শ্যাডো নিউজঃ আজ ২২ এপ্রিল, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। প্রতিবছর ২২এপ্রিল এ দিবসটি পালিত হয়। সারা বিশ্বে এ দিনটিকে বলা হয় ‘আর্থ ডে’। পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বসবাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।
এ বছরের বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘ক্লাইমেট একশন’। স্লোগানটি দিয়ে জনসাধারণকে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পরিবেশ ও জলবায়ুর গুরুত্ব বুঝানো হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে ১৯৭০ সালের পর থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ‘Environmental Protection Agency’, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে ‘Clean Air Act’, জল সংরক্ষণ করার জন্য ‘Clean Water Act’, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য গঠন করা হয় ‘Resource Conservation and Recovery Act’। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, সারা বিশ্বে এমন বহু আইন প্রনয়ণ করা হলেও আজ এই পৃথিবী সঙ্কটের মুখে রয়েছে!
গ্রীন হাউজইফেক্টেরকারণে কারণে ক্ষয় হচ্ছে স্তর।ওজন ধ্বংসকারী রাসায়নিক ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বন, হ্যালন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, মিথাইল ব্রোমাইড ইত্যাদির উৎপাদন ও ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধির কারণে ওজন স্তর নষ্ট হচ্ছে। যদিও সেগুলি প্রাকৃতিক ভাবেও তৈরি হয়। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্টি ধ্বংসগুলি অপরিবর্তনশীল ভাবে থেকেই যায়। ফলে মানুষের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে কর্নিয়া নষ্ট, চোখে ছানি পড়া, ত্বকের ক্যানসার (ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা), ফুসফুসের ক্যান্সার সহ বেশ কিছু রোগের সুত্রপাত ঘটছে!
ধরিত্রী দিবসের ইতিহাসঃ
১৯৬২ সালে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী র্যাচেল লুইজ কার্সনের লেখা ‘Silent Spring’ বইয়ে তিনি পরিবেশের উপরে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। ‘Silent Spring’ নামক বইটি আমেরিকার জনগণের মধ্যে তুমুল গণ-আলোড়ন সৃষ্টি করে । জন্ম নেয় আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের। বইটি প্রকাশের পরে আমেরিকায় বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক কীটনাশক যেমন, ডিডিটি ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ ভাবেই শুরু হয় গণজাগরণের পটভূমি। সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছিল, পরিবেশ বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তা।
রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে দূরে সরে পরিবেশ আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন। ১৯৬৯ সালে তিনিই প্রথম ধরিত্রী দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেন। তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিলো জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দেখানো যে, পরিবেশ আন্দোলনের প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তবে তিনি কোন সংস্থার মাধ্যমে দিবসটি আয়োজন করতে চাননি।
তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েকজন শিক্ষার্থীর সহায়তায় ১৯৭০ সালের ২২এপ্রিল সর্বপ্রথম ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। তার এই আয়োজনে প্রায় প্রায় ২কোটি ২০লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলো।
এই নেলসন পরবর্তীকালে তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম পুরস্কারে ভূষিত হন।
১৯৯০সালে জাতিসংঘের বার্ষিক পঞ্জিকায় দিবসটি স্থান পায়। এবং ১৯৯০ সালে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস আন্তর্জাতিকভাবে ১৪১টি জাতির মাধ্যমে আয়োজন করা হয়েছিল। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে বসন্তকালে আর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে শরতে দিবসটি পালিত হয়। বিশ্ব ধরিত্রী দিবস বর্তমানে আর্থ ডে নেটওয়ার্ক কর্তৃক বিশ্বব্যাপী সমন্বিতভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৩টিরও বেশি দেশে প্রতি বছর পালন করা হয়ে থাকে।
২২এপ্রিল কেন বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালন করা হয়ঃ
ছোট-বড় লাখো গ্রহের ভিতর পৃথিবী এমন একটি গ্রহ যেখানে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রকৃতিপূর্ন এই পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের বজায় রাখা অত্যান্ত জরুরী। আর তাইতো এই পৃথিবীর গুরুত্ব সম্পর্কে সৃষ্টির সেরা জীব মানবজাতিকে সচেতন করতে ২২এপ্রিলকে ধরিত্রী দিবস হিসেবে নির্ধারন করা হয়েছে।
১. দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বসবাস ও কৃষি জমির জন্য ব্যপকহারে গাছপালা কাটা হচ্ছে। যেকারণে বনের পশুপাখি হারিয়ে যাচ্ছে এবং বাতাসে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব দেখা দিচ্ছে।
২. পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করায় ভূমি-ধ্বসসহ বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
৩. শিল্প কারখানার বর্জ্য খাল নদীর পাশাপাশি সমুদ্রের পানির গুনাগুন নষ্ট করছে।
৪. গ্রীন হাউজ ইফেক্টের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্বি পাচ্ছে এবং মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মেরু অঞ্চলসহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে প্রভাব পড়ছে।
