ভেন্টিলেটরের স্বল্পতা মেটাতে সাশ্রয়ী মূল্যের ভেন্টিলেটর তৈরি করলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সানি জুবায়ের। মাত্র সাত হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করা সম্ভব ভেন্টিলেটরটি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এই ভেন্টিলেটরটি আরও উন্নত করা যাবে। সরকারের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে খরচ আরও কমানো সম্ভব বলে মনে করেন সানি জুবায়ের।
দেশের হাসপাতালগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী ভেন্টিলেটশনের ব্যবস্থা নেই। এই খবর বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়তই জানতে পারছি। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই ভেন্টিলেটরগুলোর যোগান দেয়ার ব্যাপার নিয়ে কথা বলেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দেশের হাসপাতলগুলোতে যথেষ্ট সংখ্যায় ভেন্টিলেটর রয়েছে, সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু ভেন্টিলেটর আনা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ভবিষ্যৎ অবস্হা ভয়াবহ হতে পারে। সেই অবস্হা মোকাবেলার জন্য আরও অনেক বেশি ভেন্টিলেটর প্রয়োজন।

ভেন্টিলেটর কী?
এটি একটি মেডিকেল যন্ত্র, যার মাধ্যমে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে গেলে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। ফুসফুস অক্সিজেন প্রবেশ ও বের করতে ব্যর্থ হলে ভেন্টিলেটরের মাধ্যম কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। ভেন্টিলেটর বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং তা ফুসফুসের ভিতরে টিউব বা নল দিয়ে প্রবেশ করায়। যন্ত্রটিতে হিউমিডিফাইয়ারও থাকে। এটি বাতাসে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা যুক্ত করে। রোগীকে শ্বাসযন্ত্রের যাতে পেশীগুলো উদ্দিপিত না হয় সেজন্য ঔষধ দেওয়া হয়। রোগীর শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে বাতাসের সমন্বয় ঘটানো হয় ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে।
এটি কিভাবে কাজ করে?
ভেন্টিলেটর দু’ভাবে কাজ করে। মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন এবং নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন। মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে পাইপের মধ্যে টিউব যুক্ত করা থাকে। পাইপটি রোগীর মুখে বা গলার কোনো অংশ দিয়ে প্রবেশ করানো হয় এবং এর মাধ্যমে বাতাস রোগীর দেহে যেন প্রবেশ ও বের করার ব্যবস্থা করা হয়। নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রোগীর মুখে অথবা নাকে একটি মাস্ক সংযুক্ত করে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।

সানি জুবায়ের নিজের তৈরি এই ভেন্টিলেটর সম্পর্কে বলেন,”তার তৈরি ভেন্টিলেটর বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে। শুধু যে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ তেমন না। বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য যেটা প্রয়োজন তা হলো ভেন্টিলেটরের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়া এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করা। আর এই কাজটা করা হয় মেকানিক্যালভাবে। আমার তৈরি ভেন্টিলেটর এই কাজটা পুরোপুরি করতে সক্ষম।’
জুুবায়ের এ সম্পর্কে আরও জানান “ভেন্টিলেটরের নলটা যখন শ্বাসযন্ত্রে ঢোকানো হবে তখন নির্দিষ্ট সময়ে বাতাসের প্রেসার, শ্বাস-প্রশ্বাসের রেট সিলেক্ট করে দেয়া যাবে। তবে বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমি যদি রেস্পিরেটরি রেট ২৪ করে দেই তাহলে প্রতি মিনিটে ফুসফুস ২৪ বার খুলবে ও বন্ধ হয়ে অক্সিজেন সাপ্লাই করবে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করবে।” জুবায়ের সানি এভাবে এটি তৈরি করেছি যেটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে সক্ষম। তবে এটার কাজ হবে শুধুমাত্র শ্বাসক্রিয়াকে যান্ত্রিকভাবে চালনা করা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকের বেশিই জ্বর, মাথাব্যথা, কফ এমন সাধারণ উপসর্গে ভোগেন। তাদের জন্য ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন নেই। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন কঠিন রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সেরে ওঠেন। এক গবেষণায় জানা গেছে, চীনে ১০৯৯ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে মাত্র ৪১.৩ শতাংশ রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। সেই সব রোগী হাসপাতালে গড়ে ১২ দিন ছিলেন। অর্থাৎ সকল রোগীর জন্যই যে ভেন্টিলেটর লাগবে বা জটিল কোনো চিকিৎসার ব্যবস্হা করতে হবে, এমনটা নয়।