ঘড়ির কাঁটায় তখন ১২ টা বেজে ৫৩ মিনিট। সংগঠক, সমর্থক, স্টেডিয়ামে থাকা দর্শক, খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফসহ পুরো বাংলাদেশ তখন মিলে মিশে একাকার। ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের এ যেন এক ঐতিহাসিক অপেক্ষা। ম্যাচের(৪র্থ ইনিংস) ৬৪ তম ওভারে বলে এলেন এনামুল হক জুনিয়র। প্রথম বলটিতে কোনো রান নয়, ডটবল। উপচে পড়া গ্যালারিতে একটি ডটবলও যেন তখন মন ভরাতে পারল না। পরের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে ব্যাটসম্যান ক্রিস্টোফার এমপফু সিলি পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেললেন। আশরাফুল সে সুযোগটি মিস করেননি। গ্যালারিতে থাকা দর্শকরাও সেদিন প্রথম টেস্ট জয়ের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস করার সুযোগটা মিস করেনি। নিজেদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ৩৫ তম ম্যাচে এসে প্রথম টেস্ট জয়। আগের ৩৪ টির মধ্যে ৩১ টিতেই হার, ৩ টিতে ড্র। টেস্ট অভিষেকের পর প্রায় ৪ বছর পর টেস্ট জয়। তাই এ জয় বাড়তি উচ্ছ্বাস,উন্মাদনার হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
২০০৫ সালের আজকের এই দিনে(১০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয় লাভ করে। ক্রিস্টোফার এমপফুকে আউট করে যিনি জয় নিশ্চিত করেছিলেন সেই এনামুল হক জুনিয়রই হয়েছিলেন সে ম্যাচ জয়ের নায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিয়েছিলেন ৬ টি উইকেট। তবে ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে পার্শ্বনায়ক ছিলেন অনেকে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ থেমেছিল ৪৮৮ রানে। তবে স্কোরবোর্ডে এত রান তোলা স্বত্ত্বেও সেঞ্চুরি ছিল না কোনো ব্যাটসম্যানের। মাত্র ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার(৯৪)। আর সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে থেকে আউট হয়েছিলেন রাজিন সালেহ। ওপেনার নাফিস ইকবাল করেছিলেন ৫৩ রান। ফিফটি পেয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিকও। ৬ চার আর ৪ ছক্কায় করেছিলেন ৬৯ রান। আর ১ রানের জন্য ফিফটি মিস করেছিলেন উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট। শেষদিকে মাশরাফিও খেলেছিলেন ৪৪ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো এক ইনিংস।
জবাবে মোহাম্মদ রফিকের স্পিন ঘুর্ণিতে জিম্বাবুয়ে থামে ৩১২ রানে। রফিক নেন ৫ টি উইকেট। জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭১ রান করেছিলেন এলটন চিগুম্বুরা।
২য় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেই আগের ইনিংসে ফিফটি করা নাফিস ইকবাল শূণ্য রানে ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নে। আরেক ওপেনার রাজিন সালেহও বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারলেন না। এরপরের ছোট ছোট জুটিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশের ২য় ইনিংস। হাবিবুল বাশার এ ইনিংসেও তুলে নেন অর্ধশতক। ৫২ তম ওভারে এসে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে তখন ২০৪ রান আর ৩৮০ রানের বিশাল লিড।
এর পরের গল্পটা সবার জানা। শেষ ইনিংসে ৩৮১ রানের টার্গেটে মাত্র ১৫৪ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ম্যাচের পঞ্চম দিনে মাসাকাদজা আর টেইলরের ৫ম উকেট জুটিতে ৭০ রান একটু অপেক্ষায় বাড়িয়েছিল আরকি। এরপর বাংলাদেশ পায় ২২৬ রানের ঐতিহাসিক জয়। তবে টেস্ট জয়ের সেই আনন্দ এই ২০ বছরে এসেছে মাত্র ১৪ বার। প্রথম টেস্ট জয়ের মতোই দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৪ বছর। নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি থাকলেও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স বড্ড বেমানান।
তবে আশা রাখি, স্বপ্ন দেখি- ওয়ানডের মতো একদিন নিশ্চয় বাংলাদেশ টেস্টেও নিয়মিত দাপট দেখাবে। সাদা জার্সির পিছনে লাল/সবুজ রঙ-এ লেখা নামগুলোও নিশ্চয় বিজয়ীর বেশে জ্বলজ্বল করবে।