একনজরে বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ
- ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Protect Our Species”
- ২০১৮ সালের প্রতিপাদ্য বিষয়- “End of Plastic Pollution”
- ২০১৭ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Environmental and climate literacy”
- ২০১৬ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Tress of the Earth”
- ২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Water wonderful Earth” and “Clean Earth – Green Earth”
- ২০১৪ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Green cities”
- ২০১৩ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “The face of Climate change “
- ২০১২ সালের প্রতিপাদ্য বিষয়- “Mobilize the Earth”
- ২০১১ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Clear the Air”
- ২০১০ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Reduce”
- ২০০৯ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “How Do you get ground”
- ২০০৮ সালের প্রতিপাদ্য বিষয়- “Tress please”
- ২০০৭ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় – “Be kind of the Earth – Starting from Saving resource”
ধরিত্রীকে যত্ন নিতে আমাদের করনীয়ঃ
১. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিবেশ সুন্দর রাখতে সকল মানুষকে সচেতন করে তোলা।
২. বৃক্ষ রোপনের পাশাপাশি বনসৃজননের দিকে নজর দেয়া।
৩. দুরবর্তী স্থানে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে পাবলিক গাড়ি ব্যবহার করা।
৪. জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করতে সবাইকে নজর দিতে হবে।
৫. জীবাশ্মজ্বালানি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে।
সর্বোপরি পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন গবেষণামুলক কাজে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
তবে অকল্পনীয় হলেও বাস্তব এটাই এমন সময় দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বই থমকে আছে। ক্ষুদ্র একটি অণুজীব-এর কাছে অসহায় সারা বিশ্বের মানুষ। আর তাইতো আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস হলেও প্রকৃতপক্ষে ভালো নেই গোটা এ ধরিত্রী।
গুগল এর বিশেষ ডুডল
‘আর্থ ডে’ বা বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ক্লাইমেট একশন’। দিবসটি উপলক্ষে সার্চ জায়ান্ট গুগল তাদের হোমপেজে একটি বিশেষ ডুডল প্রকাশ করেছে।
গুগলের হোম পেজে প্রবেশ করলে দেখা যাচ্ছে, গুগল তাদের নিজস্ব লোগোর পরিবর্তে বিশেষ একটি অ্যানিমেটেড ডুডল ব্যবহার করছে। গুগলের হোমপেজে বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের শুভেচ্ছা হিসেবে ব্যবহাকারীগন এই অ্যানিমেটেড ডুডল দেখতে পাচ্ছেন।

দুর্দান্ত অ্যানিমেটেড ডুডলটিতে ক্লিক করলে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ রঙের ফুল। এরপর একটি মৌমাছি ফুলের মধু পান করছে। এবং মধু পানে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসছে। এতে ফুলের পরাগায়ন হচ্ছে। পরাগায়নের সাথে অনেকগুলো ফুল ফুটছে। কীটপতঙ্গ কীভাবে আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা করে ধরিত্রীকে বাঁচিয়ে রাখছে সেটাই ফুটিয়ে তুলতে গুগল চমকপ্রদ এই অ্যানিমেটেড ডুডল বানিয়েছে।
ডুডল টিম জানিয়েছে, “আমরা আশা করি মানুষ পৃথিবী এবং মানবতার জন্য মৌমাছির গুরুত্ব বোঝে। যারা তাদের জন্য পদক্ষেপ নিতে চায়, পরাগ উদ্ভিদ বাড়িয়ে যে কেউ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
পরিবেশ রক্ষার্থে ২২এপ্রিল সারা বিশ্বে প্রতি বছর বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালিত হয়।
আজকরে গুগলের ডুডলের শিল্পকর্মটির নেতৃত্বে ছিলেন ডুডলার গারবেন স্টেনস, অন্যদিকে জ্যাকব হাওক্রফট এবং স্টেফানি গু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিক থেকে দায়িত্বে ছিলেন।
উল্লেখ্য, গুগলের ডুডল হলো, গুগল কতৃক ডিজাইনকৃত কোন বিশেষ দিন, ঘটনা কোন বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী স্বরন করতে গুগলের হোমপেজে তাদের লোগোর পরিবর্তে ব্যবহৃত বিশেষ লোগো। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে আইজাক নিউটনের সম্মানার্থে প্রথম অ্যানিমেটেড ডুডল প্রকাশ করেছিলো।
এবং ১৯৯৮ সালের ৩০আগষ্ট গুগল তাদের হোমপেজে প্রথম ডুডল প্রকাশ করেছিল। ১৯৯৮সাল থেকে ২০১৪সাল পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি ডুডল প্রকাশ করেছে গুগল।
গুগল এ পর্যন্ত অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মরণে ডুডল প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো অ্যান্ডি ওয়ারহোল, আলবার্ট আইনস্টাইন, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লুইস ব্রেইল, ইলা ফিরসগেরাল্ড, পার্সিভাল লুয়েল, এডভার্ড মান্চ, নিকোলা টেসলা,নরম্যান হেরিংটন, জন লেনন, মাইকেল জ্যাকসন, সত্যজিৎ রায়সহ আরও অনেক।
এছাড়াও গুগল বাংলাদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক ও অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মরণেও ডুডল প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলোঃ হুমায়ুন আহমেদ, বেগম রোকেয়া, শামসুর রহমান, লাকী আখন্দ, সুফিয়া কামাল, তারেক মাসুদ প্রমুখ।
এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি এবং বাংলা নববর্ষের দিগুলোতেও গুগল ডুডল প্রকাশ করে থাকে।