বিদ্যুৎ শক্তির অন্যতম একটি রূপ। একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সঞ্চালক ব্যবস্থা হলো বিদ্যুৎ। অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা এই বিদ্যুৎ খাতে নতুন দিগন্ত যোগ করেছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। সফলভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর বৃহঃস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫ টা থেকে বিসিপিসিএল এর প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।চলতি বছরের গত ১৩ জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরীক্ষামূলকভাবে সিনক্রোনাইজ করা হয়েছিল।
বিসিপিসিএল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের সমান অংশীদারত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিসিপিসিএল এর ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীর পায়রায় প্রায় ৯৮৩ একর বরাদ্দকৃত জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়।
এটি দেশের সবচেয়ে বড় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাস্তবায়নের জন্য সেখানকার ১৩২ টি জেলে পরিবারকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণসহ বিসিপিসিএল নির্মিত নতুন আবাসনে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দুই ইউনিটবিশিষ্ট।প্রতিটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট।২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎসহ মোট ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা নিয়েছিল ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সেই পরিকল্পনারই একটি অংশ। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন এবং কয়লা আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ করোনা পরিস্থিতিতেও বিসিপিসিএলের কার্যক্রমকে স্বাগত জানান এবং বলেন,”উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা প্রতিশ্রুত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে আন্তরিকভাবে কাজ করছি।” এসময় তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসময়ে সকলকে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করতে অনুরোধও করেছেন।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পটুয়াখালী সদর হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় নির্মিত ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে যুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ আসবে জাতীয় গ্রিডে। বাণিজ্যিক উদ্যোগে কয়লা চালিত আল্টা সুপার ক্রিটিকাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মধ্যে এটিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আসলো।
উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য হতে ইউনিট প্রতি (এক কিলোওয়াট) ০.৩ পয়সা কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসেবলিটি (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় জনকল্যাণে ব্যয় করার জন্য রাখা হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২২,৭৮৭ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ৯৬%। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী সর্বোচ্চ উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ প্রায় ১২,৯৮৭ মেগাওয়াট ৷ প্রতিবছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি অনুসারে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা দাঁড়াবে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে ৷