উন্মুক্ত করে দেয়া হলো দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে । সেই সাথে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন যুগে প্রবেশ করল যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেকদিনের স্বপ্নের। আজ সকাল ১০.৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন এ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে পদার্পণ করলো। এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে শুরু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে।
ভ্রমণ সময় কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আরামদায়ক ও নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর চার কিলোমিটার মঙ্গলবার ২৬তম স্প্যান বসানোর পর ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানের এ এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে। এর ফলে মাত্র ২৭ মিনিটেই ঢাকা থেকে মাওয়ায় যাওয়া যাবে।
এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে রয়েছে দুটো টোল প্লাজা। যানবাহনসমূহকে নির্ধারিত টোল প্রদান করে এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হবে।
দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করেছে। এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতের চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটিতে মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দুটি এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়েটি দুটো অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ ঢাকার যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা থেকে শুরু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত,যা ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং অন্য অংশ পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত,যা ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
স্থানীয় ও ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে দুটি পরিষেবা লেন রাখা হয়েছে যাতে দ্রুত যানবাহনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় চলাচল করতে পারে এবং এইভাবে দীর্ঘপথের যাত্রীদের ভ্রমণের সময় হ্রাস করতে পারে।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হল- আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে।
৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ রয়েছে এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৩ মিটার ধলেশ্বরী, ১৫৯১ মিটার ধলেশ্বরী, ২৪৬৬ মিটার আড়িয়ালখাঁ এবং ১৩৬ মিটার কুমার সেতু।
আন্তর্জাতিকমানের এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ৬ জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার মানুষ উপকৃত হবেন।
এ হাইওয়েতে আগামী ২০ বছরের জন্য ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের পরিমাণ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ১১০০৩ দশমিক ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে ২০১৬ সালে চারটি জেলা- ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুন মাসে। নির্ধারিত সময়সীমার ৩ মাস আগে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ উদযাপন শুরুর প্রাক্কালে এক্সপ্রেসওয়ে ট্রাফিকের জন্য উন্মুক্ত করা হল। এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে দেশের এক তৃতীয়াংশ উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।