরা বলছেন অতিরিক্ত পানি মৃত্যুর কারন হতে পারে। তারা এও বলছেন দিনে কতটা পানি পান করা হচ্ছে তা নজরে রাখতে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দেহে পানি সাম্যতায় ভিন্নতা সৃষ্টি করে।
মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাইকেল ফ্যারেলের মতে,আমরা যদি শরীরের চাহিদা মোতাবেক সবকিছু সরবরাহ করি সেটাই হবে সঠিক কাজ। তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করতে হবে তবে সেটা যেনো হয় শরীরের চাহিদা অনুযায়ী। অতিরিক্ত পানি পান বরং শরীরে পানির যে প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে সেটাই নষ্ট করে দেয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যে, ভারতীয় পুষ্টিবিদ রেশমি সোমানির মতে অতিরিক্ত পানি পান বৃক্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় , রক্তের পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, ইউরিনের পরিমান বেড়ে গিয়ে তা শরীর থেকে বের হওয়ার সময় অতিরিক্ত খনিজ পদার্থ বের করে নেয় ফলে দেহে খনিজের পরিমান কমিয়ে দিয়ে মৃত্যু ঝুকি বাড়ায়।
কম সময়ে বেশি পানি পান বিশেষ করে ৩-৪লিটার পানি পানে ‘ হাইপোনাট্রামিয়া ‘ দেখা দিতে পারে যার ফলস্বরূপ সোডিয়ামের পরিমান কমে গিয়ে মস্তুিষ্কে রক্তক্ষরন ঘটে ব্রেইন স্ট্রোক এমনি মৃত্যুর কারন হতে পারে। হাইপোনাট্রেমিয়ার ক্ষেত্রে অনেকের হাত, পা ও ঠোঁট ফুলে বা রঙের পরিবর্তন হয়ে থাকে। দেহের সকল কোষ ফুলে গেলে ত্বকের কোষও যথারীতি ফুলে যেতে থাকে।
চাহিদার অতিরিক্ত পানি পানে কিডনি মাঝে মাঝে পানি পরিশোধন করে পুনরায় শোষণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বমিবমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, সারাদিনই মাথাব্যথা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম কিংবা বেশি পানি পান করলে মাথাব্যথা হতে পারে, শরীরে লবণের ঘনত্ব কমে যায় ফলে সকল অঙ্গ পানি শোষণ করে ফুলে যায়। পানি অতিরিক্ত খেলে ব্রেইনের স্কাল্পে চাপ লাগে তখন মাথাব্যথা অনুভব হয়।ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়াম বিজ্ঞানের অধ্যাপক তামারা হেউ বাটলার বলেন, বেশি পানি পান করলে ব্রেইনের কোষ ফুলে যেতে পারে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
শরীরের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তায় যেখানে দিনে ২-৩ লিটার পানি পান একজন ব্যক্তির জন্য সঠিক নির্ধারক সেখানে যদি কেউ ২১ লিটারেরও বেশি পান করে ফেলে তবে তার রক্তে ‘ Hypoosmolarity ‘ ( অসমোলারিটি কমে যাওয়া) সৃষ্টি হয়। ফলে রক্ত থেকে পানি অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় কোষে প্রবেশ করে ‘ Cerebral edma ‘ ( কোষ ফুলে যাওয়া) তৈরি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হচ্ছে- ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশন’।
ম্যারাথনের সময় অ্যাথলেটদের বেশি পানি পানের পরামর্শ দেয় হতো । অতিরিক্ত পানি পানে অনেকের মৃত্যু ঘটেছে কারন তারা শারীরিক চাহিদার আগেই পরিমানের অতিরিক্ত পানি গ্রহন করেছিলো।
শরীরে পানির চাহিদা নির্ভর করে দৈনিক রুটিনের ওপর। সারাদিনের কাজের ধরন ও সময় বলে দেয় দেহে আর কতটুকু পানির প্রয়োজন। বয়স, ওজন, লিঙ্গ বিবেচনায় পানি পানের হিসেবটা ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হয়ে থাকে। বিশেষ করে ওজন আর উচ্চতাকে মাথায় রেখে পানি গ্রহনের পরিমান নির্ধারন হয়। এখন পর্যন্ত দৈনিক পানি পানের আদর্শ মাপ ধরা হয় ৮ গ্লাস (প্রতি গ্লাস ২০০ মিলি)। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই অন্যান্য খাবার গ্রহনের পাশাপাশি পানি গ্রহনের প্রতিও নিয়ম অনুসরন করতে হবে।
লাইফ স্টাইল থেকে আরো পড়ুন,
রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়ার ভালো-মন্দ
কিডনির যত্ন নেয়া হোক এখন থেকেই