শ্যাডো নিউজঃ ২০০৬ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। সেবার মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেলেও পরবর্তীতে সুপারলিগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে পঞ্চম হয়ে দেশে ফিরেছিল। এরপরে বেশ ক’বছর যুব বিশ্বকাপে সাফল্য ধরা না দিলেও ঠিক এক দশক পর ২০১৬ যুব বিশ্বকাপে মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফুদ্দিনরা মুশফিক, সাকিব, তামিমদের সাফল্যকে ছাপিয়ে যান। তবে মিরাজের নেতৃত্বে সে দল আটকে গিয়েছিল সেমিফাইনালে, দেশের মাটিতে হয়েছিল তৃতীয়। গতবার সাইফ-হাসান মাহমুদরা ফিরেছিলেন ৬ষ্ঠ হয়ে। তবে এবার আর কোনো জায়গায় আটকে যাওয়া নয়। আকবর আলি, মাহমুদুল হাসান জয্ রকিবুলরা গড়লেন ইতিহাস। পচেফস্ট্রুমের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ।
দুই দলের সবশেষ ৬ দেখায় চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ যুব দল। এই গতবছরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই ৪-১ এ সিরিজ হারায় বাংলাদেশ যুবারা। ইতিহাস গড়ে প্রথমবার যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার পথে কিউই যুবাদেরই পায় আকবর আলির দল। সেনউইজ পার্কে ফাইনালের টিকিট পেতে বাংলাদেশকে ২১২ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের জয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশের যুবারা।
এমন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২১২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি বাংলাদেশের। ৩২ রান তুলতেই সাজঘরে ফেরে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন। এরপরে দলের হাল ধরেন মাহমুদুল হাসান জয় ও তৌহিদ হৃদয়, গড়েন ৬৮ রানের জুটি। ৪৭ বলে ৪০ রান করে আউট হয়ে হৃদয় ফিরে গেলেও শাহাদত হোসেনকে নিয়ে ১০১ রানের জুটিতে দলকে ৬ উইকেটের বড় জয় এনে দেন মাহমুদুল হাসান জয়।
জয় নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন ৭৭ বলে। ১২৬ তম বলে টাশকফকে চার মেরে যুব ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন মাহমুদুল হাসান। ইনিংসে কোনো ছক্কা না মারলেও মেরেছেন ১৩ টি চার। সেমিফাইনাল-ফাইনালে টানা পাঁচটি ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির ধারা ভাঙলেন তিনি, এর আগেই তো গড়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম স্বর্ণালী এক অধ্যায়। সেঞ্চুরির পরের বলেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন, তবে শাহাদাত-শামিম এরপর সময় নেননি বেশি। শাহাদত অপরাজিত থাকেন ৪০ রানে, আকবর ৫ রানে। কিউই যুবাদের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন ক্রিস্টিয়ান ক্লার্ক, ডেভিড হ্যানকক ও আদিত্য আশোক।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬তম ওভারে ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও নিউজিল্যান্ড ১১ রান পর্যন্ত গিয়েছিল মূলত বেকহ্যাম হুইলার-গ্রিনঅলের ৮৩ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে। তার ইনিংস বাদ দিলে নিকোলাস লিডস্টোনের ৭৪ বলে ৪৪ রান আছে নিউজিল্যান্ডের, তবে বাকি গল্পটা বাংলাদেশ বোলারদের।
অবশ্য কন্ডিশনের সুবিধা পেসারদের দিয়ে কাজে লাগানোর চেয়ে স্পিনারদের ওপরই ভরসা করেছে তারা। শুরুতেই একদিক থেকে স্পিনার শামিম হোসেনকে এনেছিলেন আকবর আলি। প্রথম ব্রেকথ্রুটাও দিয়েছিলেন তিনিই। শামিমের অফস্টাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজড হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন রাইস মাইরু। প্রথম ওভারে শরিফুলের বোলিংয়ে যেটির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, নিউজিল্যান্ডের রানের জন্য সংগ্রাম এরপর অফিশিয়ালি শুরু হয়ে গেল।
৬ষ্ঠ ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড, প্রথম দুই ওভারে শরিফুলের কাছ থেকে ব্যাটে কোনও রান নিতে পারেনি কিউইরা। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে তারা তুলেছিল মাত্র ২৬ রান। বোলিংয়ে এসে প্রথম ২ ওভার মেইডেন করেছিলেন ফারগাস লেলম্যানকে, তবে সেই চাপের শিকার হয়েছেন ওলি হোয়াইট। স্টাম্পের একটু বাইরের বলটা পাঞ্চ করতে গিয়ে এজড হয়েছেন তিনি, উইকেটের পেছনে তীক্ষ্ণ ক্যাচ নিয়েছেন আকবর।
ইনিংসের পরের ধাপে ১০ ওভারে আর ২৯ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড, এবার সংগ্রাম করছিলেন লেলম্যান ও নিকোলাস লিডস্টোন। ২১তম ওভারে তাদের সংগ্রামের অধ্যায়ের ইতি টেনেছেন শামিম, অবশ্য এটি যতোটা শামিমের উইকেট, ততোটা ভাগ আছে মাহমুদুল হাসান জয়েরও। শর্ট বলে পেছনের পায়ে ভর করে টেনে পুল করেছিলেন লেলম্যান, শর্ট মিডউইকেটে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন জয়।
জেসি টাশকফ বেশিক্ষণ টেকেননি, হাসান মুরাদের ঝুলিয়ে দেওয়া বলটা মিডউইকেটে টেনে খেলতে গিয়েছিলেন জোরের ওপর। তবে বলের লাইন বুঝে উঠতে পারেননি, পুরো মিস করে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক হারিয়েছেন তার স্টাম্প।
নিউজিল্যান্ড ইনিংসের সবচেয়ে ভাল অধ্যায়টা এসেছে এরপর। লিডস্টোনের সঙ্গে বেকহ্যাম হুইলার-গ্রিনঅলের জুটি নিউজিল্যান্ডকে পিচ্ছিল পথে পায়ের নিচে একটু শক্ত মাটি এনে দিয়েছিল। দুজন মিলে ১৫ ওভার ব্যাটিং করেছেন, যোগ করেছেন ৬৭ রান। মাঝে তানজিম হাসান সাকিব বেশ কয়েকবার এজ বিট করেছেন, আবার উলটো রাকিবুলকে দুই বাউন্ডারি মেরেছিলেন হুইলার-গ্রিনঅল।
শরিফুল ফিরে এসে ফিরিয়েছেন লিডস্টোনকে, ডেথ ওভারের শুরুতেই। তার ফুলটস ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন লিডস্টোন। পরের ওভারে কুইন সুন্ডেকে বোল্ড করে নিউজিল্যান্ডকে আরেকটু ঠেলে দিয়েছিলেন হাসান মুরাদ। অবশ্য একদিক থেকে হুইলার-গ্রিনঅলের আক্রমণ চলেছেই- ৯ বলে ৭ করে ক্রিশ্চিয়ান ক্লার্ক ও ১টি করে চার-ছয়ে জোয়ি ফিল্ডের ১১ বলে ১২ রানে ফিরলেও তিনি ছিলেন শেষ পর্যন্ত। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, দুটি করে উইকেট নেন শামীম হোসেন ও হাসান মুরাদ, রকিবুল হাসান নেন ১ টি উইকেট।
আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ যুব দল।