এতোদিন তো সবাই প্রাইমারি স্কুল, মাধ্যমিক স্কুলের নাম শুনে এসেছেন। আজ আপনাদের বলবো,”মনের স্কুলে”র কথা।
“মনের স্কুল”। শুনতে একটু অদ্ভুত লাগছে, তাই না?
ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে শিখানোর জন্য, সচেতন করার জন্য যেমন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয় তেমনি মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে, সঠিক সময়ে সঠিক পথ দেখানোর উদ্দেশ্যেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন কিছু শিক্ষার্থী মিলে গড়ে তুলেছেন এই “মনের স্কুল” নামক সংগঠনটি।
তারা হলেন- রাগিব শাহরিয়ার, আরিফ ইসলাম, ফাইরোজ ফাইজা ব্রিথার, মাহবুবুর রহমান রাফি, মুহিবুল্লাহ মুহিব।
স্টুডেন্টসদের মধ্যে থেকে বুলিং, ডিপ্রেশন, সুইসাইডের মতো সব ট্যাবু দূর করার জন্য এই পাঁচ জন কো-ফাউন্ডার মিলে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ের দিকে তাদের এই কার্যক্রম টি শুরু করেন।
এবার বলবো “মনের স্কুলের” কাজ সম্পর্কে।
জীবনে চলার পথে আমরা অনেক ধরণের ঘটনার শিকার হই, যার প্রভাব আমাদের শরীর এবং মন দুটোর ওপর ই পড়ে। শরীরের আঘাত, সে তো দেখা যায়, সেরেও তোলা যায় বা এটা সারানোর জন্য আছে সাহায্য ও আছে ডাক্তার।
কিন্তু মন! একবার ভাবুন তো, আপনার জীবনে এমন কয়জন মানুষ আছে, যার সামনে আপনি মন খুলে সব বলতে পারেন? বা অসহ্য রকম কষ্টগুলো, হতাশা, শুণ্যতার অনুভূতি গুলো কয়জনের সাথে আপনি শেয়ার করতে পারেন? যদি আপনার উত্তর না হয়, তবে আপনার জন্য ই “মনের স্কুল“।
“মনের স্কুল” এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা আপনাদের ভালো থাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
আপনার মনের সেই কোণার কথাগুলো তারা শুনবে, যা আপনি অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে চান না বা ভয় পান। আপনি হবেন বক্তা, তারা হবে শ্রোতা। আপনার সমস্যাগুলো শোনার জন্য তারা কান পেতে থাকে।
ভাবতেই পারেন এতে তাদের লাভ কি! লাভ এতোটুকুই ‘আপনার ভালো থাকা’।
কারণ, “প্রতিটি জীবন মূল্যবান, প্রতিটি গল্প ও মূল্যবান।” আর এই মহৎ মানবিকতা বোধ থেকেই সংগঠনটির উৎপত্তি।

“মনের স্কুল” এর ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপের ঠিকানা নিচে দেয়া হলো।
আপনি চাইলে নিজের পরিচয় গোপন করে নিজের সমস্যাটি তাদের বলতে পারেন, বলতে পারেন আপনার গল্পগুলি। “মনের স্কুলের” ফেসবুক পেজে ম্যাসেজ করে যে কেউ হেল্প নিতে পারেন। এখানে রয়েছে “বিডিলিসেনার” নামে ঢাকার একদল অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্ট টিম। এছাড়া বিভিন্ন ভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট ও মেডিকেলের স্টুডেন্টও তাদের সাথে কাজ করছে।
আর এই এক্সপার্টদের সহযোগিতায় আপনিও সহজেই সমাধান করে ফেলতে পারেন আপনার সমস্যাগুলোর।
মূলত আপনার পাশে থেকে আপনার সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাওয়াই “মনের স্কুলের” লক্ষ্য।
“মনের স্কুলের” ফেসবুক গ্রুপটি ঘুুুুরে দেখলে বিষয়টি আপনি আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
এ সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে সংগঠনটির কো-ফাউন্ডার আরিফ ইসলাম শ্যাডো নিউজ’কে বলেন, ‘গত বছরে আমরা ৬ টি ওয়ার্কশপ করেছি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট মিলে প্রায় ৩০+ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে একসাথে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাই একটু সময় লাগবে।’
খুলনা ইউনিভার্সিটির, লিয়াকত আলী হলে অনুষ্ঠিত ইভেন্ট
তথ্যসূত্রে আরো জানা যায়, এ পর্যন্ত অনলাইন ও অফ্লাইনে ২০০+ স্টুডেন্ট কে মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ১০০০০+ স্টুডেন্ট কে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে অনলাইন, অফলাইনে। বাংলাদেশে এরকম একটি উদ্যোগ, খুবই সময়োপযোগী আমদের তরুণ-সমাজের মনকে সুস্থ রাখতে, “মনের স্কুল” বড় ভূমিকা রাখবে প্রত্যাশা করা যায়।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কে শ্যাডো নিউজকে আরো বলেন, ‘আপাতত স্টুডেন্টসদের নিয়ে কাজ চালু থাকলেও মূলত বাংলাদেশের সকল মানুষ কে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা, বুলিং, রেসিজম,ডিপ্রেশন এই ট্যাবু গুলো দূর করাই আমাদের লক্ষ্য।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, ‘আগামী চার মাস খুলনার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ৪-৫ টা ক্যাম্পেইন করা হবে মেন্টাল হেলথ ও ডিপ্রেশন নিয়ে। এর পর মেন্টাল হেলথ বিষয়ে জুন মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় একটা ইভেন্ট করারও পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
“মুক্তিপাক বন্দি কথাগুলো”
এ স্লোগান নিয়ে এভাবেই এটা বিগত দেড় বছর ধরে মেন্টাল হেলথ ও সুইসাইড প্রিভেনশন নিয়ে কাজ করছে।
এক কথায়, “মনের স্কুল” হলো সেই আশ্রয় যেখানে আপনি সমস্যার সমাধান না পেলেও অন্তত সমস্যার সাথে লড়াই করার শক্তিটুকু পাবেন।