ইয়ুথ স্কুল ফর সোশ্যাল এন্ট্রেপ্রেনারস (ওয়াইএসএসই) আয়োজিত বহুল আলোচিত অনুষ্ঠান “বিহাইন্ড দা জার্নি”র ৫৬তম এপিসোডে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেক্সটিভ সলিউশন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, শ্যাডো নিউজের প্রকাশক আবদুল্লাহ আল মামুন। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন ওয়াইএসএসই এর অপারেশনস ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর ইন্টার্ন রাইসা রিয়াজ।
ইয়ুথ স্কুল ফর সোশ্যাল এন্ট্রেপ্রেনারস (ওয়াইএসএসই) একটি সামাজিক সংস্থা যা দেশের তরুণ তরুণীদের যাবতীয় উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তা এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজের ওপর লক্ষ্য রেখেই ওয়াইএসএসই এর এই যাত্রা শুরু। বিডি ক্লিন এর মধ্যে অন্যতম।
উক্ত অনুষ্ঠানে জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন নেক্সটিভ অন্তর্ভূক্ত অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কথা বলেন। অ্যাডমিশন অ্যাসিট্যান্টের বর্তমান কার্যক্রম, শ্যাডো নিউজের পথচলা সহ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা সমূহ তিনি সাক্ষাৎকারে ব্যক্ত করেন।
পাঠকদের সুবিধার্থে ওয়াইসএসই আয়োজিত সে সাক্ষাৎকার পর্বটির উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো-
করোনাকালীন সময়:
করোনাকালীন লকডাউনে জীবন কেমন কাটছে প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লকডাউনের কারণে হেড অফিসে থেকে কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে বাসায় থেকেই কাজ পরিচালনা করতে হয়েছে। আবার, লকডাউনকে নিজস্ব উন্নয়নে কিভাবে ব্যবহার করা যায় প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিনি “২১ ঘন্টা”র একটি রুল এ বিশ্বাসী। কোন কাজে মোটামুটি পারদর্শী হতে হলে একজন মানুষকে সে কাজের পেছনে ২১ ঘন্টা ব্যয় করা উচিত। এভাবে সে কাজটি ২১ ঘন্টায় তার আয়ত্ত্বে আসবে বলে ধারণা ওনার। স্টার্টআপ চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিনও অনেক নতুন নতুন জিনিসের সাথে পরিচিত হতে হয় তাকে। ফলে তিনি এই ২১ ঘন্টার রুলটি ফলো করেন এবং এতে অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। লকডাউনে ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদেরও তিনি এই পরামর্শ দিয়েছেন।
ছাত্রজীবন:
অতিথিকে তার ছাত্রজীবনের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, লেখাপড়ার ক্ষেত্রে কলেজ পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত ডেডিকেটেড একজন ছাত্র ছিলেন। কিন্তু, তার জীবনের মোড় ঘুরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিকাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়া করেন তিনি। এখান থেকেই তার স্টার্টআপ জার্নির শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে কিছু ভিন্নধর্মী চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হন তিনি। এখানেই ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে তার ধারণা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলো। সেই থেকেই একটি সাইন্স জার্নাল বের করার উদ্যোগ নেন এই উদ্যোক্তা। তার ভাষ্যমতে, জীবনের লক্ষ্য ভিন্ন ছিলো তার। যার ফলে, অল্প লেখাপড়া করে কোনমতে পাশ করা ছিলো তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি অংশ। তবে, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত পটু। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার থেকে নিজের স্বপ্ন পূরণে আগ্রহী ছিলেন বেশী বলে অতিথি জানান।
অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কার্যক্রম:
উপস্থাপিকা অতিথির কাছে তার প্রতিষ্ঠায় তৈরি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের জনপ্রিয় ইলার্নিং প্লাটফর্ম অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট নামক একটি প্লাটফর্ম এর কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।
এ বিষয়ে নেক্সটিভ সলিউশন এর ফাউন্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থীর ৩ ধরণের জিনিস প্রয়োজন হয় যা দিতে অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট তাদের সাহায্য করে। সেগুলো হলো- Information, Preparation এবং Service। অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হলো এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ট্রেইন করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে এই সেবা দিয়ে এসেছেন তিনি।
অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট সম্পর্কে তিনি আরো জানান, এই প্লাটফর্ম এ মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য বিষয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অ্যাডমিশনের তারিখ, স্থান, যেকোন একাডেমিক সমস্যার সলুশন প্রদান করা হয়। এছাড়াও, কন্সাল্টেন্ট এর মাধ্যমে লেখাপড়া থেকে বিচ্যুত শিক্ষার্থীদের প্রেরণা দেয় হয়। এখন পর্যন্ত ১২০০ শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে পেরেছেন তারা এই ফিচারের মাধ্যমে। এছাড়াও, স্মার্টফোন অব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের ফোনে মেসেজের মাধ্যমে সব আপডেট জানিয়ে দেয়া হয় অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্টে।
উল্লেখ্য, বিগত ৪ বছর ধরে “অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ” বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের কাছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে অবস্থান করছে। বিগত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য সহায়তা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রায় ৪টি প্লাটফর্ম এর সাহায্যে অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফেসবুক, ইউটিউব, অফশিয়াল পেজ এবং অ্যাপ। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী এ সেবা গ্রহণ করছে।
