শ্যাডো নিউজ: বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) হচ্ছে দেশের প্রথম নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান।যার লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমের তরুণদের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলা, এবং সঠিক নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সরকারি, বেসরকারি এবং বিভিন্ন অলাভজনক খাতে কাজ করতে যোগ্য করে গড়ে তোলা।এর সাথে সারা বিশ্বের সমাজব্যবস্থায় সমৃদ্ধি, ন্যায়বিচার, এবং সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
আমাদের দেশের তরুণ প্রজম্মের মধ্যে তিন ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
(১) বাংলা মিডিয়াম,ইংরেজি মিডিয়াম,মাদরাসা মিডিয়াম এই তিনটি মাধ্যাম করে স্কুল,কলেজ থেকে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।এক মিডিয়ামের শিক্ষার্থী অন্য মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের সাথে সহজে মিশতে পারে না।যার ফলে নেতৃত্ব,পারস্পরিক যোগাযোগ বাধাগ্রস্থ হয়।
(২)গতানুগতিক চিন্তন দক্ষতার বাইরে ভাবার সংকীর্ণতা।যার ফলে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে চিন্তা করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
(৩) বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অন্যের ওপর নির্ভরতা।প্রধানত যার মূল কারণ নেতৃত্বদানে অনীহা।
এই তিনটি চ্যালেঞ্জের প্রতি বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) প্রতিক্রিয়া ছিল তাদের নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ (বিবিএলটি) প্রোগ্রামের মাধ্যমে সেতুবন্ধন।এটি একটি ১০-সপ্তাহের কোর্স, যেখানে তিনটি বিবিধ শিক্ষাব্যবস্থার ১৭ থেকে ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব, সমস্যা সমাধান এবং যোগাযোগের বিষয়ে শেখার প্রথম ছয় সপ্তাহ শ্রেণিকক্ষে ব্যয় করে। নিম্নলিখিত চার সপ্তাহের মধ্যে, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রকল্পগুলি ডিজাইন করে প্রয়োগ করে তাদের শিক্ষাকে কাজে লাগানোর করার সুযোগ পায়।
১০ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন তিন ঘন্টা এই কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাহস, মমতা এবং দক্ষতা বিকাশ করে — এমন তিনটি মূল ক্ষমতা যা কার্যকর নেতৃত্বের অনুশীলনের কেন্দ্রবিন্দু।
বিবিএলটি পরে, ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য বিবিএলটি জুনিয়র প্রোগ্রাম চালু করেছে। কোর্সের সময়কাল ছয় সপ্তাহ এবং এটি বিবিএলটি স্নাতকদের জন্য ফিরে আসার এবং একটি অল্প বয়স্ক শ্রোতাদের নেতৃত্ব শেখানোর সুযোগ দেয়।বিবিএলটি জুনিয়র প্রোগ্রামের সাথে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) কিছু উদ্দেশ্য পূরণ করতে চেয়েছিলো।
যার প্রথমটি ছিল নেতৃত্ব এবং সক্রিয় নাগরিকত্বের মানগুলিতে শিশুদের সংবেদনশীল করা।এবং দ্বিতীয়টি হল আমাদের প্রাক্তন ছাত্রদের একটি অল্প বয়স্ক দলের সুবিধার্থী এবং প্রশিক্ষক হিসাবে ফিরিয়ে এনে প্রজম্মের পরিবর্তনকে জাগিয়ে তোলা।
এই দুটি স্বাক্ষর কোর্স ছাড়াও, কয়েক বছর ধরে, বিওয়াইটিসিএল আরও কয়েকটি প্রোগ্রাম শুরু করেছে। আর্ট অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব লিডার্স (এপিএল), হার্ভার্ডে শেখানো একটি এক্সিকিউটিভ কোর্সের পরে তৈরি, তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

যেভাবে হয়েছিল শুরু:
দেশের প্রথম নেতৃত্বচর্চা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) স্থাপিত হয় ২০০৯ সালে।বিওয়াইএলসি চারমাস ব্যাপী নেতৃত্ব প্রশিক্ষন পোগ্রাম ‘ব্লিডিং ব্রিজ থ্রো লিডারশিপ ট্রেনিং’এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে । ব্লিডিং ব্রিজ থ্রো লিডারশিপ ট্রেনিং’ এর পাশাপাশি বিওয়াইএলসি বিভিন্ন পোগ্রাম এবং সম্মেলন আয়োজন করে থাকে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশীপ সেন্টার এর ধারণাটি মূলত’ জানুয়ারি ২০০৮’ হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি ইস্কুল অফ গর্ভমেন্ট’ থেকে গঠিত করা। ব্লিডিং ব্রিজ থ্রো লিডারশিপ ট্রেনিং’ পোগ্রামটি ইজাজ আহমেদ এবং সাম্মি এস কুদ্দুস যৌথ ভাবে পরিকল্পনা করেন।
