বহুব্রীহি একটি অনলাইন ট্রেনিং মার্কেটপ্লেস। যা দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্ম-উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কোর্স সরবরাহ করে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ইয়ানুর ইসলাম পিয়াশ এবং গালিব হাসান খান প্রতিষ্ঠা করেছেন এই প্ল্যাটফর্মটি। তারা উভয়ই একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে আগ্রহী ছিল যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনলাইন কোর্সে অংশ নিয়ে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে নিজেদের তুলনামূলক উন্নত অবস্থানে নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন এবং সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে পারবে।
বহুব্রীহি ‘র শুরুর যাত্রা:
২০১৬ সালে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষে থাকতে ইয়ানুর ইসলাম পিয়াশ ও গালিব হাসান খান বহুব্রীহি নিয়ে কাজ শুরু করেন। টিউশনির জমানো টাকা ও বুয়েটের একজন সিনিয়রের বিনিয়োগে আস্তে আস্তে বহুব্রীহি গড়ে উঠতে থাকে। ২০১৮ সালের মে মাসে তারা পূর্ণাঙ্গ অনলাইন কোর্স মার্কেটপ্লেস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বহুব্রীহি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইয়ানুর ইসলাম পিয়াশ বলেছেন, “আমরা বিদেশী অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এডেক্স এবং কোর্সেরার থেকে অনেকগুলো কোর্স করতাম, “আমরা এক্সেল, ডেটা সায়েন্স এবং ব্যবসায়ের মৌলিক উপাদানগুলোর মতো জিনিস শিখেছি। আমরা অনুরূপ কোর্স বাংলায় চালু করতে চেয়েছিলাম। ” বিদেশী কোর্সগুলো ক্রেডিট অফার করে যা শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দ্বারা অনুমোদিত হয় এবং তারা তাদের সার্টিফিকেট সরবরাহ করে যা শিক্ষার্থীরা তাদের সিভিতে যোগ করতে পারে।
বহুব্রীহিকে অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির থেকে আলাদা করে তুলে তা হলো তারা বহুমাত্রিক কোর্স সরবরাহ করে যা কেবল শিক্ষার সাথে নয় শখ এবং ব্যবসায়ের সাথেও সম্পর্কিত। তবে বহুব্রীহি শুরু করার যাত্রা অবশ্যই কোনও মসৃণ ছিল না। ওয়েব ডেভেলপারদের সম্মানী দেওয়ার জন্য তাদের অর্থ ছিল না। সুতরাং, তারা ওয়েবসাইটগুলি কীভাবে তৈরি করবে তা শিখেছে। তাঁরা একটি ছোট বাজেটের সাথে ওয়েব ডোমেনগুলি কিনেছে। খুব দ্রুতই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের মাঝে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি এটি গ্রামীণফোন এক্সেলারেটরের ২.০-এর দুই মাসব্যাপী প্রি-এক্সেলারেটর প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে।
বহুব্রীহি কোর্সসমূহ:
কোর্সগুলো মূলত ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি উপযুক্ত। কোর্সগুলো বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বানানো হয়ে থাকে; আবার ফ্রিল্যান্স এক্সপার্টদের সহায়তায়ও বানানো হয়ে থাকে। বহুব্রীহির কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে পাইথন প্রোগ্রামিং, মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট, মাইক্রোসফট এক্সেল, ওয়ার্ডপ্রেস, লারাভেল, সলিডওয়ার্কস, উকমার্স, তড়িৎ বর্তনী, ইইই ভর্তি প্রস্তুতি, অটোক্যাড এবং অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরসহ অন্যান্য অনলাইন কোর্স। এই কোর্সগুলো যে কোনো অফলাইন ট্রেনিংয়ের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি সাশ্রয়ী। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন কোর্স যুক্ত করা হচ্ছে।
বহুব্রীহির নেতৃত্বে:
বহুব্রীহির টিমে রয়েছেন ইয়ানুর ইসলাম পিয়াশ (CEO), গালিব হাসান খান (CFO), শাহরিয়ার হোসাইন নাফিস, তামজিদুল আলম, তাহসিন ইসলাম এবং ফাহিম আবিদ অর্ণব। তারা সবাই বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
গালিব হাসান খান (CFO) ইয়ানুর ইসলাম পিয়াশ (CEO)
যেভাবে বহুব্রীহি কার্যক্রম করে থাকে:
শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি কোর্সে থাকবে লাইফ-টাইম এক্সেস এবং সেলফ পেসড লার্নিং সুবিধা। অর্থাৎ যে কেউ কোর্সে এনরোল করার পর যখন ইচ্ছা তখন কোর্সের ম্যাটেরিয়ালগুলো থেকে শিখতে পাবেন। আজীবনের জন্য কোর্সের এক্সেস তাদের কাছে রয়ে যাবে। প্রতিটি কোর্সে প্রয়োজনীয় রিসোর্স সরবরাহ করছেন তারা, থাকছে অনুশীলন সমস্যা, সার্ভে। এ ছাড়া কোনো সমস্যায় সেটি সমাধানের জন্য রয়েছে ফোরাম এবং লাইভ ভিডিও সাপোর্ট; যেখানে সরাসরি কোর্সের ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যায়। কোর্স শেষে প্রদান করা হচ্ছে সার্টিফিকেট। বাংলাদেশে তারাই একমাত্র দিচ্ছেন অনলাইনে ‘Accredited Course‘-এর সুবিধা। বহুব্রীহির অসাধারণ একটি ব্লগ সেকশন রয়েছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। এ ছাড়াও তাদের ফোরাম এবং ফেসবুক গ্রুপে যে কোনো সমস্যার মিলবে তাৎক্ষণিক সমাধান।
বহুব্রীহি কোর্স বানানোর প্রতিটি পর্যায়ে ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নেয় যাতে কোর্স কন্টেন্টের মান ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। বহুব্রীহি ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষকরা বিভিন্ন বিষয়ে নতুন কোর্স তৈরিতে তাদের দক্ষতা ব্যবহার করেন, যা তাদের নিয়মিত পাঠ্যক্রমের বাইরে শিক্ষার্থীদের নতুন জিনিস শিখতে সহায়তা করতে পারে। কোর্সগুলির জন্য অর্থ প্রদান বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে করা হয়। যাদের ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেই তারা ডিভিডির মাধ্যমে কোর্সগুলি অর্জন করতে পারবেন। তাদের ভিডিওগুলি ভিমেও হোস্ট করেছেন।
বহুব্রীহির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
বহুব্রীহির মূল উদ্দেশ্য হলো সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানো, দেশে বেকারত্ব দূর করা, দক্ষ জনবল তৈরি করা, আত্ম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
বহুব্রীহি এর মাধ্যমে শিক্ষানবিশরা তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো শিখতে, তাদের পছন্দসই কাজগুলি অনুসরণ করতে, তাদের পছন্দসই জিনিসগুলি তৈরি করতে পারবে। মেন্টরদের গাইডলাইনগুলো তাদের ভবিষ্যতের অভিজ্ঞতা এবং পোর্টফোলিও পেতে সহায়তা করবে। অনলাইন কোর্সগুলি কেবলমাত্র ব্যক্তি নয়, বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা থেকে আসবে- বাংলাদেশের জনগণকে সর্বোত্তম মানের শিক্ষা এবং স্বীকৃতি প্রদানের জন্য। বহুব্রীহির প্রধান লক্ষ্য হলো ২০২২ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়ন মানুষকে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।