নেক্সটিভ সলিউশন এর কার্যক্রম:
আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নেক্সটিভ সলিউশন এর মধ্যে ডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট সহ আরো কিছু প্লাটফর্ম এ কাজ করে যাচ্ছেন তারা। করোনা পেন্ডেমিকের সময় অনেকেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান সম্পর্কিত নতুন স্টার্টআপ লঞ্চ করতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রায়সই নানান রকম টেকনিক্যাল এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এদের। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন শিক্ষকদের একটি প্লাটফর্ম এর আওতায় এনে তারা কাজ করতে পেরেছেন। লেখাপড়া বাদেও নানারকম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার প্রদান করে থাকে নেক্সটিভ সলুশন ।
ওয়ার্ক ফর্ম হোম:
Work from home বা বাড়িতে বসে কাজ করার কন্সেপ্টটি শুরু থেকেই নেক্সটিভ সলুশনের ৭৫জন কর্মী মেনে আসছেন। তাদের কোন নিজস্ব অফিস বা আউটলেট নেই। ২০১৮ সাল থেকেই এ নিয়ম মেনে আসছেন তারা এবং অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
স্টার্টআপ কালচার:
করোনাকালীন সময়ে নতুন নতুন স্টার্টআপ গুলোর স্থায়ীত্ব নিয়ে অতিথি কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে, একটি স্টার্টআপ কে স্থায়ী করতে অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন এবং প্রতিষ্ঠাতার দূরদর্শীতা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও, করোনাকালীন সময়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা স্টার্টআপ গুলোর ওপরও স্থায়ীত্বের একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। কোন স্টার্টআপ স্থায়ী হবে এ ব্যাপারে তিনি মূল্যবান কিছু কথা বলেন। “প্রব্লেম সলভিং” স্টার্টআপ আছে যেখানে আপনার সার্ভিস এর পরিবর্তে গ্রাহক পে করতে রাজী হবে, সেসব স্টার্টআপ অত্যন্ত স্থায়ী হবে।
শ্যাডো নিউজ:
২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্টার্টআপটি আবদুল্লাহ আল মামুন স্যারের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠা। “Spread Positivity” স্লোগানটি নিয়ে তৈরি এ নিউজ পোর্টালটি কখনই কোন নেতিবাচক খবর প্রচার করে না। এখানে প্রায় ৩০টি ক্যাটাগরিতে প্রতিনিয়ত খবর প্রচার হচ্ছে যা ১০০% সত্য বলে দাবী করেন অতিথি। এ স্টার্টআপটিকে আয় করার উৎস না করে মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার উৎস হিসেবে দেখা হয়েছে। এক্ষেত্রে এটি দেশের অন্যান্য নিউজ পোর্টালগুলো থেকে একটু আলাদা বলে জানান তিনি। সাফল্য হিসেবে দেশের নিউজ পোর্টালগুলোর মধ্যে শ্যাডো নিউজ বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে।
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা:
ছাত্রজীবনে থেকে এক্সপ্লোর করতে হবে নতুন নতুন জিনিস। “পারফেক্ট টাইমিং” বলে কোন কিছু নেই। যারা সফল উদ্যোক্তা হতে চান তাদের মনোবল দৃঢ় থাকা প্রয়োজন। কোনকিছু শুরু করলে তা সাফল্যের আলো না দেখলে চেষ্টা করে যেতে হবে। রিস্ক নেয়া শিখতে হবে এবং অত্যন্ত ক্যালকুলেটিভ হতে হবে।
র্যাপিড ফায়ার রাউন্ড:
১। নিজেকে ৩টি শব্দে বর্ণনা করুন-
= স্বপ্নবান, মোটিভেটর এবং শিক্ষা প্রদান।
২। নেক্সটিভ সলুশন প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা-
= নতুন স্টার্টআপ গুলোর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়া।
৩। E-learning প্লাটফর্মগুলোর স্থায়ীত্ব কতটুকু-
= আপনার কাজে আপনাকে লেগে থাকতে হবে। নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে। কমন পথে হাটা যাবে না। এভাবেই স্থায়ীত্ব আসবে।
৪। আপনার প্লাটফর্ম এর ইন্সট্রাক্টর এর মধ্যে কী কী গুণাবলী থাকা প্রয়োজন?
= Soft skill থাকতে হবে। সৃজনশীলতা থাকতে হবে।
৫। E-learning প্লাটফর্ম তৈরিতে সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা কী?
= আপনার গ্রাহকরা কী চায় সেটা আগে বুঝতে হবে। এ ব্যাপারে ভুল হলে এটি একধরণের প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে।
৬। প্রিয় ব্যক্তিত্ব-
= মাহামুদুল হাসান সোহাগ।
৭। সুযোগ পেলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোন পরিবর্তন আনতে চান?
= শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ালেখা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এছাড়াও, ২০ বছরের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী চাকরি জীবনে চলে যেতে পারবে।
৮। দেশের তরুণদের প্রতি কোন উপদেশ-
= বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বেশী বেশী শিখতে হবে। নিজেকে অত্যন্ত দক্ষ করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ এর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আপনার অতীতের “আপনি” এবং ভবিষৎ এর “আপনি” এর মধ্যে কোন ইতিবাচক পার্থক্য খুজে পেলেই আপনি সফল।
প্রশ্ন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ স্টার্টআপ জয়েনের ক্ষেত্রে কী কী criteria থাকা জরুরী?
উত্তর- ডেডিকেশন অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও নিজেকে ডেভেলপ করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। এসব বাদে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই।
আরো পড়ুন,
নীরজ চোপড়া এখন ভারতের সোনার ছেলে
অবসান হোক ভয়াল পারমাণবিক যুগের
করোনা-পরবর্তী মার্কেটিং : অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান