কৃষিভিত্তিক উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বিদ্যাপীঠ “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়” (বাকৃবি)। এটি ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত। কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা ত্বরান্বিত করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, আধুনিক কৃষিবিজ্ঞান চর্চা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এ বিশ্ববিদ্যালয়৷ মানসম্পন্ন উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশে কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, প্রাণিবিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলী তৈরি করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য।
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ১৯৬১ সালে ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নামে দু’টি অনুষদ নিয়ে “পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়” হিসেবে তার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’। ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে এটি এখনও মানুষের মন কেড়ে নেয়। ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১২৬১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বাকৃবি (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)। রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে এ ক্যাম্পাসের অবস্থান।
১৯৬১ সালে কৃষি ও ভেটেরিনারি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরুর কয়েক মাস পরেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়।
দৃষ্টিনন্দন এই ক্যাম্পাসে বর্তমানে ৬ টি অনুষদ, ৪৪ টি বিভাগ ও ২ টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। অনুষদগুলো হলো কৃষি অনুষদ, ভেটেরিনারি অনুষদ, পশুপালন অনুষদ, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ।এছাড়া ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে দুটো ইনস্টিটিউট আছে।
অনুষদভিত্তিক বিভাগ সমূহ
- কৃষি অনুষদঃ কৃষি অনুষদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাচীন ও প্রধান অনুষদ। এই অনুষদের বিভাগ মোট ১৬ টি। বিভাগগুলো হলো যথাক্রমে কৃষি অর্থনীতি বিভাগ, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগ, উদ্যানবিদ্যা বিভাগ, উদ্ভিদের রোগবিদ্যা বিভাগ, ফসল উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ, জেনেটিক্স এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগ, কৃষি রসায়ন বিভাগ, জীববিজ্ঞান বিভাগ, পদার্থবিদ্যা বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ভাষা বিভাগ, কৃষি বন বিভাগ, বায়োপ্রযুক্তি বিভাগ ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ।
- ভেটেরিনারি অনুষদঃ ভেটেরিনারি অনুষদ দ্বিতীয় বৃহত্তম, প্রাচীন ও প্রধান অনুষদ। এই অনুষদের বিভাগ মোট ৮ টি। বিভাগসমূহ হলো যথাক্রমে শারীরস্থান এবং তন্তুবিন্যাসবিদ্য হিস্টোলজি বিভাগ, শারীরবিদ্যা বিভাগ, অণুজীববিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিধি বিভাগ, ফার্মাকোলজি বিভাগ, পরজীববিদ্যা বিভাগ, রোগবিদ্যা বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ ও সার্জারি ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ।
- পশুপালন অনুষদঃ পশুপালন অনুষদ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষদ। এই অনুষদের বিভাগ মোট ৫ টি। বিভাগগুলো হলো পশু প্রজনন ও জেনেটিক্স বিভাগ, পশু বিজ্ঞান বিভাগ, পশু পুষ্টি বিভাগ, পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ ও দুগ্ধ বিজ্ঞান বিভাগ।
- মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদঃ মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের বিভাগ ৪ টি। বিভাগসমূহ হলো মৎস্য জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্স বিভাগ, অ্যাকক্যাকালচার বিভাগ, মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও মৎস্য প্রযুক্তি বিভাগ।
- কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীন সমাজবিজ্ঞান অনুষদঃ এই অনুষদের অধীনে রয়েছে ৫ টি বিভাগ। বিভাগসমূহ হলো – কৃষি অর্থনীতি বিভাগ, কৃষি অর্থ বিভাগ, কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ, সহযোগিতা ও বিপণন বিভাগ ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
- কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরী অনুষদঃ কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরী অনুষদের অধীনে ৫ টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগপগুলো হলো- খামার কাঠামো বিভাগ, খামার শক্তি ও যন্ত্রপাতি বিভাগ, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, খাদ্য প্রযুক্তি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগ ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিত বিভাগ।
হল সুবিধা
বাংলাদেশে যতগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার ভিতর অন্যতম বেশি সংখ্যক হল রয়েছে বাকৃবি তে। প্রায় ৭৫০০ শিক্ষার্থীদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মোট ১৩ টি হল। এর মধ্যে ছেলেদের জন্য রয়েছে ৯ টি হল এবং মেয়েদের জন্য ৫ টি।
ছেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ৯ টি হল যথাক্রমে ঈশা খাঁ হল, শাহজালাল হল, শহীদ শামসুল হক হল, শহীদ নাজমুল আহসান হল, আশরাফুল হক হল, শহীদ জামাল হোসেন হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, ফজলুল হক হল ও
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন হল ঈশা খা হল ও জামাল হোসেন হল।
মেয়েদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ টি হল যথাক্রমে সুলতানা রাজিয়া হল, তাপসী রাবেয়া হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল,বেগম রোকেয়া হল এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনা হল। এর মধ্যে শেখ হাসিনা হল বর্তমানে প্রস্তাবিত এবং প্রক্রিয়াধীন।
স্থাপনাসমূহ
বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ২০০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সম্প্রসারিত ভবন, জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জিটিআই ভবন, আবসনের জন্য হল সুবিধা রয়েছে । এছাড়াও রয়েছে ড. ওয়াজেদ মিয়া ডরমিটরী।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. লুতফুল রহমান। ৩০ মে ২০১৯ তারিখে তিনি বাকৃবি এর ২৪তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জায়গা
বাকৃবি ক্যাম্পাসে অন্যান্য স্থাপনা ও জায়গার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিনা), বাংলাদেশের একমাত্র স্বাদু পানির মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জার্মপ্লাজম সেন্টার, বোটানিক্যাল গার্ডেন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা বোটানিক্যাল গার্ডেন্স কনজার্ভেশন ইন্টারন্যাশনাল( বিজিসিআই) কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম বোটানিক্যাল, হর্টিকালচার সেন্টার।
আগামী ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছুদের জন্য রইল অগ্রিম শুভেচ্ছা। নবীনদের পদচারণায় প্রিয় এই ক্যাম্পাস আবার ভরে উঠবে এই প্রত্যাশায় সবাইকে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার জন্য শুভ কামনা।
লেখক
রিয়াদ ইসলাম
ভেটেরিনারি সাইন্স
৫৯ তম ব্যাচ