দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই বেড়েছে অক্সিজেন ও আইসিউর চাহিদা। তবে বিদ্যুতের সমস্যা ও বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অনেক সময় রোগীর জন্য হাইফ্লো অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে স্বল্পমূল্যে করোনা রোগীদের হাইফ্লো অক্সিজেন নিশ্চিত করতে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল গবেষক ‘অক্সিজেট’ নামের সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন। এতে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তওফিক হাসান এবং এ প্রকল্পে কাজ করেছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী মীমনুর রশিদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, কাওসার আহমেদ। পরে বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁদের সহযোগিতা করেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ তারিক আরাফাত, সহকারী অধ্যাপক জাহিদ ফেরদৌস ও সাঈদুর রহমান।

টেস্টিং এবং কম্পিউটার সিমুলেনের মাধ্যমে অক্সিজেট নামের ডিভাইসটির ডিজাইন করা হয়েছে এবং ইনহাউজ থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করা হয়েছে। অক্সিজেট ডিভাইসটি দিয়ে হাসপাতালের সাধারণ বেডেই ৬০ লিটার পর্যন্ত হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া যাবে। এই ডিভাইসটি কোনো বিদ্যুৎশক্তি ছাড়াই অক্সিজেন সিলিন্ডার বা হাসপাতালে অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বুয়েটের অক্সিজেট ডিভাইসটির খরচ পড়বে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা যেখানে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলা এর জন্য চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে হয় রোগীকে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এছাড়া এই ডিভাইসটি ব্যবহার কৌশল সহজ এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন স্থানে সহজে বহনযোগ্য।
ইতোমধ্যে ডিভাইসটি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফলভাবে পেরিয়ে তৃতীয় ধাপের অনুমতি লাভ করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে যন্ত্রটির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৪০ জন রোগীর অর্ধেক অংশকে বুয়েটের অক্সিজেট সিপ্যাপ ডিভাইস এবং বাকি অর্ধেক অংশকে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সাফল্যের পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যন্ত্রটি হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
অক্সিজেট ডিভাইসটি সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) শীর্ষক প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় তৈরি হয়েছে।

করোনা আক্রান্তদের শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে এবং উচ্চগতির ভেনটিলেশনের জন্য ‘অক্সিজেট’ নামক স্বল্প মূল্যের সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইসের উৎপাদনে অনুমতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বরাবর আবেদন করতে এবং ওই আবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল ও হাইকোর্টকেও দিতে বলা হয়েছে।
বুয়েট উদ্ভাবিত অক্সিজেট ডিভাইসটি কোনও কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের না হওয়ায় এর উৎপাদন করার অনুমতি দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ৫ জুলাই, সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনীক আর হক আদালতের নজরে আনলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অন্যদিকে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো ওষুধ প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে অক্সিজেট বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক “অক্সিজেট” নামের মেডিকেল ডিভাইসটির পারফরমেন্স ট্রায়াল অনুমোদনের জন্যে অদ্যাবধি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে কোনো আবেদন দাখিল করা হয়নি।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১২ জুন বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে তাদের উদ্ভাবিত “অক্সিজেট” নামীয় মেডিকেল ডিভাইসটির বিষয়ে মৌখিকভাবে অবহিত করেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তার সঙ্গে ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্যে দেশের মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই, এএনসি, গেট ওয়েল, ইনসেপ্টা মেডিকেল ডিভাইসের শীর্ষ পর্যায়ের টেকনিক্যাল কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের সম্ভাব্য পথ সুগম করে দেওয়া হয় এবং তাকে ক্লিনিক্যাল পারফরমেন্স ট্রায়াল প্রটোকল অনুমোদন গ্রহণের নিমিত্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করার জন্যে পরামর্শ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তার আবেদন পাওয়া যায়নি।’

কীভাবে এই ডিভাইস কাজ করবে, কবে থেকে এটি হাসপাতালগুলোতে পাওয়া যাবে তা জানতে দেখুন এই ভিডিওটি।
আরো পড়ুন,
ডেল্টা প্রতিরোধে ফাইজারের টিকা কম কার্যকর: গবেষণা
অক্সিজেন সংকটে আশার নাম ‘খুবি অক্সিজেন ব্যাংক’
মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাই করে কিনতে হবে