ইজাজ আহমেদ এবং কুদ্দুস ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি(এমআইটি) এর আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তাই ২০০৮ সালে প্রথম ব্লিডিং ব্রিজ থ্রো লিডারশিপ ট্রেনিং’ চট্টগ্রামে শুরু করেন।বিওয়াইএলসি ২০০৮ সালের জানুয়ারী মাসে যাত্রা শুরু করে।

সে সময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র ইজাজ আহমেদ এমন একটি নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কথা চিন্তা করছিলেন যা বিভিন্ন অবস্থান থেকে উঠে আসা তরুণদেরকে নেতৃত্বের গুণাবলীর পাশাপাশি তাদেরকে তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালনেও উদ্বুদ্ধ করবে।
ইজাজ এবং তৎকালীন এমআইটি’র শিক্ষার্থী সাম্মি কুদ্দুস তখন একটি মাসব্যাপী কার্যক্রম বিল্ডিং ব্রিজেস থ্রু লিডারশীপ ট্রেনিং (বিবিএলটি)’র পরিকল্পনা করেন যা পরে ২০০৮ সালের মার্চে ক্যথ্রিন ডেভিস শান্তি পুরস্কার পায়। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাংলা, ইংরেজি ও মাদরাসা বিভাগের ৩০ জন শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে বিবিএলটি কার্যক্রমটি প্রাথমিকভাবে আয়োজন করতে সহযোগিতা করেছিল এই পুরস্কারটি।
প্রাথমিক কার্যক্রমে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর ২০০৮ সালের অক্টোবরে বিওয়াইএলসি নিজেদের পরিচালনা পরিষদ গঠন করে। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে এটি বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে একটি নির্দলীয় সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে নিবন্ধন প্রাপ্ত হয়।
এর ফলশ্রুতিতে গত দশ বছরে বিওয়াইএলসি, যা একটিমাত্র কক্ষে যাত্রা শুরু করেছিল তা বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্ব বিষয়ক সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য, স্বনামধন্য এবং আকাঙ্ক্ষিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিওয়াইএলসিএক্স:
বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) এর আধুনিক অনলাইন শিক্ষামাধ্যম বিওয়াইএলসিএক্স, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর ২৫টি কোর্স নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে।
চাহিদা ও গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এবং ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার উপযোগী করে সিরিয়াল আকারে কোর্স তৈরি করার রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইন থিস্কিং, উদ্যোক্তা, ডাটা সায়েন্স , ব্যবসা পরিসংখ্যান, অথনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং ডিজিটাল মার্কেটিং।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু এডুকেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিওয়াইএলসিএলএক্স ইতিমধ্যে চার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও ব্যবহারকারীকে বক্তৃতা এবং সহজবোধ্য ইংরেজি লেখার ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট:
গতবছর ১১ ই জুলাই, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট ২০১৯ এর আয়োজন করেছিল ষষ্ঠ বারের মতো। আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছিল।
এই শীর্ষ সম্মেলন তিন দিন আন্তঃজানা সংলাপ, নেটওয়ার্কিং এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে স্বনামধন্য বক্তারা এবং শিক্ষার্থীদের একটি নক্ষত্রকে একত্রিত করে।
এ বছর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে মোট ১৮০০ জন আবেদনকারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তরুণ পেশাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এই বছরের প্রতিপাদ্য ছিল “ঐক্যের মধ্যে শক্তি: ভবিষ্যতের রূপদান” যেখানে বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান উদ্যোক্তা এবং নেতারা একত্রিত হয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন নেতৃত্বের পথে যুক্ত করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
এটি একটি নিবিড় তিন দিনের কর্মসূচি যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ব-সচেতনতা তৈরি করে এবং নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্ব সম্পর্কে তাদের গভীর ধারণাগুলি প্রতিফলিত করতে তাদের চ্যালেঞ্জ জানায়।
