প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) বিইউপির পক্ষ থেকে মোট ৫০ লাখ টাকার অনুদান চেক ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
করোনাভাইরাসের কারনে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশে ও অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। জেলাগুলো লকডাউনে সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে দেশের সর্বত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ১২৩১+ এর অধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। দেশের এই পরিস্হিতিতে দেশের খেঁটে খাওয়া মানুষেরা সবথেকে বিপদে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। এমন সঙ্কট পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ইতোমধ্যে এমন অসহায় শ্রেণি-পেশার মানুষদের জন্য ত্রাণ তহবিলে র সাহায্যের ঘোষনা দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিতায় দেশের বিভিন্ন সংস্থা, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী সহ অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারকে সহযোগিতা করার ঘোষনা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বলেন-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সব শ্রেণির মানুষ এবং অর্থনীতি রক্ষায় আমরা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা র ঘোষণা দিয়েছি। ‘যাতে এই করোনাভাইরাসের সময়টা পার করে আপনারা আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু চালাতে পারেন। এতে সব শ্রেণির মানুষ সুবিধা পাবে।’ তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এবং সেই সুযোগটা সৃষ্টির জন্যই আমরা ৩ বছর মেয়াদি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছি। আশা করি আমরা এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ- আমাদের দিনমজুর, কামার-কুমার, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী- প্রত্যেকের কথাই আমরা চিন্তা করেছি। প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছি। সব শিল্প-কলকারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে চালু থাকে সে দিকটাও বিবেচনা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, “আজকের যে অর্থনৈতিক মন্দা তা বিশ্বব্যাপীই দেখা দেবে, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেজন্য বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করতেই আমরা খাদ্য উৎপাদনে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। গরিব মানুষের জন্য আমরা যে সহায়তা দেব কেউ এর অপব্যবহার করবে, এটা আমরা বরদাশত করব না। এই অপকর্ম করলে তাদের বিরুদ্ধে দলমত বিবেচনা না করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সে আমার দলেই হোক বা অন্য দলেরই হোক, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ দেয়া নিয়ে কয়েকটা জায়গায় সমস্যা পেয়েছি। আমরা যদি তুলনা করি আমাদের প্রায় ৬৮ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। চার হাজারের ওপর ইউনিয়ন, এরপর উপজেলা রয়েছে। সব হিসাব করে দেখা গেল যে, হয়তো ৫-৭ জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। আমরা সেটা কার্যকর করে যাচ্ছি। চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশ দিয়েছি। তারাও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সরকারিভাবে যা দেয়া হচ্ছে, তার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যে যতটুকু পারছেন সাহায্য করে যাচ্ছেন। ’
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষকে যেমন বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি, তেমনি ১০ টাকা কেজি মূল্যে ওএমএস’র মাধ্যমে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। যারা তালিকার বাইরে রয়েছে তাদের জন্য আমরা কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি মানুষ যেন সহায়তাটা পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রত্যেকের ঘরে এই ত্রাণ সহযোগিতাটা পৌঁছে যায়। রাতে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে কেউ ভিড় না করেন। একসঙ্গে জড়ো না হয়। নতুন করে কেউ যাতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাভাইরাস আসার পর অর্থনৈতিক গতিধারা কিছুটা শ্লথ হয়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাসে সমগ্র বিশ্ব বলতে গেলে স্থবির হয়ে আছে। আবারও সবাইকে সচেতন থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, মানুষকে সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষিত করতে হবে। সে কারণে আহ্বান জানিয়েছি- পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকুন। কিন্তু বাইরের লোকের সঙ্গে মিশবেন না। যেখানে লোক সমাগম সেখানে না যাওয়া, নিজেকে সুরক্ষিত করা এবং নিজেকে সুরক্ষিত করার সঙ্গে সঙ্গে অপরকেও সুরক্ষিত করতে হবে। সেই দায়িত্ব সবাইকে পালন করতে হবে। আমি জানি এটা অনেকের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটা করতেই হবে।
বিইউপি এর উপাচার্য জানান-
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান অনুদানের চেক প্রদান করেন। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ছাড়া প্রত্যেকের এক দিনের বেতনের টাকা নিয়ে এই অনুদান দেয়া হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকেও করোনা মোকাবেলায় আগামীতে সহযোগিতা প্রদান করার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস করোনা সংকট মোকাবিলায় ত্রাণ তহবিলে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সকল কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান।
চেক হস্তান্তরের সময় বিইউপির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আবুল কাশেম মজুমদারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। চেক হস্তান্তরের সময় বিইউপির উপাচার্য বর্তমান পরিস্থিতিতে বিইউপি কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে বিস্তারিত জানান। বাংলাদেশে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেনালস (বিইউপি) এর উপাচার্য করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যে অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর সব গৃহিত সিদ্ধান্তে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে ৩৩প্রতিষ্ঠান
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদান : অনুষ্ঠানে ৩৩ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে নগদ অর্থ ও পিপিই প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এসব অনুদান গ্রহণ করেন।
আর্থিক অনুদান প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি (ইটচ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কাশেম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এমএ কাশেম, সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম, বাংলাদেশ ফরেইন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশন, ইন্সটিটিউশন্স অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি), ঢাকা ক্লাব, বিএসআরএম গ্রুপ, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, উত্তরা গ্রুপ, টেক্সকোটেক, হামদর্দ ফাউন্ডেশন, গান বাংলা, শাওমি টেকনোলজিস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্পাহানি টি লিমিটেড, সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স, আইডিইবি, ইইডি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে পিপিই প্রদান করে ওলিলা গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং জাহাঙ্গীর আলম সরকার। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত ছিলেন। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ দেন। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় এর আগেও কয়েকটি ধাপে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করে।
দেশের এই অবস্থায় জীবনযাপন যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে ভয়ানক আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন “মানুষের সচেতনতা ও যার যার অবস্হান থেকে যথাসাধ্য সহযোগীতার মাধ্যমেই এই করোনা মোকাবেলা এবং এই সৃষ্ট সংকট কাটিয়া ওঠা সম্ভব।”