আজ ১৭ মে, বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস । এবছরের বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, কানেক্ট ২০৩০: আইসিটি ফর দ্য সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোলস ( এসডিজি) বা সংযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনা এবং প্রযুক্তিকে সমাজ ও অর্থনীতির কল্যাণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সকলকে সচেতন করাই দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য।
প্রযুক্তিবিদদের মতে, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ফাইভজি ইন্টারনেট অব থিংস, বিগ ডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ব্লগ চেইন অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস
১৮৬৫ সালের ১৭ মে ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাফ কনভেনশন স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয় প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাফ ইউনিয়ন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাফ ইউনিয়ন ও ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রেডিও টেলিগ্রাফ ইউনিয়নের একত্রিত নাম হয় আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন বা (আইটিইউ)। আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাফ কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিই) প্রতিষ্ঠার স্মারক হিসেবে ১৯৬৯ সালের ১৭ মে প্রথম বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস পালিত হয়। ১৯৬৯ সালের পর থেকে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপি দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন বা আইটিই-এর সদস্যপদ লাভ করে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সাল থেকে ১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষ্যে এক বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “বৈশ্বিক মহামারীসহ বিশ্বের যেকোনো জরুরি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন প্রযুক্তি তথা ফাইভ জি, বিগ ডাটা, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হতে পারে শক্তিশালী হাতিয়ার।”
তিনি বলেন, “এছাড়া তথ্য প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কোটি কোটি মানুষকে সংযুক্ত করতে আশার বাতিঘর হিসেবে কাজ করতে পারে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে প্রিয়জন, স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল, স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে যোগাযোগ রক্ষা করা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য সংঘ দিবস আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়, করোনাভাইরাসসহ বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা অর্জনে তথ্য প্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।”
দিবসটি উপলক্ষে আইটিইউ মহাসচিব, হাউলিন ঝাও বলেন, বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে না। ফলে বৈশ্বিক তথ্য প্রযুক্তির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি খুবই ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। তাই সব মানুষকে বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতিতে যুক্ত করতে সমন্বিত জোরালো প্রচেষ্টা দরকার। ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা অর্জনে এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য রোধে তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।
আইটিইউ মহাসচিব, হাউলিন ঝাও বলেন, “বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে না এবং বৈশ্বিক তথ্য প্রযুক্তির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি খুবই ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। তাই সব মানুষকে বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতিতে যুক্ত করতে সমন্বিত জোরালো প্রচেষ্টা দরকার।” ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা অর্জনে এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য রোধে তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি প্রতি বছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছে।
তবে এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দিবসটি প্রতি বছরের ন্যায় পালন করা সম্ভব না হলেও অনলাইনে এবং বেতার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণার মধ্যেই দিবসটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকবে।
এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল সোমবার (১৮ মে) দুপুর দুইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করবে আইটিইউ। যেখানে প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে আগামী ১০ বছরে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয় প্রাধান্য পাবে।
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল এক বিবৃতি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর মূল উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ জীবন ও পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। সর্বস্তরের মানুষের কাছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছে দিতে সংযুক্তির কোন বিকল্প নেই। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত এই সংযুক্তির মূল চালিকা শক্তি। বর্তমান বিশ্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ডিজিটাল ব্যবধান হ্রাসে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। ক্ষুধা ও দারিদ্র থেকে মুক্তি, উন্নত স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা, টেকসই অবকাঠামো, সুপেয় পানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানী, নারীর ক্ষমতায়ন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদের সঠিক ব্যবহার, টেকসই নগর ব্যবস্থাপনা, শান্তি, ন্যয়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি, টেকসই উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করা তথা এসডিজি এর ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, “ই-কমার্স, আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, ভিডিও স্ট্রিমিং,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বর্ধিত চাহিদা পূরণকরতে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এর ধারণ ক্ষমতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ৫-জি নেটওয়ার্ক এখন সময়ের দাবী। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে ৫-জি প্রযুক্তি চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ৫জি এর জন্য টেলিকম কর্মকর্তাদের দক্ষ ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে।”
উল্লেখ্য, বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ১০ কোটির বেশি গ্রাহক। এবং মোবাইল অপারেটরদের সক্রিয় সিম রয়েছে সাড়ে ষোল কোটিরও বেশি।