একটি প্রশ্ন যা অনেক দিন থেকে অনেককেই অনেক ভাবিয়ে আসছে। প্রশ্নটি হল, যদি মহাবিশ্বে এত বিশাল পরিমাণে গ্রহ থেকেই থাকে তাহলে এখনও পর্যন্ত আমরা কেন মহাবিশ্বের আর কোথাও কোন প্রাণের অস্তিত্ব পেলাম না? এই প্রশ্নটিকে ফার্মি প্যারাডক্স হিসেবেও অনেকে জানে। বিজ্ঞানীদেরকে প্রতিনিয়তই এই প্যারাডক্সটি ভাবিয়ে চলেছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে প্রমাণ মিলবে ভিনগ্রহে জীবের অস্তিত্ত্ব!
পৃথিবী থেকে একশ-এগার আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহে পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনায় আশাবাদী হয়ে উঠেছে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। কোনো নক্ষত্রের বাসযোগ্য দূরত্বের কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেল এই প্রথম। অর্থাৎ সূর্যের সঙ্গে যেমন দূরত্ব রেখে পৃথিবী ঘুরছে, ওই গ্রহটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, তাদের তুলনামূলক দূরত্বও তেমন। ফলে পৃথিবীতে যেমন প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে, ঐ গ্রহটিতেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকার বাস্তব পরিবেশ রয়েছে।
পৃথিবী থেকে ৬৫০ মিলিয়ন মিলিয়ন মাইল দূরত্বের কে২-১৮বি নামে গ্রহটিতে পানি পাওয়ার খবর বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার অ্যাস্ট্রনমিতে এসেছে। তবে গ্রহটিতে আদৌ প্রাণে বিকাশ ঘটেছে কি না বা পৃথিবীর সঙ্গী আর কোনো গ্রহ রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে লাগবে আরও অন্তত ১০ বছর।
এই সময়ের মধ্যে নতুন স্পেস টেলিস্কোপ আবিষ্কার হবে, যা দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রাণের উদ্ভব ঘটানোর মতো গ্যাস ওই গ্রহটিতে রয়েছে কি না!
বিজ্ঞানীরা বলছেন, “এই প্রথম আমরা এমন গ্রহে পানির সন্ধান পেলাম, যেটি তার নক্ষত্রের বাসযোগ্য অংশে রয়েছে। যেখানকার তাপমাত্রা প্রাণের অস্তিত্বের জন্য সম্ভাবনাময়।”
নক্ষত্রের এই বাসযোগ্য অংশের মানে হল সেই অঞ্চলটি, যেখানে তাপমাত্রা এমন থাকে যাতে পানি তরলকারে কোনো গ্রহের পৃষ্ঠদেশে থাকতে পারে। এ গ্রহটির বিষয়ে আরও জানতে হাবলের চেয়ে আরও আধুনিক টেলিস্কোপ আবিষ্কারের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
The planet K2-18b
বিজ্ঞানে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এবং আমরা সবসময় রোমাঞ্চিত হই এই ভেবে যে মহাবিশ্বে প্রাণ শুধু কি আমাদের পৃথিবীতেই আছে? কিন্তু আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমরা জানব, এমন কোনো রাসায়নিক কি রয়েছে, যা অন্য গ্রহেও প্রাণ সৃষ্টিতে সক্ষম।
এই গবেষক দল হাবল স্পেস টেলিস্কোপে ২০১৬ ও ১০১৭ সালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে কে২-১৮বি গ্রহে পানির সন্ধান পেয়েছেন। গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে পানির ভাগ ৫০ শতাংশ; আর পানির গঠন পৃথিবীর পানির অনুরূপ। এই গ্রহটির আকার পৃথিবীর দ্বিগুণ। এর তাপমাত্রা শূন্য থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
এ সম্ভাবনময় আবিষ্কার যেন আমাদের সেই প্রশ্নের উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে নিয়ে এসেছে- পৃথিবী কি একা?