শ্যাডো নিউজঃ ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কথা মনে আছে? ঘরের মাটিতে ২৮৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে তোতসোবের সুইং আর রবিন পিটারসেনের স্পিন ঘূর্ণিতে মাত্র ৭৮ রানেই প্যাকেট বাংলাদেশ। লজ্জ্বাজনক পরাজয়, একইসাথে দুঃসহ স্মৃতি। গত বছরের বিশ্বকাপে ৮ বছর পর সে হারের প্রতিশোধ অবশ্য ইংল্যান্ডের মাটিতে নিয়েছিলো টাইগাররা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদেরকেই ধবলধলাই করা আর হয়ে ওঠেনি। সে কাজটা করে দেখিয়ে দিল জুনিয়র টাইগাররা। বাঘের গর্জনে কুপোকাত সিংহের দল।
স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বাংলাদেশ উঠে গেছে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।
২০১২ সালের পর মাত্র দ্বিতীয়বার এই কীর্তি হলো বাংলাদেশের যুবাদের। তার চেয়েও বড় কথা, দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে অনায়াসে হারিয়েছে তাতে ভবিষ্যতের জন্য বেশ কিছু আশার আলোই জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন সাকিব-তামিম-রকিবুলরা।
বাংলাদেশের যুবারা যে পরিণতিবোধ দেখিয়েছে শুরু থেকে, সেটাও প্রশংসা করার মতো। টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশকে। শুরু থেকেই দুই প্রোটিয়া পেসার সুইং আর পেসে বেশ ভোগাচ্ছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে। কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম আর পারভেজ হোসেন ইমন শুরুর কয়েক ওভার পার করে দিয়েছেন। একটু থিতু হওয়ার পর দুজন মিলে খেলতে শুরু করেছেন দারুণ সব শট। ইমন একটু বেশিই সতর্ক ছিলেন, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে এসে শেষ পর্যন্ত মোলস্টেনের বলে এলবিডব্লু হয়ে গেছেন ১৭ রানে। তবে তামিম খেলছিলেন দুর্দান্ত। বাউন্সারের জবাব দিচ্ছিলেন দুর্দান্ত সব পুলে। তবে ইমন চলে যাওয়ার পর আরেকটা হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ, প্রায় অসম্ভব একটা সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে গেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৭৩ রানে তখন ২ উইকেট নেই বাংলাদেশের।
তবে তামিম মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁর বয়সে স্ট্রোকের ডালা মেলে বসা সিনিয়র তামিম ইকবালের কথা। প্রায় ১০০ স্ট্রাইক রেটে ৫০ করেছেন, এরপর টানা তিন চারে পৌঁছে গেছেন ষাটের ঘরে। এরপর যখন মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরিটা পেয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার, তখনই অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন পয়েন্টে। ৮৪ বলে ৮০ রান করে ফিরলেন তামিম।
এরপর একটু স্লথ হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস, তবে তৌহিদ হৃদয় ও শাহাদাত হোসেন কোনো উইকেট না হারিয়ে হালটা ছেড়ে দেননি। ৪০ ওভার শেষে রান হলো ১৮০, ২৫০ করতে পারলে সেটি বাংলাদেশের জন্য বেশ ভালো স্কোর। শাহাদাত ফিফটি পাওয়ার পর বেশ আক্রমণাত্মক হলেন, একটি ছয়ও মারলেন। হৃদয় অবশ্য আগ্রাসী হতে গিয়ে আউট হয়ে গেছেন, তবে তার আগে করে গেছেন ৫১ রান। তবে শাহাদাত আর আকবর আলী শেষ কয়েক ওভারে রান করে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন ২৬১ রান পর্যন্ত। শেষ ১০ ওভারে ৮১ রান করেছে বাংলাদেশ, শাহাদাত অপরাজিত ছিলেন ৭৬ বলে ৭৪ রান করে। আর অধিনায়ক আকবর করেছেন ১১ বলে ১৬ রান।
বল হাতে শুরুটা স্বপ্নের মতো হতে পারত বাংলাদেশের, কিন্তু তৃতীয় ওভারেই শরিফুলের বলে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন উইকেটরক্ষক ও অধিনায়ক আকবর। শেষ পর্যন্ত তানজিম হাসান সাকিবের বলে ভালো একটা ক্যাচ ধরেছেন শাহাদাত, কোটানির আউটে প্রথম উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর শুরু রকিবুল স্পিন ঘূর্ণি । বার্ড ৩৫ রান করে বিপদের আভাস দিচ্ছিলেন, কিন্তু রকিবুলের বলে শামীমকে ক্যাচ দিয়ে ইনিংস বড় হওয়ার আগে ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরে যান । এরপর পারসন্সকে এগিয়ে আসতে দেখে ভেতরের দিকে বল ঢুকিয়ে বোল্ড করেছেন রকিবুল।

ওদিকে কারেলসেকে বোল্ড করে সাকিব পেয়েছেন দ্বিতীয় উইকেট, ৭৭ রানে ৪ উইকেট নেই স্বাগতিকদের। এরপরেই আসে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের সেরা মুহূর্ত। শরিফুলের বাউন্সারটা হুক করতে গিয়েছিলেন লিস, ফাইন লেগে থেকে অনেকটা দৌড়ে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত একটা ক্যাচ ধরেছেন সাকিব। আর ম্যাচের সেরা ডেলিভারিটা এরপর করেছেন রকিবুল। মোলস্টেনকে ফ্লাইট আর টার্নে বোকা বানিয়ে স্টাম্পড করেছেন, পেয়েছেন তৃতীয় উইকেট। চতুর্থ উইকেটও হয়ে গেছে খানিকক্ষণের মধ্যে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিউফোর্টই একটু চেষ্টা করছিলেন, ৬০ রানও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু রকিবুলকে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিলেন। পঞ্চম উইকেট হয়ে গেল বাংলাদেশের এই বাঁহাতি স্পিনারের, ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। ৪৫ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ উঠে গেল সেমিফাইনালে।
আগামী ৬ ফ্রেব্রুয়ারি পচেফস্ট্রুমে নিউজিল্যান্ড বিপক্ষে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।