জাতীয় অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী আর নেই। আজ মঙ্গলবার ভোররাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তার ভাগ্নি শেনিন জিয়াউদ্দিন জানিয়েছেন, সোমবার রাতে অধ্যাপক চৌধুরী ঘুমাচ্ছিলেন, কিন্তু পরিবারের সদস্যরা ডাকলে দীর্ঘ সময় তিনি সাড়া দেননি।এরপর পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে এক পর্যায়ে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিজ শেনিন জিয়াউদ্দিন জানিয়েছেন, ঘুমের মধ্যেই তিনি মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।রাত ২টার দিকে ঘুমের মধ্যে ‘ম্যাসিভ হার্টঅ্যাটাক’ হয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর।ভোর ৪টার দিকে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে যান এই অধ্যাপক।সাম্প্রতিক সময়ে তার কোন অসুস্থতা ছিল না বলে জানিয়েছে পরিবার।
জামিলুর রেজা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। আজ বাদ জোহর জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।জামিলুর রেজা চৌধুরী সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশের প্রকৌশল জগতে সবার পরিচিত নাম। একাধারে তিনি গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ছিলেন।
তাঁর জন্ম ১৯৪৩ সালে, সিলেটে। তাঁর বাবা আর ভাইসহ পরিবারের অনেক সদস্যই প্রকৌশলী ছিলেন। বড় হয়ে তাঁর বাবা ও ভাইদের মতো তিনিও বেছে নেন এই পেশা।
স্বাধীনতার পর এ দেশে যত বড় বড় ভৌত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটির সঙ্গেই জামিলুর রেজা চৌধুরী কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে। হাত দেন পদ্মা সেতু নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞে।
জামিলুর রেজা চৌধুরী একসময় যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ডাক পেয়েছিলেন বিখ্যাত আরেক বাংলাদেশি প্রকৌশলী এফ আর খানের কাছ থেকে।
দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অবদানের জন্য সমাদৃত জামিলুর রেজা চৌধুরীর প্রায় ৭০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার আর সম্মাননা। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট স্বর্ণপদক, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে পাওয়া সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি।
একসময় বুয়েটে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও। উপাচার্য ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির।
এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনের সফটওয়্যার রফতানি এবং আইটি সার্ভিস রপ্তানি-সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি টাস্কফোর্সের একজন সদস্য ছিলেন।যমুনা এবং পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়ার সঙ্গেও মি. চৌধুরী ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে আর্থকোয়েক সোসাইটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অনেক দিন ধরে।
এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিলেন প্রয়াত শিক্ষাবিদ ও প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী।
আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে ওই সময় উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের অপসারণও দাবি করেছিলেন তিনি।
গত বছরের অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।
এ ঘটনার পর নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বুয়েটসহ ফুঁসে ওঠে পুরো দেশ। আবরার হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামে বুয়েট অ্যালামনাই।সেই সময় বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি হিসেবে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন।