ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছেন। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনস্থ উপ-উপাচার্যের অফিস কক্ষে এ সময় সদ্য বিদায়ী উপ-উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা, অপর উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ, রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালামসহ অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, অফিস প্রধান, বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
দায়িত্বে যোগদানের পর প্রফেসর সুলতান-উল-ইসলাম তাঁর এ নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্ন রাখাসহ দায়িত্ব পালনে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
পরে নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির জনকের প্রতিকৃতি ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করেন। এছাড়া তিনি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ড. জোহার সমাধি, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক ও শহীদ চার জাতীয় নেতার অন্যতম এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবরেও পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করেন।
নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম
বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ১৯৯৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন ও ২০০৭ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে প্রফেসর ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপ-উপাচার্য হিসেবে নিযুক্তির সময় তিনি ভূতত্ত্বও খনিবিদ্যা বিভাগে সভাপতির দায়িত্বে রত ছিলেন। তিনি এ যাবত পিএইচডি পর্যায়ে চারটি, এমফিল পর্যায়ে দুটি, এমএসসি পর্যায়ে পঁচিশটি গবেষণা এবং বিএসসি (সম্মান) পর্যায়ে পঁয়ত্রিশটি গবেষণা প্রকল্প তত্ত্বাবধান করেছেন। বর্তমানে তিনি তিনটি এমফিল/পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধানরত আছেন। তাঁর নব্বইটির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের জার্নাালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ভূতাত্তি¡ক ও পরিবেশ বিষয়ে তাঁর ছয়টি গবেষণা পুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ ভূতাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ও পরবর্তীতে উপ-পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া ও রংপুরের খালাশপীর কয়লাক্ষেত্রের আবিস্কারক ভূতত্ত¡বিদদের অন্যতম ছিলেন ও খনি দুটির উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়নে পরামর্শক ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন পদ্ধতি নির্ধারনের জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং বেঙ্গল বেসিনের স্তরতাত্ত্বিক মূল্যায়ন জাতীয় কমিটির সদস্য ও ভূতাত্ত্বিক হিসেবে জার্মান ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বঙ্গোপসাগরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে অংশগ্রহণ করেন।

প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিষয়ে বিএসসি (সম্মান) ও ১৯৮২ সালে এমএসসি (প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান) ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ সরকারের বৃত্তিতে ১৯৮৯ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধান পদ্ধতি বিষয়ে এমএসসি (এক্সিলেন্ট গ্রেড) এবং ২০০২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড়পুকুরিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম কয়লা খনির ভূতাত্তি¡ক ও স্তরতাত্ত্বিক বিষয়ে পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য, পুণ্ড্র বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রাইম মেডিক্যাল কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেজ গভর্নিং বডির সদস্য, সেন্ট্রাল সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, রাবি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণ কমিটির আহবায়ক/সমন্বয়ক ও রাবি গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসহ অন্য কয়েকটি উচ্চশিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, ভূতত্ত ও খনিবিদ্যা এলামনাই এসোসিয়েশন, রাজশাহী কলেজ এলামনাই এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভূতাত্তি¡ক সমিতি, নেপাল জিওলজিক্যাল সোসাইটি, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর এডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স, ভারতের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স একাডেমি, ব্রাজিলের এসোসিয়েশন অব জিওসায়েন্টিস্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এর সদস্যসহ অন্য বেশ কয়েকটি পেশাজীবী ও গবেষণা সংস্থার সদস্য।
প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ১৯৬১ সালে নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা’য় এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যার জনক। তাঁর সহধর্মিনী প্রফেসর শম্পা রেজিনা শিরীন রাজশাহী কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। তাঁর শ্বশুর জয়নাল আবেদীন একজন ভাষা সংগ্রামী, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৩ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তাঁর মেজো ভগ্নিপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলী রাজশাহী অঞ্চলে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।
আরো পড়ুন,
বাংলাদেশ জলবায়ু বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২১
৫৭০ টাকা নিয়ে ঢাকায় আসা ছেলেটা এখন বি.সি.এস ক্যাডার
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকা নিতে লাগবে ইউনিক আইডি